পিজি হাসপাতালে দুর্নীতির চোরাবালি: চিকিৎসার নামে চলছে অর্থ লুটের মহোৎসব, হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য
অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে রোগীরা ঠিকমত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না এবং প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে কাজ দেয়া হচ্ছে, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মানে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদক:
বালাদেশে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যখন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রত্যাশা বেড়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। ঠিক তখনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, যা পিজি হাসপাতাল নামেও পরিচিত, সেখানে তেমনই একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটছে।
স্বাধীনতার নতুন প্রাপ্তিতে যখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা উদ্দীপ্ত, তখনই এই স্বনামধন্য হাসপাতালে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
বিপ্লবের পর নতুন প্রশাসনের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটি অস্বচ্ছ ও দুর্নীতিমূলক পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে প্রশাসন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের বিভিন্ন পদের জন্য বেছে নিচ্ছে। এতে হাসপাতালের নিয়মিত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং এর ফলে জনসাধারণ সেবাপ্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
অভিযোগ রয়েছে, অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সুপারিশে কাজ দেয়া হচ্ছে, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মানে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
নতুন প্রশাসন ক্ষমতায় এসে নিয়মিত ডাক্তার, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপর অযথা অভিযোগ চাপিয়ে শাস্তি আরোপ করছে। দায়িত্বপালনের সময় যাদের কাজের ক্ষেত্রে কোনো ভুল বা অপরাধের রেকর্ড নেই, তাদেরকেও ভিত্তিহীন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হচ্ছে।
এর ফলে সৎ ও যোগ্য কর্মচারীদের মনোবল কমছে এবং স্বাস্থ্যসেবার সঠিক ধারাবাহিকতা বিঘ্নিত হচ্ছে।
প্রকাশিত অভিযোগ থেকে আরও জানা যাচ্ছে, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অপরাধী কর্মচারীদের ঘুষের বিনিময়ে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়ার অভিযোগও উঠেছে।
যারা প্রকৃত অপরাধ করেছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তির মুখোমুখি না করে অর্থের বিনিময়ে তাদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও ন্যায়ের মূল্যবোধ ভঙ্গুর অবস্থায় পড়েছে, যা এই প্রতিষ্ঠানের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করছে।
এই ধরণের দুর্নীতি ও অসদাচরণের কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের নিয়মিত সেবার গতি যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনই সাধারণ জনগণ আর্থিক ও মানসিকভাবে ভুগছেন। অসাধু কর্মকর্তাদের কারণে রোগীরা ঠিকমত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না এবং প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।
স্বাধীনতা আন্দোলনের পর দেশের জনগণের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার হলেও এই ধরণের অশুভ কাজ সেই আশাকে তিরোহিত করছে। জনগণ এখন অপেক্ষায় রয়েছে, দেশের হাসপাতাল ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি দমনের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের। স্বাস্থ্যসেবা খাতে দুর্নীতি বন্ধে জোরালো পদক্ষেপ ও প্রশাসনিক সংস্কার প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার ও সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, জাতির গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন বেহাল দশা বর্তমানে জনগণের মৌলিক অধিকারকে হরণ করছে। সময় এসেছে সরকারি প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করার।
ক্রাইম ডায়রি // ক্রাইম