চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায় তরুণ নেতা মাহাবুব রহমান দুর্জয়

মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ এবং কর্মঠ নেতা মাহাবুব রহমান দুর্জয়। 

চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন প্রতিযোগিতায়  তরুণ নেতা মাহাবুব রহমান দুর্জয়
ছবি-ক্রাইম ডায়রি

আমি নিজে অনেক মানবিক কাজ করি, বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচী রয়েছে আমার। দুর্যোগকালীন সময়ে সব সময় মানুষের পাশে দাড়িয়েছি।

জুয়েল মাঝি, চট্টগ্রাম হতেঃ

চট্টগ্রাম ৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) বায়েজিদ ও পাঁচলাইশ আংশিক আসনে এক মেয়াদে দুইবার উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন মহাজোট প্রার্থী জাসদের মঈনউদ্দিন খান বাদল। ২০১৯ সালের ৭ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর এই আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মোছলেম উদ্দিন আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি দিনগত রাত পৌনে একটার দিকে মারা যান তিনি। তাঁর মৃত্যুতে সংসদীয় আসনটি শূন্য ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে চলছে নানান কানাঘুষা। কে পাবে মনোনয়ন, কাকে দিচ্ছে মনোনয়ন। এমন প্রশ্ন এখন দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মুখেমুখে। ইতিমধ্যেই যারা এই আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী তাঁরা বিভিন্ন পোস্টার, ব্যানার, সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকসহ পত্রপত্রিকায় নিজেদের প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়েছেন। প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র জুনিয়র নেতাকর্মীদের অনেকেই। পেশাজীবীদের কেউকেউ আবার এ আসনে মনোনয়ন চাইবে এমনটাও গুঞ্জন আছে। 

 

আগামী ২৭ এপ্রিল-২৩ইং তারিখে শূন্য এ আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইসি। ইসি'র নির্বাচনী তারিখ ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। প্রার্থীদের অনেকেই ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সান্নিধ্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন।

এপর্যন্ত যে কজন আলোচিত মানুষ মনোনয়ন প্রত্যাশী তাঁরা হলেন চসিক সাবেক মেয়র নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন, প্রয়াত সাংসদ মোছলেম উদ্দিনের সহধর্মিণী শিরিন আহমেদ, মঈন উদ্দিন খাঁন বাদলের সহধর্মিণী সেলিনা বাদল, সিডিএ'র সাবেক চেয়ারম্যান নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুস ছালাম, ব্যারিস্টার মনোয়ার, ৩নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খাঁন, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর কাদের সুজন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মাহাবুব রহমান দুর্জয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে সবচেয়ে তরুণ এবং কর্মঠ নেতা মাহাবুব রহমান দুর্জয়। 

মনোনয়ন বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বহুবছর ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদ্য সমাপ্ত ২৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে যুব সংগঠক হিসেবে নগর রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি ও আদর্শ অন্তরে ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে কাজ করছি। দেশে এখন আর ভাত রুটির জন্য কেউ সংগ্রাম করে না, কেউ এখন আর রাস্তাঘাটের জন্য আন্দোলন করে না। জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলার মানুষের রুটিরুজি নিশ্চিত করেছেন বহু আগে, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদাহরণে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশকে ঝকঝকে বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলে বিশ্বমঞ্চে উদাহরণ হয়েছেন, হচ্ছেন। আমাদের দলীয় নেত্রী ইতিমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবেন। আমাদের নেত্রী যা বলেন তাই করেন এতে কোন সন্দেহ নেই। আমি মনে করি নেত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হলে অবশ্যই তারুণ্য নির্ভর তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন রয়েছে। যারা তরুণ তারা অনেক বেশী কর্মঠ এবং দায়িত্বশীল হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে হলে নেতৃত্বও হতে হবে স্মার্ট। আমাদের নেত্রী স্মার্ট চিন্তার অধিকারী, যদি দলীয় মনোনয়ন পাই এবং নির্বাচিত হই তাহলে অবশ্যই নেত্রীর স্মার্ট চিন্তাধারার বাস্তবায়নে নির্বাচিত আসন স্মার্ট হিসেবে গড়ে তুলবো। 

তিনি আরও বলেন- আমাদের নেত্রী তরুণ নেতৃত্ব নিয়ে অনেক পজেটিভ। জাতীয় সংসদে তরুণ নেতৃত্ব অনেক কম, তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিতে হবে। দেশের বেকারত্ব দূর করতে এবং কর্মঠ তরুণ সমাজের নেতৃত্ব দিতে হলে অবশ্যই তারুণ্য নির্ভর তরুণ নেতৃত্ব সংসদ নেতা হিসেবে প্রয়োজন। আমার বিশ্বাস নেত্রী সংসদ নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্ব তুলে আনবেন। নেত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে তরুণরাই সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখতে পারবেন।

অনেক সিনিয়র নেতা এ আসনে প্রার্থীর আলোচনায় রয়েছে আপনি কেন প্রার্থী হিসেবে নিজেকে যোগ্য মনে করছেন এমন প্রশ্নের জবাব তিনি বলেন; দেখেন আমাদের দল এবং দলীয় প্রধান গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস রাখেন। গণতান্ত্রিক ধারায় যে কেউ প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ বা ইচ্ছে প্রকাশ করতে পারে, এটাই গণতন্ত্র এটাই নিয়ম। যেহেতু রাজনীতি করি, দলীয় সকল কর্মসূচীতে স্বকীয় অংশগ্রহণ রয়েছে এবং দলীয় যে ইশতেহার সে ইশতেহারে সাধারণ ভোটার বা জনগণের জন্য আমার কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে।

আমি নিজে অনেক মানবিক কাজ করি, বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচী রয়েছে আমার। দুর্যোগকালীন সময়ে সব সময় মানুষের পাশে দাড়িয়েছি। এ আসনের সর্বস্তরের জনসাধারণের সাথে আমার সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। আসনের ভোটাররা আমাকে চিনেন এবং জানেন। সুতরাং জনসাধারণের জন্য ব্যাপকার্থে কাজ করার লক্ষ্যে আমি নিজেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে যোগ্য মনে করতেই পারি। 

কে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছে জনতে চাইলে তিনি বলেন- আসন একটি কিন্তু প্রার্থী অনেক, এখানে প্রতিযোগিতা হবে। হেবিওয়েট প্রার্থীদের তালিকাও অনেক লম্বাচওড়া। আমি মনোনয়ন চাইলাম আর মনোনয়ন পেয়ে গেলাম বিষয়টা মোটেও এমন নয়। আমার চেয়েও হাজারগুণ দক্ষ এবং অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতা এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

তবে আমি তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই, তরুণদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করতে চাই। তরুণদের অব্যক্ত কথাগুলো সংসদে গিয়ে বলতে চাই, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার অংশীদার হতে চাই। এই প্রত্যাশা নিয়ে মনোনয়ন চাইবো, মনোনয়ন বিষয়ে দলীয় প্রধান সিদ্ধান্ত দিবেন। যাকেই মনোনয়ন দেওয়া হোক আমরা দল এবং দলীয় স্বার্থে মাঠেঘাটে সব জায়গায় সক্রিয় থেকে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবো ইনশাআল্লাহ। 

 

বিরোধী দল কি নির্বাচন করবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- কে নির্বাচন করবে আর কে করবে না সে বিষয় নিয়ে আপাতত ভাবছি না। তবে যারা স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি এবং গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাস রাখে তারা অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিৎ বলে মনে করি। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে আপনাদের জন্য সুবিধাজনক হবে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান- গণতান্ত্রিক ধারায় সুবিধা অসুবিধা বলতে কোন শব্দ নেই।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক নিয়মে দেশের সকল নির্বাচন হচ্ছে এবং আগামীতেও নির্বাচনী এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন- অগণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠী দ্বারা এদেশে আর কখনো নির্বাচন পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না। দেশের মানুষ ভালো আছে, ভোট কেন্দ্রে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যাচ্ছে, এটাই গণতন্ত্রের প্রতিচ্ছবি।

আপনি মনোনয়ন পেলেন এবং নির্বাচিত হলেন তখন কি করবেন শেষ প্রশ্নে জানতে চাইলে তিনি বলেন- যেহেতু এ আসনে সিনিয়র অনেক নেতারা মনোনয়ন প্রত্যাশী সেহেতু আমার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম বললেই চলে।

তবুও আপনার প্রশ্নের জবাবে বলতে গেলে বলতে হয়, যদি মনোনয়ন পাই এবং নির্বাচিত হই তাহলে বোয়ালখালীবাসীর দীর্ঘ দিনের প্রাণের দাবী কালুরঘাট সেতু নির্মানসহ আধুনিক ও তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা জোড়দার করবো, স্থানীয় সামাজিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা বিস্তারে জোড়দার ভূমিকা রাখবো, নির্বাচনী আসনে অবকাঠামগত উন্নয়নে গুরুত্ব দিব, ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পূণ: নির্মান করবো, সামাজিক অবক্ষয় রোধে আইনী ব্যবস্থার জোড়দার করবো, শিল্প মালিক ও শ্রমিকের বিরোধমুক্ত শ্রমব্যবস্থায় গুরুত্ব দিব, নারী ও শিশুর নিরাপত্তামূলক আধুনিক সমাজ ব্যবস্থা সচল রাখব, শিক্ষার উন্নয়ন ও চিকিৎসা সেবা বিষয়ে অধিকতর গুরুত্ব থাকবে, তৃনমূল রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মাঝে সুসম্পর্ক স্থাপনসহ দলীয় প্রধানের স্মার্ট চিন্তাধারায় স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো।

ক্রাইম ডায়রি/ জেলা