বেকারত্ব, চাকরির বয়স ৩৫- সমাধান কোথায়?
সরকারি চাকরি। বাংলা প্রবাদের মতই সত্য যে সরকারি চাকরি সোনার হরিণ।
প্রচলিত মজুরিতে মানুষের কাজ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যখন তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না, সেই পরিস্থিতিকে বেকারত্ব বলে।
অনলাইন ডেস্ক
সরকারি চাকরি। বাংলা প্রবাদের মতই সত্য যে সরকারি চাকরি সোনার হরিণ। সেই সরকারি চাকরি পেতে মরিয়া সবাই। কেউ বিসিএস ক্যাডার কেউবা নূন্যতম গ্রেডের চাকরি হলেও সরকারি চাকরিটাই চাই তার। জনসংখ্যাবহুল বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা ব্যাপক। ব্যাপক বেকার ছেলে-মেয়েদের সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা কখনোই সম্ভব না। দিন দিন বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি অথবা সংকট। ইংরেজি আনএমপ্লোয়মেন্ট শব্দটি থেকে বেকারত্ব শব্দটি এসেছে। দেশের প্রচলিত মজুরিতে মানুষের কাজ করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যখন তাদের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকে না, সেই পরিস্থিতিকে বেকারত্ব বলে।
বাংলাদেশে বর্তমানে নিরব কাঁদনে কাদছে বিশাল বেকার গোষ্ঠী। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা মোট ২৫ লাখ ৯০ হাজার যা গত বছর অর্থ্যাৎ ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ বেকারের সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ ৭০ হাজার। বছর ব্যবধানে ১ লাখ ২০ হাজার বেকার বেকারত্বের খাতায় তালিকাভুক্ত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নিয়ম অনুসারে, যারা সাত দিনের মধ্যে মজুরির বিনিময়ে এক ঘণ্টা কাজ করার সুযোগ পাননি এবং গত এক মাস ধরে কাজ-প্রত্যাশী ছিলেন, তাঁরা বেকার হিসেবে গণ্য হবেন। বিবিএস এই নিয়ম অনুসারেই বেকারের হিসাব দিয়ে থাকে। আবার এটাও বলা হয়েছে যে পুরুষ বেকারত্বের হার নারীদের তুলনায় বেশি। যা আরও অশনী সংকেত একটি সমাজ ও দেশের জন্য।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বেকারত্বের অবস্থা যদি এমন হয় তাহলে আগামীতে বেকারত্বের হার বাড়বে ছাড়া কমবে না বৈকি।
এক যুগ আগে ২০১২ সাল থেকে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩৫ বছর করার দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে চাকরি প্রত্যাশী প্রার্থীরা আন্দোলন করেছেন।কিন্তু সফল হননি। গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর চাকরির বয়স ৩৫ করার দাবিতে ফের আন্দোলন শুরু হয়। সরকার দাবি-দাওয়া অনুযায়ী একটি কমিশন গঠন করে ছেলেদের ক্ষেত্রে ৩৫ ও মেয়েদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর চেয়ে একটি সুপারিশ করেছে। এদিনই সরকার গঠিত পর্যালোচনা কমিটির প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, মহিলারা যেন সুযোগটা বেশি পায়, সেজন্য বয়স ৩৭ দেওয়া হয়েছে; পার্শ্ববর্তী দেশেও তা আছে । আর সবার জন্য ৩৫ সুপারিশ করা হয়েছে।(বয়সসীমা) কোনো গ্রেডের জন্য আলাদাভাবে বলা হয়নি, সার্বিকভাবে সব সরকারি চাকরির বিষয়ে বলা হয়েছে।
তবে কিছু কিছু শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতবিরোধ -মতানৈক্য দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ বলছে চাকরির বয়স ৩৫ করা হলে এই সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। আবার কেউ বলছে বেকারত্বের সংখ্যা অনেকাংশে কমে যাবে। আবার অনেকেই চাকরির বয়স ৩২ কিংবা ৩৩ করা হলে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত হবে বলে মনে করেন। আবার অনেকে ৩০ এর পক্ষেই রয়েছেন। এহেন পরিস্থিতিতে ছাত্র -ছাত্রীদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দেশ ও জাতি গঠনে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঐ সময়কার সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। যেকোনো সিদ্ধান্ত, যেকোনো পরিকল্পনা যুগোপযোগী টেকসই হতে হবে নতুবা আগামী প্রজন্ম বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হবে। দলমত সর্বশেষে সকলের চাওয়া যেকোনো সিদ্ধান্ত যেন দেশের ও জাতির জন্য ফলপ্রসূ হয়।
লেখক-
মেহেদী হাসান, শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ