প্রবাসী পাত্রের প্রতরণার শিকার ফরিদপুরের রিমাঃ জীবননাশের হুমকি, থানায় জিডি
প্রবাসী সুরজ মাতব্বর এর সাথে রিমা নামের এক উচ্চ শিক্ষিত মেয়ের বিয়ের পর প্রতারণা, জালিয়াতি এবং জীবননাশের চেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে প্রবাসী এই পাত্রের পরিবারের বিরুদ্ধে।
আকবর হোসেন রণি, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মেয়ে বিয়ে দেয়ার সময় ছেলে বিদেশে থাকে শুনলে মেয়ে বিত্তের মাঝে থাকবে মনে করে বিয়ে দিতে উন্মুখ থাকা মাবাবারা সাবধান। বিদেশ বিভূঁইয়ে পড়ে থাকা এসব মহাপুরুষ পাত্রের সাথে বিয়ে হওয়া নারীদের প্রায় সত্তরভাগই অসুখী এবং এক পর্যায়ে ডিভোর্সে নিতে বাধ্য হন। সম্প্রতি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার কালামৃধা ইউনিয়নের দেওড়া গ্ৰাম নিবাসী মোঃ রাজ্জাক মাতব্বর এর সেজো ছেলে ইতালি প্রবাসী সুরজ মাতব্বর এর সাথে রিমা নামের এক উচ্চ শিক্ষিত মেয়ের বিয়ের পর প্রতারণা, জালিয়াতি এবং জীবননাশের চেষ্টার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে প্রবাসী এই পাত্রের পরিবারের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ভিকটিম রিমা বিগত ১০ এপ্রিল, ২০২৩ইং তারিখে ফরিদপুরের মধুখালী থানায় একটি আত্বরক্ষামূলক জিডি করেছে যার নং ৪২৫।
জিডি ও ভিকটিমের অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, ইতালি থাকা অবস্থায় এক দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে প্রথমে বিদেশে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করার লোভ দেখিয়ে কাবু করে ঢাকার বাংলা কলেজ হতে একাউন্টস নিয়ে এমবিএ পাশ করা রিমাকে। পরিবারের দারিদ্রতা থাকায় স্বচ্ছল হবার আশায় রিমা ইতালি প্রবাসী নিজেকে উচ্চশিক্ষিত ভার্সিটি পাস দাবী করা সুরুজ মাতব্বরের মিষ্টি কথায় বিয়ে করতে রাজী হয় সে। কথা হয় বিয়ের পর বাবার বাড়িতে অথবা ঢাকায় থাকবে এবং কাগজ পত্র রেডি এবং খুব তাড়াতাড়ি প্রসেসিং শেষ করে বিদেশ নেয়া হবে কনেকে।যতদিন দেশে থাকবে ততদিন ভরণপোষণ দিবে। দারিদ্রের কষাঘাতে বড় হওয়া পরিবারের উপার্জনক্ষম রিমা চিন্তা করে ওখানে গিয়ে যদি একটা চাকরি করতে পারে তাহলে পরিবারের এবং সংসারের হাল ধরতে পারবে সে।
ভিকটিম, তার পরিবার ও থানার জিডি সুত্রে জানা গেছে, বিগত ০৩/০১/২০২৩ ইং তারিখে ইতালি নিতে কোর্ট ম্যারেজের কাগজ লাগবে এই কথা বলে ভিকটিম রিমা ও প্রবাসী সুরুজ মিয়া কোর্টে গিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু বিধি বাম হয়। বিয়ের দু’দিন পর হতে হাতের মেহেদী মুছে যাবার আগে থেকে তার ভিন্ন রূপ বের হতে থাকে। বিয়ের দিন কাবিনের টাকা থেকে সে দুই লাখ টাকা উসুল লিখে নেয় এবং বলে দুই লাখ টাকার গহনা দিবে কিন্তু গহনা যেটা দিয়েছিল জানা যায় সেটা ছিল ধার করা। এরপর বিগত ১১/০১/২০২৩ইং তারিখে রিমা অসহায় গরীব পিতাকে বাধ্য করে ছেলে পক্ষের বাড়ি হতে বাড়ি থেকে প্রায় ১৫০ জন লোক নিয়ে ধুমধামে শ্বশুরবাড়ি নেয়া হয় রিমাকে। রিমার অভিযোগ প্রবাসী সুরুজ তার বাবাকে বলে ধার দেনা করে হলেও অনুষ্ঠান করতে হবে, সে ইতালি গিয়ে যত টাকা খরচ হয় দিয়ে দিবে। এ কথা শুনে ভিকটিম রিমার পিতা ধার দেনা করে ১৫০ জন বর যাত্রী আপ্যায়ন করে।
দারিদ্রের কষাঘাতে বড় হওয়া পরিবারের উপার্জনক্ষম রিমা চিন্তা করে ওখানে গিয়ে যদি একটা চাকরি করতে পারে তাহলে পরিবারের এবং সংসারের হাল ধরতে পারবে সে।
স্বপ্ন বুনতে থাকা রিমার তখনই স্বপ্নভঙ্গ শুরু হয়ে যায়। তার হেফাজতে থাকা স্বামীর দেয়া গহনা ফেরত চায় তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। গহনা দিতে রাজি না হওয়ায় তারা তাকে মারধর করে গহনা কেড়ে নেয় এবং শারিরীকভাবে অত্যাচার করে বলে ভিকটিম রিমার অভিযোগ। জিডিতে রিমা জানায় তারা তাকে চুল ধরে পিঠে এবং ঘাড়ে আঘাত করে যেটার জন্য সে এখনো চরম ব্যথা এবং যন্ত্রণায় ভুগছে। আঘাতের পর তারা তাকে বাড়িতে জিম্মি করে রাখে, ডাক্তারের কাছে ও নিয়ে যায়নি।
অবস্থা যখন প্রচণ্ড খারাপ তখন তার স্বামী এবং ভাবী ও বোন মিলে তাদের বাজারে গ্ৰাম্য একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। ডাক্তার জিজ্ঞাসা করেন কি ভাবে এতোটা আঘাত পেয়েছেন, ভিকটিম সেটা বলতে গেলে তাকে চুপ করিয়ে দেয়া হয়। তারা ডাক্তারকে বলে ঘুমের মধ্যে রগে টান লেগেছে।
অত্যাচারের একপর্যায়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাওয়ায় উচ্চশিক্ষিত রিমাকে মাসব্যাপী গৃহবন্দী করে রাখা হয়। এর কয়েকদিন প্রবাসী সুরুজ ইতালি ফিরে যায়। ইতালি যাওয়ার দুই দিন আগে প্রবাসী সুরুজ ভিকটিমকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে হামলা করে এবং মাথাটা দেওয়ালের সাথে অনেক জোরে আঘাত করে। আঘাত করার পর কোনো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়নি। ভিকটিম এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মীদের নিকট বলে, আমি চুপচাপ তাদের অত্যাচার সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকি তার চলে যাওয়ার দিন আসা পর্যন্ত। সে চলে যাবে ইতালিতে, তাকে এয়ারপোর্টে এগিয়ে দেওয়ার কথা বলে আমি তার সাথে ওই বাড়ি থেকে একসাথে বের হয়ে ঢাকায় চলে আসি। ১১/০২/২০২৩ তারিখে তাকে এয়ারপোর্টে এগিয়ে দিয়ে বিকালে আমি ডাক্তারকে দেখালে তিনি অবাক হয়ে বলে এতো জোরে আঘাত পেয়েছেন কি করে? আমি তখন উনার সামনে কান্না করে ফেলি এবং উনি আমাকে আইনের আশ্রয় নেবার পরামর্শ দেন। ঢাকা থেকে ডাক্তার দেখিয়ে তারপর আমি আমার বাবার বাড়িতে চলে আসি। সে আমাকে অনুরোধ করেছিল আমি যেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নেই। এখন তারা সবাই মিলে আমাকে চাপ সৃষ্টি করছে তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য, বলে ওখানে না গেলে আমার কোনো খরচ দিবে না। কিন্তু আমি যেখান থেকে একবার নিজের প্রান বাঁচিয়ে কোনো রকম বের হয়ে আসছি, সেখানে আবার গেলে তারা আমাকে প্রানে মেরে ফেলবে। আমাকে তারা মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে অনেক বার। আমি বর্তমানে আমার বাবার বাড়িতে আছি, তারা আমার বাবা মা বোন ভগ্নিপতি সবাইকে ফোন দিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে যাচ্ছে। আমাকে নাকি বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে। তার নাকি অনেক ক্ষমতা, আইন মিডিয়া নাকি তার কিছুই করতে পারবে না। সে নাকি তার এলাকার এমপিকে মেরেছে, নেতাকে মেরেছে, তার থানার ওসিকে ছাদ থেকে ফেলে দিতে চেয়েছে এসব বলে আমাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে চুপ করে থাকতে বলে। আমি যখন বললাম আমি আর চুপ থাকতে পারবো না আমি আইনি ব্যবস্থা নেবো তখন থেকেই তারা আমাকে ওই বাড়িতে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন লোক দিয়ে ফোন করিয়ে হুমকি ধামকি দিয়ে আমাকে ওখানে নেওয়ার চেষ্টা করছে। গত তাং ০৬-০৪-২০২৩ ইং আবারও তার বন্ধু পলাশকে দিয়ে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং আমার বাবা-মা কে হুকমি ধামকি দিয়েছে। পলাশ বলে আমি একা মেয়ে মানুষ, আমার কেউ নেই যে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবো। তাদের নাকি আইন এবং মিডিয়া কিছু করতে পারবে না। তাদের হাত অনেক লম্বা, তারা টাকা দিয়ে সব থামিয়ে দিবে। তারা কোনো ভাবে আমাকে ওখানে নিতে পারলেই আমাকে মেরে ফেলবে আমি নিশ্চিত। এই অবস্থায় আমি আমার বাবার বাড়িতে ও নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছি। যেকোনো মুহূর্তে আমার উপর হামলা হতে পারে। সে তার এবং আমার বিভিন্ন পরিচিত লোকের কাছে আমার সম্পর্কে খুব খারাপ খারাপ কথা বলে বেড়াচ্ছে।”
গণমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের নিকট রিমার অভিযোগ, তার সাথে প্রতারনা করা হয়েছে। গন্ডমুর্খ হলেও অভিযুক্ত সুরুজ তাকে অনার্স কমপ্লিট করেছে, ভাঙ্গা হাইওয়ের পাশে তার পাঁচ তলা বাড়ি আছে বলে উল্লেখ করেছিল। বিয়ের পরদিন্ হতেই অত্যাচারের ষ্টিম রোলার শুরু করে প্রবাসী সুুরুজ। ভিকটিম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসএ্যাপে একটি লিখিত আবেদন জানায় গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট তাতে সে লিখেছে তার মতো উচ্চশিক্ষিত মেয়ের সাথে একটা গন্ড মূর্খ লোক যে অত্যাচার অবিচার করেছে আর কোনো মেয়ের সাথে যেন এমনটা না হয় সেজন্য সে আইনী ব্যবস্থা গ্ৰহন করে সবার সামনে তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে চায় সে।
ইতোমধ্যে থানায় জিডি করায় তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের ফোন দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার হুমকিসহ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিচ্ছে বলে ভিকটিম রিমার অভিযোগ।এমতবস্থায় ভিকটিম ও তার পরিবার প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ক্রাইম ডায়রি/ক্রাইম