৫২,৫৪৫ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক কর আদায়

অর্থবছর ২০২০-২১ঃ প্রাতিষ্ঠানিক কর আদায় হয়েছে ৫২,৫৪৫ কোটি টাকা। রিটার্ন জমা দেয়নি এক লাখ ৩৭ হাজার প্রতিষ্ঠান ।

৫২,৫৪৫ কোটি টাকা প্রাতিষ্ঠানিক কর আদায়
২০২০-২১ অর্থবছর শেষে টিআইএনধারী কোম্পানি রয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৯ হাজার ৭৮৫টি। এর বিপরীতে করপোরেট কর আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।
ক্রাইম ডায়রি ডেস্কঃ

twitter sharing button২০২০-২১ কর তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবমিলিয়ে মাত্র ১৭.৮৩ শতাংশ রিটার্ন জমা পড়েছে। । এ বাবদ সবমিলিয়ে  কর্পোরেট কর আদায় হয়েছে  মাত্র ৫২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।  গত এক বছরে ৯০ হাজার প্রতিষ্ঠান নতুন টিআইএন (ট্যাক্স পেয়ার আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) নিয়েছে। এর অধিকাংশেরই আগামী জানুয়ারির মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হবে। তখন রিটার্ন জমার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরিসংখ্যানে এমন চিত্র উঠে এসেছে । সম্প্রতি আয়কর নীতি বিভাগ করপোরেট কর আদায় সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনটি এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছে। সেখানে ৮ বছরের টিআইএনধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা, রিটার্ন জমার সংখ্যা ও কর আদায়ের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর শেষে টিআইএনধারী কোম্পানি রয়েছে এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৭টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৯ হাজার ৭৮৫টি। এর বিপরীতে করপোরেট কর আদায় হয়েছে ৫২ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে টিআইএনধারী কোম্পানি ছিল ৭৭ হাজার ৮২০টি। রিটার্ন জমা দিয়েছে ২৫ হাজার ২৫০টি কোম্পানি। আর করপোরেট কর আদায় হয়েছিল ৪৩ হাজার ৪৯১টি। অর্থাৎ এক বছরে ৯০ হাজার প্রতিষ্ঠান নতুন টিআইএন নিয়েছে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, কর জালের বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে গত বছরের আগস্টে এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) পরিচালক শব্বির আহমেদের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। ওই টাস্কফোর্স প্রথমে মাঠপর্যায়ে টিআইএনধারী কোম্পানি করদাতার তথ্য এবং পরবর্তীকালে যৌথ মূলধনি কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তর (আরজেএসসি) থেকে নিবন্ধন নেওয়া প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই করে যেসব প্রতিষ্ঠানের টিআইএনের তথ্য পাওয়া যায়নি, সেসব প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলকে টিআইএন ইস্যু করতে বলেছে। মূলত এ কারণেই এক লাফে টিআইএনধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক লাখ ৩৭ হাজারে উন্নীত হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের আয়কর বিভাগের এক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকরা নিয়মমাফিক কর দিতে চায় না। আবার দিলেও কর ফাঁকি দিতে জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। ব্যাংক ঋণ পেতে এবং কর ফাঁকি দিতে দুটি আর্থিক বিবরণী তৈরি করেছে, এমন শতাধিক প্রতিষ্ঠানের সন্ধান পাওয়া গেছে। পর্যায়ক্রমে এসব আর্থিক বিবরণী অনুমোদনকারী সিএ ফার্ম ও প্রতিষ্ঠানের মালিককে তলব করা হবে।

জানা গেছে, বিগত অর্থবছরে ২৯ হাজার কোম্পানি আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছে। পক্ষান্তরে পেশাদার হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সদস্যরা বছরে ১৬ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করেন। তাহলে বাকি ১৩ হাজার প্রতিষ্ঠান রিটার্নের সঙ্গে কোন সংস্থা বা ব্যক্তির তৈরি আর্থিক বিবরণী জমা দেওয়া হচ্ছে? এগুলো সবই জাল। এই জালিয়াতি বন্ধে আইসিএবির ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন সিস্টেমে (ডিভিএস) আর্থিক বিবরণী যাচাই করে রিটার্ন গ্রহণে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত বছরের সব প্রতিষ্ঠানের রিটার্ন জমা পড়েনি। আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত অনেক প্রতিষ্ঠান রিটার্ন জমা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, রিটার্ন জমার সংখ্যা আরও বাড়বে।

প্রাতিষ্ঠানিক করদাতারা অর্থবছর (জুলাই-জুন) এবং বর্ষপঞ্জিকা (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) হিসাবে রিটার্ন জমা দিয়ে থাকে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বর্ষপঞ্জিকা অনুসরণ করে। অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসে আর্থিক বছর শেষ হয়। এজাতীয় প্রতিষ্ঠানকে জুনের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হয়। আর অন্য কোম্পানিগুলোর আর্থিক বছর শেষ হয় জুনে। এজাতীয় প্রতিষ্ঠানকে জানুয়ারির মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে হয়। আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, আর্থিক বছর শেষ হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে রিটার্ন জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক করদাতাদের কাছ থেকে করপোরেট কর আদায়ে এনবিআরের সাম্প্রতিক কার্যক্রম প্রশংসাযোগ্য। তবে একদিনে বা রাতারাতি এই বিপুলসংখ্যক কোম্পানি কর ফাঁকি দেওয়ার সংস্কৃতির চর্চা যেমন শুরু করেনি, তেমনই স্বল্পসময়ের ব্যবধানেও তারা এই অনৈতিক সুযোগ গ্রহণ করছে না। সংশ্লিষ্ট অনেকেরই যোগসাজশে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনার পাশাপাশি এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াগত প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা চিহ্নিত করে তা দ্রুত নিরসন জরুরি।

ক্রাইম ডায়রি//জাতীয়