অর্ধকোটি টাকা আত্নসাৎ- অভিযোগের তীর প্রধানশিক্ষকের দিকে

করোনা মহামারির কারণে ওই সময় মূলত বিদ্যালয় বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাত থেকে এ বিশাল অঙ্কের টাকা উত্তোলন করে প্রধান শিক্ষক কী কাজ করেছেন এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসএম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে তাদের ধারণা।

অর্ধকোটি টাকা আত্নসাৎ- অভিযোগের তীর প্রধানশিক্ষকের দিকে
ছবি-অনলাইন হতে সংগৃহীত

প্রসঙ্গত সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি, রেজিস্ট্রেশনে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও মানসম্পন্ন টিফিনের দাবিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।

 গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

নীতি নৈতিকতা যেন দিন দিন শুণ্যের কোঠায় ! যে শিক্ষকেরা কোমলমতিদের নীতিবান হবার শিক্ষা দিবেন তিনিই যদি নীতিহীন হন তবে কিভাবে  এ জাতীর উন্নয়ন হবে।সরকারী বিদ্যালয়গুলোকে ধরা হয় জেলার শ্রেষ্ঠ স্কুল। কারন এই স্কুলের শিক্ষকেরা প্রেষণে অনেক সময় শিক্ষাবিভাগের অনেক গুরুত্বপুর্ন  দায়িত্ব পালন করেন। আবার অনেক সময় এখানকার প্রধান শিক্ষকেরা জেলা শিক্ষা অফিসারের দায়িত্বও পালন করেন। তাই সরকারী বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে গোয়েন্দা প্রতিবেদন এখন সময়ের দাবী হয়েছে দাঁড়িয়েছে। 

বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আপ্যায়নের জন্য টিফিন খাত থেকে টাকা খরচ করেছি। অডিট করা হলে এসব হিসাব পরিষ্কার হয়ে যাবে। 

সম্প্রতি, গোপালগঞ্জ এসএম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাইনউদ্দিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের একাধিক ফান্ডের ৪৯ লাখ ২২ হাজার ২৮৭ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। করোনাকালীন বিদ্যালয়ের ১৭টি অ্যাকাউন্ট থেকে একক স্বাক্ষরে তিনি ওই টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।   ২০২০ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে মো. মাইনউদ্দিন ভূঁইয়া এসএম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। 

করোনা মহামারির কারণে ওই সময় মূলত বিদ্যালয় বন্ধ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাত থেকে এ বিশাল অঙ্কের টাকা উত্তোলন করে প্রধান শিক্ষক কী কাজ করেছেন এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসএম মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম না প্রকাশের শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন বলে তাদের ধারণা। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২১ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে প্রধান শিক্ষক ব্যাংক থেকে ৪৯ লাখ ২২ হাজার ২৮৭ টাকা উত্তোলন করেছেন। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের টিফিন ফান্ড থেকে ৬ লাখ ১৪ হাজার ৪৩৩ টাকা উত্তোলন করা হয়। অথচ ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ওই সময় কোনো টিফিন কার্যক্রম ছিল না। ২০২২ সালের ১৫ মার্চ বিদ্যালয় খোলার পর থেকে রোজা শুরুর আগ পর্যন্ত ৮-১০ দিন বিদ্যালয়ে টিফিন কার্যক্রম চালু ছিল। প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের টিফিন বাবদ ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে। সে হিসেবে ৮-১০ দিনের টিফিন বাবদ খরচের হিসাব দাঁড়াবে ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। তা হলে টিফিনের জন্য বরাদ্দের বাকি টাকা কোথায় গেল?

নীতি নৈতিকতা যেন দিন দিন শুণ্যের কোঠায় ! যে শিক্ষকেরা কোমলমতিদের নীতিবান হবার শিক্ষা দিবেন তিনিই যদি নীতিহীন হন তবে কিভাবে  এ জাতীর উন্নয়ন হবে।সরকারী বিদ্যালয়গুলোকে ধরা হয় জেলার শ্রেষ্ঠ স্কুল। কারন এই স্কুলের শিক্ষকেরা প্রেষণে অনেক সময় শিক্ষাবিভাগের অনেক গুরুত্বপুর্ন  দায়িত্ব পালন করেন।

অনুরূপভাবে বিদ্যালয়ের আরও ১৯টি ফান্ড থেকে ওই সময়ে আরও ৪৩ লাখ ৭ হাজার ৮৫৪ টাকার হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।  এদিকে প্রধান শিক্ষক তার দুর্নীতি ও অপকর্ম ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ওঠেপড়ে লেগেছেন। গত ১৮ এপ্রিল তিনি তার অফিসকক্ষে তার মতো ভাবাপন্ন শিক্ষকদের ডেকে এক বছর আগের অর্থাৎ ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি তারিখে অনুষ্ঠিত একটি ভুয়া সভা দেখিয়ে তাতে ব্যাক ডেটে স্বাক্ষর করিয়ে নেন। 

বিষয়টি প্রকাশ হলে কয়েকজন শিক্ষক এর তীব্র প্রতিবাদ করেন। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের দুজন সিনিয়র শিক্ষক শেখ মো. আবু হানিফ, জাহিদুল ইসলাম এবং সহকারী শিক্ষক সিকদার জাহিদ হোসেনকে সতর্ককরণ নোটিশ দেন। অপর শিক্ষকদেরও তিনি ভয়ভীতি দেখান। 

এ ছাড়া ২০ এপ্রিল প্রধান শিক্ষক ওই তিন শিক্ষকদের আরও একটি শোকজ করেন। কিন্তু ওই শোকজ নোটিশে ঘটনার তারিখ এবং সময় উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাইনউদ্দিন ভূঁইয়া তার বিরুদ্ধ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নকাজে এসব টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আপ্যায়নের জন্য টিফিন খাত থেকে টাকা খরচ করেছি। অডিট করা হলে এসব হিসাব পরিষ্কার হয়ে যাবে। 

প্রসঙ্গত সম্প্রতি প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি, রেজিস্ট্রেশনে অতিরিক্ত টাকা আদায় ও মানসম্পন্ন টিফিনের দাবিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। পরে তারা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করে।

একই রকম ঘটনা দেশের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে  ঘটলেও মিডিয়ায় না আসা পর্যন্ত নড়ে চড়ে না বসা যেন কর্তৃপক্ষের  উদাসিনতার প্রশ্ন চলে আসে। একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে যদি সব জায়গায় ইন্টারনাল অডিট শক্তিশালী করা হয় তবে বিষয়টি নিয়ে আর কেউ নতুন করে দুর্র্নীতির সাহস দেখাবে না।

ক্রাইম ডায়রি//অপরাধ