পূর্বাচলে হচ্ছে নতুন সিটি কর্পোরেশন

পূর্বাচল প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা উত্তর বা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী আলাদা সিটি করপোরেশন গঠনের কথা বলা হয়েছে।

পূর্বাচলে হচ্ছে নতুন সিটি কর্পোরেশন
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

শাহাদাত হোসেন রিটনঃ

রাজধানীর পূর্বাচল বৃহৎ এক আধুনিক ঢাকা। বৃহৎ এই নতুন নগরীর   রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা এবং আলাদা সাংগঠনিক কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে তাই স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ চায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। তাই এই এলাকার জন্য একটি আলাদা সিটি করপোরেশন গঠনের পক্ষে মত দিয়েছে রাজউক। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনাও সংস্থাটির পক্ষ থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে সম্প্রতি দেওয়া হয়েছে। 

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বৈঠকে রাজউকের পক্ষ থেকে পূর্বাচল প্রকল্প নিয়ে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। জবাবে মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবের যৌক্তিকতাসহ নতুন করে প্রস্তাব দেওয়ার জন্য রাজউককে নির্দেশনা দেয়। 

কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বজলুল হক হারুন, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন এবং ফরিদা খানম। বিশেষ আমন্ত্রণে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। 

রাজধানীর ওপর থেকে জনসংখ্যার চাপ কমাতে সরকার নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ছয় হাজার ১৫০ একর জমি নিয়ে ১৯৯৫ সালে পূর্বাচল নতুন শহর গড়ে তোলার প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে পাঁচবার নকশা পরিবর্তন এবং আটবার মেয়াদ বাড়ালেও এখনো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। এখানে ৩০টি সেক্টরে ২৬ হাজার প্লটে ২৬ হাজার আবাসিক ভবন গড়ে ওঠার কথা।

বৈঠকে উপস্থাপিত প্রস্তাবে বলা হয়, উন্নয়নমূলক কাজের রক্ষণাবেক্ষণ পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের আওতাধীন। টিআই (টাউন ইম্প্র“ভমেন্ট) আইন অনুযায়ী রাজউক নির্মিত যে কোনো অবকাঠামো সিটি করপোরেশনের বরাবর হস্তান্তরের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প এলাকাটি সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত না হওয়ায় তা হস্তান্তর করতে পারছে না সংস্থাটি। এ কারণে বাস্তবায়িত প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছে রাজউক। এ কারণে প্রকল্পটির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ বা করপোরেশন গঠনের প্রস্তাব করেছে তারা। রাজউক তার প্রস্তাবনায় এই কর্তৃপক্ষ গঠনে ঢাকা উত্তর বা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামো অনুসরণ করতে বলেছে।

পূর্বাচল প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঢাকা উত্তর বা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী আলাদা সিটি করপোরেশন গঠনের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অন্তর্র্বর্তীকালীন সময়ে পূর্বাচলের রক্ষণাবেক্ষণের কাজটি রাজউকের সাংগঠনিক কাঠামোর অধীনে নিজস্ব জনবলে বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ের পাঠাবে রাজউক।

জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা বলেন, যখন পূর্বাচল প্রকল্পটি নেওয়া হয়, তখন আমি নবীন কর্মকর্তা ছিলাম। অনেকেই আগ্রহ নিয়ে প্লট কিনেছিল। কিন্তু এত সময়ে  ফলাফল হয়নি। পরে কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন বলেন, অনেক দিন হয়ে গেছে। এ প্রকল্প নিয়ে মানুষের অনেক স্বপ্ন ছিল। বাস্তবায়ন কতটুকু তা জানতে চান।

এদিকে পূর্বাচল প্রকল্পের কাজের অগ্রগতির বিষয়ে জানানো হয়েছে বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে। আর পানির পাম্প বসানো হচ্ছে। এখন শুধু নিরাপত্তা দিকটি রয়েছে। সেখানে থানা নির্মাণের জন্য জায়গা আছে, যা সংশ্লিষ্টদের দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, প্রথমে পুলিশ ফাঁড়ি হবে। পরে পূর্ণাঙ্গ থানা হবে। ইতোমধ্যে পূর্বাচলে ৩০০টি বাড়ির নকশা অনুমোদন করা হয়েছে।

বৈঠকে রাজউকের পক্ষ থেকে দেওয়া আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ক্ষেত্রে নীতিমালা কঠোরভাবে মানা হচ্ছে। এখানে স্বামী-স্ত্রীর নামে আলাদা প্লট বরাদ্দের সুযোগ নেই। তথ্য পেলে একজনের নামের প্লট বরাদ্দ বাতিল করা হয় বা হবে।

ক্রাইম ডায়রি/রাজধানী