সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ওয়েবিল ও সিটিং সার্ভিস চালুঃ বিআরটিএ'র অভিযান

"বিশেষ করে রাজধানীর বসিলা টু উত্তরা ভায়া মিরপুর রুটে আগের মতই নিয়ম করে ওয়েবিল ও সিটিং নামের ফিটিংস সার্ভিস চালু আছে। ভাড়া ডাবল এবং প্রতিবাদ করলে গাড়ি থামিয়ে নামিয়ে দেবার হুমকি!!"

সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ওয়েবিল ও সিটিং সার্ভিস চালুঃ বিআরটিএ'র অভিযান
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

সরেজমিনে এই রুটের একাধিক গাড়িতে ডামি জার্নি করে দেখা যায় ওয়েবিল আগের মতই স্বাক্ষরিত হচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টদায়ক হলো লোকাল গাড়ির যত স্টপেজ দেয় তার বেশি ওয়েবিল স্বাক্ষরের কথা বলে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিস্পেষনের শীর্ষে রয়েছে এই রুটের ফিটিংস সার্ভিস গাড়িগুলো

মোঃ হেলাল উদ্দিন ও ইমরান হোসেন,সরেজমিন সংবাদঃ

ওয়েবিল এবং সিটিং সার্ভিসের নামে প্রতারণায় অতিষ্ঠ ছিল রাজধানীবাসী। শুধু রাজধানী নয় দেশের সকল মহানগর এমনকি জেলাগুলোতেও এই নৈরাজ্যের ধারাবাহিকতা ছিল। বঙ্গকন্যা ও সোনার বাংলার কারিগর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ সোনার বাংলায় কোন জুলুম ও গনউৎপাত থাকবে না।

এরই ধারাবাহিকতায় সিটিং সার্ভিস ও ওয়েবিলের নামে চরম লোকাল গাড়ির পকেটকাটিং বিজনেস বন্ধে কর্তৃপক্ষের নির্দশ আসে দেশে কোথায়ও সিটিং সার্ভিস থাকবেনা। 

নভেম্বর ১৪,২০২১ইং রোববার হতে এ নির্দেশনা কার্যকর হবার কথা। সেই সূত্রে, রাজধানীর কোথাও সিটিং ও গেটলক বাস বন্ধ ছিল; কোথাও আবার সিটিং ও গেটলক বাস চলেছে। যেসব বাস সিটিং সার্ভিস হিসেবে চলেছে সেগুলোতে আগের মতোই বেশি ভাড়া আদায় করা হয়েছে। যেগুলো সিটিং ও গেটলক সার্ভিস থেকে লোকাল বাসে পরিণত হয়েছে সেগুলোতেও সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় হয়।

এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে রোববার সারা দিনই বাকবিতণ্ডা হয়েছে পরিবহণ শ্রমিকদের। মালিকদের ঘোষণা অনুযায়ী রোববার থেকে রাজধানীতে সিটিং ও গেটলক সার্ভিস বন্ধ থাকার কথা ছিল। এদিকে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে অভিযান পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এদিন ২৪৭টি বাসের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সিটিং সার্ভিসের স্টিকার লাগানো থাকায় ঢাকায় দুটি বাসকে আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। 

রাজধানীর বসিলা  থেকে উত্তরাগামী প্রজাপতি, পরিস্থান,তেতুলিয়া কিংবা অভিজাত পরিবহন এ জুলুমের শীর্ষে। ১৫ ই নভেম্বর, ২০২১ইং সোমবার সরেজমিনে এই রুটের একাধিক গাড়িতে ডামি জার্নি করে দেখা যায় ওয়েবিল আগের মতই স্বাক্ষরিত হচ্ছে। সবচেয়ে কষ্টদায়ক হলো লোকাল গাড়ির যত স্টপেজ দেয় তার বেশি ওয়েবিল স্বাক্ষরের কথা বলে দাঁড়িয়ে যাত্রী নিস্পেষনের শীর্ষে রয়েছে এই রুটের ফিটিংস সার্ভিস গাড়িগুলো।

ভাড়া আগের মতোই ৪৫ টাকা নিয়েছে।  বিআরটিএ’র চার্ট দেখতে চেয়ে ঝামেলা করলে দু’একজনের  কাছ থেকে ৩৫ টাকা নিয়েছে। একই বাসে কারও কাছ থেকে ৪৫ টাকা, আবার কারও কাছ থেকে ৩৫ টাকা নেওয়া নিয়ে অনেক যাত্রী হইচই করেন। চালক বাস রাস্তায় বন্ধ করে যাত্রী নামিয়ে দিতে উদ্যত হন। তিনি বলেন, বাসের কোথাও বিআরটিএ নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট নেই। পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভাড়া আদায় হয়েছে।

ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ৭ নভেম্বর বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু রাজধানীতে সিটিং সার্ভিস ও গেটলক সার্ভিসের নামে মালিকদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। এর পরই গত বুধবার ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি সিটিং সার্ভিস ও গেটলক সার্ভিস বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। রোববার থেকে তা কার্যকরের কথা। এদিন মালিকদের ওই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি।

পরিবহণ শ্রমিকরা জানান, সিটিং সার্ভিস চালালে তাদের বেশি লাভ হয়। ভাড়াও বেশি পাওয়া যায়। আসন অনুযায়ী যাত্রী তুলেই দ্রুত গন্তব্যে যাওয়া যায়। কিন্তু লোকাল সার্ভিস হিসাবে চালালে ভাড়া কম ওঠে। যাত্রীদের সঙ্গে বেশি কথা বলতে হয়।

বিকল্প অটোসার্ভিস নামের একটি বাসের চালক আলমগীর বলেন, ফার্মগেট থেকে গুলিস্তান আগে ১০ টাকা ভাড়া নিতাম। সরকার ভাড়া বাড়ানোর পর ১৫ টাকা নিতাম। এখন যাত্রীরা ১০ টাকার বেশি দিতে চায় না। এ নিয়ে হেলপারকে মারধরও করতে চায়। তিনি বলেন, সবসময় গাড়িভর্তি যাত্রী হয় না। সিটিং সার্ভিসে চললে সারা দিনই মোটামুটি ভরপুর যাত্রী থাকে। তার মতে, সিটিং সার্ভিস তুলে দেওয়ায় তাদের ক্ষতি হয়েছে। যাত্রীরা ভাড়া কম দিচ্ছে।

এদিকে বাড়তি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ এবং বাসের গায়ে সিটিং সার্ভিস লেখা থাকায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে ২৪৭টি বাস ও মিনিবাসের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বিআরটিএ। এসব বাসের মধ্যে ১৯৮টি ডিজেল ও ৪৯টি সিএনজি চালিত বাস। ওই ২৪৭টি বাসকে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে এখনও বেশিরভাগ গাড়িতে কোন জালানি মার্কিং করা হয়নি।

ক্রাইম ডায়রি/ নগর-মহানগর