গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য কিন্তু আমি অনেক উদারতা দেখিয়েছি-- প্রধানমন্ত্রী

৩৮০০ গাড়িতে তারা আগুন দিয়েছে। ২৯টা ট্রেনে তারা আগুন দিয়েছে। সিএনজি, প্রাইভেট কার- যাকে যেখানে পেত, গায়ে পেট্রোল ঢেলে মানুষ আগুনে পুড়িয়ে মারাই নাকি তাদের আন্দোলন।

গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য কিন্তু আমি  অনেক উদারতা দেখিয়েছি-- প্রধানমন্ত্রী
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনকারী বিএনপির সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কাদের সঙ্গে আলোচনা করব? একে তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তারপর আবার আমার বাবা-মা, ভাই-বোনদের খুনি।

অনলাইন ডেস্কঃ

যুক্তরাষ্ট্রে ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন,  দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য কিন্তু আমি অনেক উদারতা দেখিয়েছি। তবে এখন আর তাদের (বিএনপি) সঙ্গে কথা বলার মতো কিছু নেই। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলনকারী বিএনপির সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, কাদের সঙ্গে আলোচনা করব? একে তো সাজাপ্রাপ্ত আসামি, তারপর আবার আমার বাবা-মা, ভাই-বোনদের খুনি।

বঙ্গকন্যা বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে কিন্তু আমার বাবাকে হত্যা করা হলো, তারপর যিনি ক্ষমতায়- তাকে সরাল, তারপরে আরেকজন চিফ জাস্টিস সায়েম তাকে সরিয়ে অস্ত্র হাতে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসে। তারপর সে একটা রাজনৈতিক দল করে। একজন সেনাপ্রধান নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে চেয়ারে বসল, তারপর হ্যাঁ-না ভোটের নামে নাটক করা হলো। একথা সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, অস্ত্র হাতে নিয়ে ক্ষমতা দখল করে, ক্ষমতায় বসে থেকে যে রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছে, সেটাই হচ্ছে বিএনপি।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু বারবার বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেছি, ২০১৮- এর নির্বাচনেও। আসলে বিএনপি এমন একটা রাজনৈতিক দল, এই দলটা সৃষ্টি করেছে একজন মিলিটারি ডিক্টেটর, যে ১৯৭৫ সালে আমার বাবা-মা, ভাই-বোনদের হত্যা করেছে। একজন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-এর নির্বাচন নিয়ে কিন্তু কারও কোনো অভিযোগ নেই। তখন আমাদের ছিল ১৪ দলীয় জোট, আর বিএনপি নেতৃত্বে ছিল ২০ দলীয় জোট। তাদের জোট ৩০০ সিটের মধ্যে পেয়েছিল ২৯টা, বাকি সিটগুলো কিন্তু আমরা পেলাম। সেটা থেকেই তো জনগণের কাছে বিএনপির অবস্থানটা স্পষ্ট হয়ে যায়।

যার ফলে তারা ২০১৪ সালে আর ইলেকশন করবে না, ইলেকশন ঠেকাবে। ইলেকশন ঠেকাতে গিয়ে শুরু করল অগ্নিসন্ত্রাস। এটা মনে হয় কোনো মানুষ ভাবতে পারবে না যে- জীবন্ত মানুষগুলো বাসে করে যাচ্ছে, সেখানে তারা আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, ট্রাকে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, লঞ্চে আগুন দিয়ে মানুষ পোড়াচ্ছে, গাড়ি, সিএনজি।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ৩৮০০ গাড়িতে তারা আগুন দিয়েছে। ২৯টা ট্রেনে তারা আগুন দিয়েছে। সিএনজি, প্রাইভেট কার- যাকে যেখানে পেত, গায়ে পেট্রোল ঢেলে মানুষ আগুনে পুড়িয়ে মারাই নাকি তাদের আন্দোলন।

তিনি বলেন, ৫০০ স্কুল তারা জ্বালিয়ে দিয়েছিল আগুন দিয়ে এবং ৭০টা সরকারি অফিস, ৬টা ভূমি অফিস তারা আগুন দিয়ে জ্বালাল, এভাবে তারা ইলেকশন বন্ধ করার চেষ্টা করল। কিন্তু আসলে জনমতের শক্তিটাই সবচেয়ে বড়। কাজেই ইলেকশন বন্ধ করতে পারেনি, আমরা ক্ষমতায় ফিরে আসলাম। বিএনপির সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে মারা গেল, যখন লাশ এসেছে মানবিক কারণে আমি প্রাইম মিনিস্টার, তারপরও সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি জানাব বলে আমি গেলাম। আমি যখন রওনা হলাম, প্রথমে বলা হলো আমার গাড়িকে ওই বাড়ির ভেতর ঢুকতে দেবে না। মেইন গেট বন্ধ, যেখানে আমি চলে আসছি কেচি গেটে।

তারপরে খবর এলো যে ওই গেট দিয়ে ঢুকতে দেবে না। তখন আমি বললাম যে, যেহেতু এসেই গেছি, মেইন গেট না খুললেও পকেট গেট দিয়েই যাব। আমার গাড়িটা দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আমার যে অন ডিউটি এসএসএফ ভেতরে ছিল, সে জাস্ট গেট থেকে একটু বের হয়ে এসেছে আমাকে নেওয়ার জন্য, পেছনে চট করে দরজাটা বন্ধ করে দিল। আমাকে ঢুকতে দিল না। আমি তাও গাড়ি থেকে নামলাম। নেমে দেখি, তাদের লোকজন ভেতরে। আমাকে ঢুকতে না দিয়ে অপমান করা হলো। এখন আপনারা বলেন- এরপর কার সঙ্গে ডায়লগ করব আমি?

২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা উলে­খ করে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার করার পর প্রত্যেকটা পরিবার যে কষ্ট পাচ্ছে, আর যারা পুড়ে একটু বেঁচে আছে, তাদের সবার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিলাম। যে অবস্থায় তারা আছে সেই অবস্থা যদি কেউ চোখে দেখে, তখন আর ওদের (বিএনপি) সঙ্গে আর বসতে ইচ্ছা হয় না। মনে হয় ওদের সঙ্গে বসলে যেন ওই পোড়া মানুষগুলোর পোড়া গন্ধ পাই।

ক্রাইম ডায়রি/ জাতীয়