যমুনাতে পৃথক রেলসেতুর উদ্ধোধন করলেন বঙ্গকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

Bangakanya and Prime Minister Sheikh Hasina inaugurated a separate railway bridge at Jamuna

যমুনাতে পৃথক রেলসেতুর উদ্ধোধন করলেন বঙ্গকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

শরীফা আক্তার স্বর্নাঃ

তিনি সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নত করতে হবে। করোনাভাইরাস যেন আমাদের দেশের মানুষের ক্ষতি করতে না পারে, তার জন্য যা যা করণীয় আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বঙ্গকন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা আজকে সত্যি খুব আনন্দিত। কারণ এখানে একসময় সেতুতে রেল সেতুর বিষয়ে আমাকে অনেক অনেক তর্ক করতে হয়েছে, অনেক দেন-দরবার করতে হয়েছে। যাই হোক, আজকে একটা আলাদা সেতু হয়ে যাচ্ছে। যা আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক উন্নতি তো হবেই এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা সংযুক্ত হতে পারব। যা আমাদের দেশকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত করবে। তিনি  ২৯ নভেম্বর রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তির প্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ সব কথা বলেন। এর মাধ্যমে শুরু হলো দেশের সবচেয়ে বড় ডুয়েলগেজ ডাবল-ট্র্যাকের রেল সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞ প্রক্রিয়া। যমুনা নদীর ওপর রেল সেতুটি নির্মাণ হলে আভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখাসহ ট্রান্স এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

প্রধানমন্ত্রী সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধন ঘোষণা করেন। গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও জাইকার রিপ্রেজেনটেটিভ ইয়োহো হায়াকাওয়া। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা স্বাগত বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধন ঘোষণা শেষে দোয়া-মোনাজাত করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম প্রান্ত থেকে দোয়া মোনাজাত করান হাফেজ মাওলানা মুফতি মো. মিজানুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সৌভাগ্য জাপান আমাদের একটা সত্যি পরীক্ষিত বন্ধু। জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে জাপান গেলেন তখন যমুনা নদীর ওপর সেতুর কথা তিনি বললেন। আমি যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করলাম, জাপানে যখন গিয়েছি তখনও জাপানের প্রধানমন্ত্রী বললেন যে, বঙ্গবন্ধুকে তারা সেতু দিয়েছেন, আমি কোন সেতু চাই? আমি দুটো সেতুর কথা বলছিলাম পদ্মা এবং রূপসা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে জাপানের মিনিস্টার জিজ্ঞেস করলেন, আপনার এলাকা কোনটা? আমি বললাম যে, দুইটাই আমার এলাকা। বাগেরহাট-১ থেকে নির্বাচন করেছিলাম, ওখানেও সংসদ সদস্য ছিলাম আবার টুঙ্গিপাড়া তো আমার এলাকা। কাজেই আমাকে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়েও যেতে হয়, রূপসা সেতু পাড়ি দিয়েও যেতে হবে। কাজেই আমি দুটোই চাই এবং সত্যি তখন জাপানের প্রধানমন্ত্রী রাজি হলেন।’

​​​​​​​

সে প্রেক্ষাপট তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপান সরকার পদ্মা সেতুর সমীক্ষা করলেন। সমীক্ষা করবার পরে এখন সেতুটি যে জায়গায় হচ্ছে সে জায়গাটা ঠিক করল।আমরা ২০০১ সালে ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করলাম। দুর্ভাগ্য যে বিএনপি এসে সেটা বন্ধ করে দিল। খালেদা জিয়া বললো, ওখানে হবে না। ওখানে সেতু করা যাবে না। কেন বলেছিল সেটা আমি জানি না? কিন্তু তার জন্য পিছিয়ে গেল। যা হোক, আল্লাহর রহমতে পদ্মা সেতু আমরা এখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে, পদ্মা সেতু আমরা তৈরি করছি, সেটাও করা হচ্ছে।’

জাপান সরকার কিন্তু আমাদের সবসময় পাশে দাঁড়িয়েছে সেজন্য বিশেষ ভাবে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সবশেষে যখন জাপান সফর করি প্রাইম মিনিস্টার আবে ছিলেন তিনি তো আমাদের সার্বিক উন্নয়নে এক বারে দু হাত খুলেই তিনি সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। সেজন্য তাকে আমার ধন্যবাদ জানান এবং বর্তমানে যিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন তাকেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেলের যোগাযোগকে আরও শক্তিশালী করব। আমাদের আরও প্ল্যান আছে যে একেবারে ঢাকা থেকে আমরা বরিশাল পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত আমরা রেললাইন নিয়ে যাব। তারও সমীক্ষা আমরা শুরু করব। সে কাজও আমরা করব সে ব্যাপারেও আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থ্যাৎ সমগ্র বাংলাদেশে একটা রেল যোগাযোগের ব্যবস্থা আমরা আমাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য,  অল্প খরচে পণ্য পরিবহন এবং মানুষের যোগাযোগ বা যাতায়াত করা, অনেক সুবিধা হয়।’

নৌপথ, বিমান, রেল এবং সড়ক সবগিুলির সার্বিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। তার ফলে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।

করোনাভাইরাসের মাঝেও সেতু নির্মাণের জন্য ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করতে পেরেছি সেই জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি সকলের উদ্দেশে বলেন, ‘আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নত করতে হবে। করোনাভাইরাস যেন আমাদের দেশের মানুষের ক্ষতি করতে না পারে, তার জন্য যা যা করণীয় আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সত্যি আমি খুব আনন্দিত। কারণ এখানে একসময় সেতু করার ব্যাপার নিয়ে (বিশেষ করে রেল); আমাকে অনেক অনেক তর্ক করতে হয়েছে, অনেক দেন দরবার করতে হয়েছে। যাই হোক, আজকে একটা আলাদা সেতু হয়ে যাচ্ছে যেটা আমি মনে করি, আমাদের দেশের ভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক উন্নতি তো হবেই এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা আরও সংযুক্ত হতে পারব। যা আমাদের দেশকে ভবিষ্যতে আরও উন্নত করবে। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ।’

ক্রাইম ডায়রি//জাতীয়