অনুদানের টাকা কোথায় ব্যয় করে কওমীভিত্তিক মাদ্রাসাগুলো অনুসন্ধানে গোয়েন্দা অভিযান

দাঙ্গায় উসকানিদাতা ও অংশগ্রহণকারী হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতাদের গ্রেফতার অভিযান অব্যহত। কোন ভাল আলেমকে হয়রানি করা হবেনা বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

অনুদানের টাকা কোথায় ব্যয় করে কওমীভিত্তিক মাদ্রাসাগুলো অনুসন্ধানে গোয়েন্দা অভিযান

একটি দেশের সরকারের কাছে সকল জনগনই সমান।  আর সকল জনগনই দলমত নির্বিশেষে সরকারের অধীন। সুতরাং দেশ ও দশের স্বার্থে সেই সরকারের কঠোর বিরোধিতা করা দেশদ্রোহিতারই শামিল। হেফাজত ইসলামের সবচেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করেছিল আওয়ামিলীগ সরকার। আজ সেই সরকারের বিরুদ্ধে উৎখাতের ষড়যন্ত্র  চরম অকৃতজ্ঞারই বহিঃপ্রকাশ

অনুসন্ধানী প্রতিবেদকঃ

একটি দেশের সরকারের কাছে সকল জনগনই সমান।  আর সকল জনগনই দলমত নির্বিশেষে সরকারের অধীন। সুতরাং দেশ ও দশের স্বার্থে সেই সরকারের কঠোর বিরোধিতা করা দেশদ্রোহিতারই শামিল। হেফাজত ইসলামের সবচেয়ে বেশি সুবিধা প্রদান করেছিল আওয়ামিলীগ সরকার। আজ সেই সরকারের বিরুদ্ধে উৎখাতের ষড়যন্ত্র  চরম অকৃতজ্ঞারই বহিঃপ্রকাশ। 

যে কারনে ওসমানী উদ্যানের জনসভায় হেফাজত নেতারা আওয়ামিলীগ সরকারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছিল। এখন কোন উদ্দেশ্যে আবার সরকারের পতন কামনা করছে সেটা খতিয়ে দেখার বিষয়। অনুদানের টাকায় চলা এসব মাদ্রাসা হতে সাম্প্রতিক দাঙ্গা ও হাঙ্গামা এবং দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারনে অনুদানের অর্থ ব্যয়ের অনুসন্ধানে এসব মাদ্রাসাগুলোর খোঁজ খবর শুরু করেছে গোয়েন্দারা।

বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন কওমি মাদ্রাসার অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক গোয়েন্দা ইউনিট। ইতোমধ্যে, মহানগরীর মোহাম্মদপুর, লালবাগ, যাত্রাবাড়ী ও বারিধারায় বিভিন্ন মাদ্রাসার অনিয়ম-দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিযোগ - এসব মাদ্রাসার অধিকাংশের আয়-ব্যয়ের কোন সঠিক হিসাব নেই।

বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে থেকে আসা অনুদান কীভাবে খরচ করা হয় তার কোনো নথিও সংরক্ষণ করা হয় না অনেক মাদ্রাসায়। অর্থগুলি ঠিক কোন খাতে খরচ করা হয়  সে বিষয়ে মুলতঃ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এছাড়া হেফাজতের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোনো কোনো মাদ্রাসার বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির লাইন অবৈধ- এমন অভিযোগের বিষয়েও অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

কওমি মাদ্রাসাগুলো দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ার কারণে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। তবে সম্প্রতি দেশব্যাপী সহিংস কর্মকাণ্ডের কারণে হেফাজতকে কোনো ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

দেশ কাঁপানো সহিংসতার ঘটনায় সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক, দফতর সম্পাদক ইহতাশেমুল হক সাথী,সহকারী মহাসচিব মাওলানা খুরশিদ আলমসহ অন্তত ১৫ কেন্দ্রীয় নেতা গ্রেফতার হয়েছেন।।  হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা ১৬ মামলার তদন্তভার পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

হেফাজতের মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার হেফাজত নেতারা সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সহিংসতার ঘটনাগুলোর উসকানিদাতা হিসাবে নিজেদের দায় স্বীকার করেছেন। তারা জোশ হতে উগ্র কথা বলেছেন এমনটাই দাবী তাদের।

হেফাজতের অন্যতম শীর্ষ নেতা মামুনুল হককে মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশিদ  বলেন, সাধারণ মানুষকে উসকানি, সরকারকে বিদায় করা, মন্ত্রীদের কটূক্তি করার বিষয়গুলো নিয়ে আমরা তদন্ত করছি। এসব কাজে হেফাজতকে দেশে বা দেশের বাইরে থেকে কেউ পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে কিনা- সবকিছুই আমরা তদন্ত করে দেখছি।

আদালত একটি স্বতন্ত্র বোর্ড গঠন করার বিষয়ে নির্দেশনা দেন। বোর্ড গঠন করতে একজন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগও দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশনার পর আজিজুল হক মাদ্রাসার দায়িত্ব দেন তার ছেলে মামুনুল হককে। তিনি প্রভাব খাটিয়ে সেই বোর্ড আর গঠন করতে দেননি।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, দেশের বাইরে থেকে কওমি মাদ্রাসাগুলোর জন্য অনেক অনুদান আসে। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে এসব মাদ্রাসায় অনুদান আসে। এতিম বাচ্চাদের প্রতিপালন,মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য এসব অর্থ প্রদান করে ধর্মপ্রাণ প্রবাসী ও মুসলিম বিশ্ব।

এসব অনুদান কীভাবে খরচ করে, কোন খাতে খরচ করে- এ নিয়ে গোয়েন্দারা অনুসন্ধান করছেন। এসব অর্থ হেফাজতের সাংগঠনিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সেসব বিষয়ে প্রশ্ন উঠছে বলে জানা গেছে

ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, যেসব হেফাজত নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ১৫ থেকে ২০টি করে সহিংসতার মামলা রয়েছে। তাদের অন্যান্য মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে। এ কারণে তারা আবদার করছেন, কম সংখ্যক মামলায় যেন তাদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার (ক্রাইম) শাহ আবিদ হোসেন সাংবাদিকদের  বলেন, কাউকে শ্যোন এরেস্ট দেখানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধান্ত নেন। তদন্ত কর্মকর্তা যদি মনে করেন, তবে সংশ্লিষ্ট মামলায় হেফাজত নেতাদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাবেন।

বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম বাকী বিল্লাহ এ আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন- হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খেলাফতে মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মুফতি শরাফত হোসাইন, হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমেনী, হেফাজত ইসলামের ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমদ ও হেফাজত নেতা মাওলানা সানাউল হক।

হেফাজতের ১৬ মামলার তদন্তে পিবিআই: হেফাজতে ইসলামের ১৬টি মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই।

সম্প্রতি নাশকতা, হত্যার চেষ্টা, ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমসহ বিভিন্ন অভিযোগে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার মধ্যে ১৬টি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পিবিআই। পিবিআইর প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ক্রাইম ডায়রি // জাতীয়