সমবায় ও মাল্টিপারপাসঃ ব্যাংক নয় তবুও চলছে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম

Cooperatives and Multipurpose: Illegal banking activities are going on even though it is not a bank

সমবায় ও মাল্টিপারপাসঃ ব্যাংক নয় তবুও চলছে অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম

আরিফূল ইসলাম কাইয়্যুমঃ

ব্যাংক নয় আবার  নেই ব্যাংকিং লাইসেন্সও। তারপরও তারা ব্যাংক। সংগ্রহ করছে আমানত এবং তা উচ্চ সুদের বিনিময়ে। অবৈধভাবে  ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা চালিয়েই যাচ্ছে এক ধরনের সমবায় সমিতি ও মাল্টি পারপাস।

অথচ সমবায় সমিতির আইনেই ব্যাংক শব্দ বা ব্যাংকিং কার্যক্রমে রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। ২০১৩ সালে আইন সংশোধন করে ৯ (৩) ধারায় এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও শাস্তির বিধান যোগ করা হয়। তারপরও কেটে গেছে সাত বছর। কিন্তু অগ্রগতি তেমন কিছু হয়নি বললেই চলে। নিত্য নতুন নামে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা চলছেই,ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সরকার এবং কোন কোন সময় দেউলিয়া হচ্ছে ব্যাংক।

সমিতির নামে ব্যাংকিং করে আইন ভঙ্গ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না এসব প্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় উচ্চ আদালতে রিট করে অহেতুক সময় ক্ষেপণ করছে। ২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে তৎকালীন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে অবৈধ ব্যাংকিং করছে এমন ৬টি সমবায় সমিতিকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে জানিয়েছিলেন।

যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ সোসাইটি (ব্যাংক) লি., ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি., আদর্শ সমবায় ব্যাংক লি., স্মল ট্রেডার্স কো-অপারেটিভ (ব্যাংক) সোসাইটি লি., মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংক লি. ও আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লি. (সাবেক এসিসিএফ ব্যাংক লি.)।

মানিল্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধ ও দমন কার্যক্রম জোরদারকরণ শীর্ষক কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের ওই বৈঠকে যেসব কো-অপারেটিভ কিংবা মাল্টিপারপাস অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার বা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের বিষয়ে রিপোর্ট প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে তালিকায় যোগ হয় দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ লিমিটেড ও এসটিসি ব্যাংক লিমিটেডসহ আরো কিছু সমবায় সমিতি। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ  ক্রাইম ডায়রিকে বলেন, নন-ব্যাংকিং আইনে স্পষ্ট বলা আছে কোনো সমিতিই ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার কিংবা  ব্যাংকিং কার্যক্রম করবে না। ওই আইনেই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থা নিতে পারে। এমনকি সমবায় সমিতি আইনেও এ বিষয়ে স্পষ্ট বিবরণ দেওয়া আছে। তারপরও প্রতারণা চলছে। সমিতিগুলো ব্যাংকের চেয়ে ডাবল সুদের প্রলোভন দেখিয়ে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গ্রাহকরাও যাচাই না করে অর্থ লগ্নি করছেন। আসলে আইনের বাস্তবায়ন হয় না বলেই এমন অরাজকতা।

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের বৈঠক থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি এ বিষয়ে রিপোর্ট প্রস্তুত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা মন্ত্রণালয় বরাবর প্রেরণ করতে বলা হয়। সর্বশেষ গত ২৭ নভেম্বর সর্বশেষ টাস্কফোর্স সভায় এ বিষয়ে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে একটি সূত্র ক্রাইম ডায়রিকে নিশ্চিত করেছে।

মানিল্ডারিং ও সন্ত্রাস অর্থায়ন প্রতিরোধ ও দমন কার্যক্রম জোরদারকরণ শীর্ষক কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্সের ওই বৈঠকে যেসব কো-অপারেটিভ কিংবা মাল্টিপারপাস অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার বা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাদের বিষয়ে রিপোর্ট প্রদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও বিএফআইইউ এর অপারেশনাল হেড জানান, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ব্যাংক লিমিটেডের ওপর একটি বিশদ প্রতিবেদন প্রস্তুত করে সিআইডি বরাবর প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া দি ঢাকা মার্কন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেডের ওপর প্রতিবেদন প্রস্তুতের বিষয়টি চলমান রয়েছে।

এছাড়া যারা অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের কথা বলা হয়।  সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলো সমবায় অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সমবায় অধিদপ্তরকে অবৈধভাবে ব্যাংক শব্দ ব্যবহারকারী বা ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় টাস্কফোর্স এ বিষয়ে সচেতন রয়েছে এবং এ বিষয়ে কাজ করছে দুদকও বলে ক্রাইম ডায়রিকে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থনৈতিক গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা।

ক্রাইম ডায়রি//ক্রাইম