উত্তাল নদীপথঃ ঝুঁকিপূর্ন ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ

ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরাও অসচেতন অবস্থায় এবং বাধ্য হয়েই শিশু সন্তানসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুরোনো লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করে আবার কোনো কোনো স্পিডবোটে লাইফ জ্যাকেট না পড়েই পদ্মা পাড়ি দিয়েছে। এরমধ্যে শিশু সন্তান নিয়েও লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পদ্মা পাড়ি দিতে দেখা গেছে।

উত্তাল নদীপথঃ ঝুঁকিপূর্ন  ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ
ছবি-ক্রাইম ডায়রি
লাইফ জ্যাকেট ব্যবহারে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের অসচেতনার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তদারকির দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ, নৌপুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। 
শাহাদাত হোসেন রিটনঃ

জীবনের ঝুঁকি হলেও ঘরে পৌঁছাতে বেপরোয়া মানুষ। যে কোন মুল্যে বাড়ি তাদের পৌঁছতেই হবে।শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শিমুলিয়া-মাঝিরকান্দি নৌরুটে ফেরি স্বল্পতার কারণে  ঘরমুখো যাত্রীদের ঢল নেমেছিল শিমুলিয়ার লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে। আজ শনিবার ভোর থেকেই লঞ্চ ও স্পিডবোটে দ্রুত সময়ে পদ্মা পাড়ি দিয়েছে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। 

শনিবার সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার শত শত যাত্রী শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে পদ্মা পার হয়ে ছুটে যাচ্ছে গ্রামের বাড়ীতে। উত্তাল পদ্মায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্পিডবোটে চড়ে পদ্মা পাড়ি দিয়েছে হাজার হাজার যাত্রী। এ সুযোগে লোক দেখানো অপর্যাপ্ত কিছু পুরোনো লাইফ জ্যাকেট রেখে যাত্রী পারাপার করতে দেখা গেছে স্পিডবোট মালিক, শ্রমিক ও ইজারাদারের লোকজনদের। 

ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরাও অসচেতন অবস্থায় এবং বাধ্য হয়েই শিশু সন্তানসহ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পুরোনো লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করে আবার কোনো কোনো স্পিডবোটে লাইফ জ্যাকেট না পড়েই পদ্মা পাড়ি দিয়েছে। এরমধ্যে শিশু সন্তান নিয়েও লাইফ জ্যাকেট ছাড়া পদ্মা পাড়ি দিতে দেখা গেছে। আর লাইফ জ্যাকেট ব্যবহারে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের অসচেতনার সঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে তদারকির দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ, নৌপুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাত্রীদের রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম নৌরুট শিমুলিয়া-বাংলাবাজার। এ নৌরুট হয়ে ঈদ মৌসুমে দৈনিক লক্ষাধিক মানুষ পারাপার হয়। ঈদের আগে ঘরে ফিরতে মানুষের ঢল নামে এই দুই ঘাটে। অধিক যাত্রীর চাপে এ সময় শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যায়। ধারণক্ষমতার অধিক যাত্রী পারাপার করা হয়। স্পিডবোট ও লঞ্চে শুরু হয় বাড়তি ভাড়ার উৎসব।

সব মিলিয়ে দুর্ভোগের ঈদযাত্রায় পরিণত হয় এই নৌরুট। তাই যাত্রী চাপ মোকাবিলায় ঈদের সময় ফেরির পাশাপাশি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-মাঝিরকান্দি নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ এবং ১৫০টি স্পিডবোট দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। তবে মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিটি স্পিডবোটে ১২ জন করে যাত্রী বহন করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ স্পিডবোটেই ১৪ থেকে ১৫ জন যাত্রী বহন করে শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়ে যেতে দেখা গেছে। জনপ্রতি ১৫০ টাকা ভাড়ায় ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের পদ্মা পারাপার করা হয়েছে। যাত্রী পারাপারে স্পিডবোটে লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক করা হলেও প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করেই স্পিডবোটগুলো নৌরুটে চলাচল করেছে দিনভর।

জানতে চাইলে স্পিডবোট ঘাটের ইজারাদার মো. সালাউদ্দিন আহম্মেদ সমকালকে জানান, প্রশাসনের নির্দেশনা মেনেই স্পিডবোটে ১২ জন করে ১৫০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় নৌরুটে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে। লাইফ জ্যাকেটগুলো প্রতিদিন ব্যবহার হওয়ায় দেখতে পুরোনো মনে হয়।

অন্যদিকে, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-মাঝিরকান্দি নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ চলাচল করছে। প্রতিটি লঞ্চের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী যাত্রী পারাপার করার কথা থাকলেও বেশির ভাগ লঞ্চেই অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাংলাবাজার ও মাঝিরকান্দি ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। টার্মিনালে যাত্রী আসা মাত্রই লঞ্চ শ্রমিকরা হাত টেনে ধরে নিজ নিজ লঞ্চে ওঠানোর প্রতিযোগিতায় মেতে ছিল শনিবার দিনভর। 

লঞ্চ যাত্রীরা জানিয়েছেন, কোনো কোনো লঞ্চে জীবনরক্ষাকারী বয়া থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চেই তা পর্যাপ্ত নেই। তাছাড়া লাইফ জ্যাকেটও দেখা যায়নি কোনো কোনো লঞ্চে। প্রতিটি ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী পারাপার করার প্রবণতা সকলের দৃষ্টি কেড়েছে। 

সরেজমিন লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, নৌরুটে চলাচলরত এম ভি রিয়াদ এক্সপ্রেসের ধারণ ক্ষমতা ২৪৩ জন। কিন্তু শিমুলিয়া ঘাট থেকে ২৫০ জনের বেশী যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে রওনা হয়ে গেছে। এমভি হাওলাদার এক্সপ্রেসের ধারণক্ষমতা ১৪২ জন যাত্রীর। সেখানে ১৬০ থেকে ১৬৫ যাত্রী নিয়ে ঘাট ছেড়ে গেছে। এম এল ফারজানা অ্যান্ড সানজিদার ধারণক্ষমতা ১৪০ যাত্রীর। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া ঘাট ছেড়ে যায় লঞ্চটি। 

এম এল সিকদার নামের লঞ্চটির ধারণক্ষমতা ১১২ জন যাত্রীর। শনিবার দুপুর ২টার দিকে প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে বাংলাবাজার ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যায় লঞ্চটি। অতিরিক্ত যাত্রী বহন করার বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ’র মাওয়া নদী বন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেনকে জানালে তিনি সমকালকে বলেন, সার্বক্ষণিক তদারকি করা হলেও যাত্রী চাপ বৃদ্ধি পেলেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। 

প্রশাসন সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম নৌরুট শিমুলিয়া-বাংলাবাজার-মাঝিরকান্দি নৌরুট। গত বছরের ৩ মে এই নৌরুটে ভয়াবহ স্পিডবোটে দুর্ঘটনার পর সব স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখে প্রশাসন। অবৈধ নৌযানের নিবন্ধন, সার্ভে সনদ প্রাপ্তি, চালকদের পরীক্ষার মাধ্যমে সনদ গ্রহণ, মাদকাসক্ত চালকদের চাকরিচুত্যসহ নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর গত ৫ অক্টোবর থেকে নৌরুটে চলাচলের অনুমতি পায় স্পিডবোট। বাংলাবাজার, মাঝিকান্দি ও শিমুলিয়া ঘাটে ১৫০টি স্পিডবোট চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। 

স্পিডবোট ঘাট মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, বর্তমানে নৌরুটে নিবন্ধিত বোটগুলোই চলছে। সরকারি নিয়ম মেনেই স্পিডবোট চলাচল করছে। চালকও সনদপ্রাপ্ত।

লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল আউয়াল জানান, নৌরুটে স্পিডবোট চলাচলের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনা শতভাগ মানতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ধ্যার পরে কোনো স্পিডবোট নৌরুটে চলতে পারবে না।যদি চলার চেষ্টা করে তবে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে বলে তিনি জানান।

ক্রাইম ডায়রি// জেলা