সরকারি দফতরগুলো দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়নে চেষ্টা করেনা : দুদক চেয়ারম্যান

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই বছরে দুদক ১ হাজার ৩৫৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ ও ৬৯৫টি মামলা করেছে। একই সঙ্গে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা ও ৫০৬ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়।

সরকারি দফতরগুলো দুদকের সুপারিশ বাস্তবায়নে চেষ্টা করেনা : দুদক চেয়ারম্যান

বার্ষিক প্রতিবেদনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ১০ টি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ৬ টি, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১০ টি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য খাতে ১৩টি এবং প্রাণিসম্পদ খাতে দুর্নীতির ২৮টি উৎসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকৌশলী আয়াতুস সাইফ মুনঃ

বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজদের আতংকের অপর নাম দুদক। প্রতিষ্ঠার পর হতে কিছু নখদন্তহীন অবস্থায় থাকলেও কয়েক বছরে দুদক যথেষ্ঠ শক্তিশালী ও কার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। দুদকের শক্তিশালী কর্মকান্ডে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি অনেকটাই কমে এসেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রতিবছরই বিভিন্ন সরকারি দপ্তরকে দুর্নীতির উৎস দেখিয়ে সুপারিশ দেয় সংস্থাটি।

কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হয় না বলে অভিযোগ করেছেন দুদকের চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ। সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে মার্চ ২১, ২০২২ইং সোমবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। 

এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষণের এখতিয়ার নেই জানিয়ে মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের। এটা তারা করছে কী না, তা মনিটরিং করা আমাদের এখতিয়ারে নেই।’

এর আগে গতকাল রোববার রাষ্ট্রপতির কাছে দুদকের বার্ষিক প্রতিবেদন জমা দেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান। প্রাদুর্ভাব ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় গত বছর প্রতিবেদন দাখিল করেনি সংস্থাটি। সে জন্য ২০২০ ও ২০২১ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন একত্রে পেশ করেছে দুদক।

রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা ওই প্রতিবেদনের সূত্র ধরে মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ জানান, আইন অনুযায়ী দুর্নীতি বন্ধে কাজ করছেন তারা। প্রতিবেদনে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, সাবরেজিস্ট্রি অফিস এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির ৩২টি উৎস চিহ্নিত করা হয়। সরকারি সেবার জন্য ঘুষ, দুর্নীতি, হয়রানি ও দীর্ঘসূত্রতা রোধে দপ্তরগুলোকে আধুনিকায়নসহ ৩৯ দফা সুপারিশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই বছরে দুদক ১ হাজার ৩৫৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ ও ৬৯৫টি মামলা করেছে। একই সঙ্গে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা ও ৫০৬ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়।

এবারের বার্ষিক প্রতিবেদনে দুদক সরকারের পাঁচটি খাতে দুর্নীতির উৎস ও তা প্রতিরোধে সুপারিশমালা দিয়েছে। রোববার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহর নেতৃত্বে পেশ করা বার্ষিক প্রতিবেদনে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে ১০ টি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ৬ টি, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ১০ টি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মৎস্য খাতে ১৩টি এবং প্রাণিসম্পদ খাতে দুর্নীতির ২৮টি উৎসের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অনুরোধ করেছি, এ সুপারিশগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তা নিশ্চিত করতে তারা যেন কাঠামো তৈরি করে দেয়। কারণ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে।’

দুদকের সার্বিক কার্যক্রম প্রসঙ্গে মঈনুদ্দিন আবদুল্লাহ বলেন, ‘করোনার কারণে সরকার সব অফিস আদালত বন্ধ রেখেছে। কখনো অর্ধেক কর্মকর্তা কাজ করেছে। কিন্তু আমাদের অনুসন্ধান ও তদন্ত থেমে নেই। দেখবেন এই সময়ে আমাদের মামলার হার বেড়েছে। আমাদের কমিশনের উদ্দেশ্য হলো মামলার দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং কোয়ালিটি রিপোর্ট দেওয়া।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) জহিরুল হক, কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান, মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান, মহাপরিচালক এ কে এম সোহেল, পরিচালক মীর জয়নুল আবেদন শিবলী, সৈয়দ ইকবাল হোসেন এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহাম্মদ আরিফ।

দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের আলোকে সুপারিশ বাস্তবায়নে আমরা চাপ দিতে পারি না। সেটা দুদকের আগ্রাসন বা ক্ষমতার অপব্যবহার হয়ে যাবে। তবে আপনাদের (সাংবাদিক) কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত থাকলে তা যদি আমাদের কাছে উপস্থাপন করেন, তাহলে আমরা সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারি।’

ক্রাইম ডায়রি// জাতীয়