সুইস ব্যাংক যেন বাংলাদেশীদের টাকার গুদাম

দেশে যখন টাকা পাচার ঠেকানোর তোড়জোড়, তখন নজিরবিহীন গতিতে সুইস ব্যাংকে টাকা জমিয়েছেন বাংলাদেশিরা। গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

সুইস ব্যাংক যেন বাংলাদেশীদের টাকার গুদাম
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

২০২১ সাল শেষে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে।

কালিমুল্লাহ দেওয়ান রাজাঃ

বাংলাদেশীদের টাকার গুদামে পরিণত হয়েছে সুইজারল্যান্ড। অবৈধভাবে দেশের টাকা সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে জমিয়েছে দূর্নীতিবাজ চক্র। যে পরিমাণ টাকা পাচার হয়ে সেখানে অলস পড়ে আছে তা দিয়ে আরও বেশ কয়েকটি পদ্মা সেতু তৈরি হতে পারে। দেশে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান হতে পারে।আর লক্ষ বেকারের কর্মসংস্থান হতে পারে। কিন্তু সেই টাকা এখন প্রিয় মাতৃভুমিতে নেই। 

বাংলাদেশিদের টাকার ‘পাহাড়’ জমেছে সুইস ব্যাংকে। সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে মাত্র ১২ মাসে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা করেছেন তারা। সব মিলিয়ে সুইস ব্যাংকগুলোতে এখন বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ ৮ হাজার ২৭৫ কোটি। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। 

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) বৃহস্পতিবার ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড-২০২১’বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখান থেকে বাংলাদেশিদের অর্থ জমার এ তথ্য উঠে এসেছে। 

দেশে যখন টাকা পাচার ঠেকানোর তোড়জোড়, তখন নজিরবিহীন গতিতে সুইস ব্যাংকে টাকা জমিয়েছেন বাংলাদেশিরা। গত এক বছরে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

২০২১ সাল শেষে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের ৫৬ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ৮৭ কোটি ১১ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে।

বর্তমান বিনিময় হার (১ সুইস ফ্রাঁ =৯৫ টাকা ৮০ পয়সা) হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ৮ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা।

টাকার হিসাবে ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫ হাজার ২০৩ কোটি টাকা জমা ছিল। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল-পরপর তিন বছর সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থের পরিমাণ কমার পর ২০২১ সালে বড় ধরনের উল্লম্ফন হয়েছে।

২০১৯ সালে বাংলাদেশিদের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। স্থানীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯০ টাকা হিসাবে), যা কমপক্ষে ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের (দেশের) পরিশোধিত মূলধনের সমান।

২০১৮ সালে এ সঞ্চয় ছিল ৫ হাজার ৫৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ১৩২ কোটি টাকা কমেছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে আলোচ্য বছরে দেশটির আমানত কমেছে।

তবে পাচার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।  এমনকি আমানত হিসাবে কার কত অর্থ আছে, তা-ও জানা যায়নি। এসব তথ্য কখনই প্রকাশ করে না এসএনবি।তবে দেশের ক্রান্তিলগ্নে এই টাকার স্বদেশে উপস্থিতি বড্ড প্রয়োজন। দেশের টাকা দেশে ফিরিয়ে আনতে তাই সরকার কৌশলী ভুমিকায় উদ্যোগ নেয়ার দাবী সাধারন জনগনের।

ক্রাইম ডায়রি/অর্থ/কালিম