ইহা একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানঃ রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা গচ্চা

মাদ্রাসা সুপারের শ্বশুর সভাপতি, ননদ শিক্ষক, দুই দেবর নাইট গার্ড ও পিয়ন। এ ছাড়া অন্যরাও নিকটাত্মীয়। এতে বাউফলের আলোচিত এই মাদ্রাসাটি পরিণত হয়েছে একটি পারিবারিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

ইহা একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানঃ রাষ্ট্রের লাখ লাখ টাকা গচ্চা
ছবি-ক্রাইম ডায়রি

মাদ্রাসার রেজিস্টার খাতায় কাগজে-কলমে ২৫০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে তা নেই এ মাদ্রাসাটিতে। অথচ হাজিরা খাতায় প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখানো হয় ২০-৩০ জন

পটুয়াখালী জেলা সংবাদদাতাঃ

পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলা একটি মাদ্রাসার ঘটনায় হতবাক পুরো দেশ। কারন পরিবার তন্ত্র কায়েম করে একটি অচল মাদ্রাসা হতে লাখ লাখ টাকা অপচয় করা হচ্ছে রাষ্ট্রের।  

মাদ্রাসা সুপারের শ্বশুর সভাপতি, ননদ শিক্ষক, দুই দেবর নাইট গার্ড ও পিয়ন। এ ছাড়া অন্যরাও নিকটাত্মীয়। এতে বাউফলের আলোচিত এই মাদ্রাসাটি পরিণত হয়েছে একটি পারিবারিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

সুত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর বাউফলের সূর্যমণি ইউনিয়নের পূর্ব ইন্দ্রকুল ফিরোজা কামাল বালিকা দাখিল মাদ্রাসা নামের এই প্রতিষ্ঠানটিতে হাতেগোনা কয়েকজন শিক্ষার্থী রয়েছে। তবু এই পরিবারটি সরকারের কাছ থেকে হাজার হাজার টাকা বেতন পাচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার পূর্ব ইন্দ্রকুল গ্রামের স্থানীয় আবদুল মোতালেব তাঁর বাড়ির পূর্ব পাশে নিজস্ব জমিতে ১৯৯৪ সালে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিচালনা পরিষদের কার্যকরী পদে তিনিই এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি।

পুত্রবধূ মাহফুজা বেগম সুপার, ইবতেদায়ি শিক্ষক পদে ছোট মেয়ে নুরজাহান। নাইট গার্ড সিদ্দিকুর রহমান ও পিয়ন পদে রয়েছেন খায়রুল ইসলাম। ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটি ইবতেদায়ি ও দাখিল মাদ্রাসায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

এর পরই প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের অনুমতি দেয় মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর। মাদ্রাসার রেজিস্টার খাতায় কাগজে-কলমে ২৫০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও বাস্তবে তা নেই এ মাদ্রাসাটিতে। অথচ হাজিরা খাতায় প্রতিদিন গড়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখানো হয় ২০-৩০ জন।

এ মাদ্রাসায় ইবতেদায়ি বিভাগে ৪ জন, দাখিলে ৫ জন শিক্ষক, অফিস সহকারী একজন, একজন আয়া, একজন নাইট গার্ড ও একজন দপ্তরিসহ মোট ১৩ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। তাঁরা প্রতি মাসে ২ লাখ ৮ হাজার টাকা বেতন তুলছেন।

সরেজমিনে সকাল ১০টার দিকে মাদ্রাসাটিতে গিয়ে দেখা গেছে, দাখিল টেস্ট পরীক্ষায় মাত্র ১০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এ ছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে দু'জন, অষ্টম শ্রেণিতে দু'জন এবং দশম শ্রেণিতে দু'জন শিক্ষার্থী থাকলেও নবম শ্রেণিতে কোনো শিক্ষার্থী নেই।

এ মাদ্রাসার আইরিন বেগম নামের একজন শিক্ষক ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর হাজিরা খাতায় শেষ স্বাক্ষর করেছেন। এরপর এ পর্যন্ত ৬ মাসে তাঁর আর স্বাক্ষর নেই। অথচ প্রতি মাসের বেতন উত্তোলন করছেন তিনি।

আইরিন বেগম দম্ভ প্রকাশ করে বলেন, মাদ্রাসাটির একটি খুঁটি অবশিষ্ট থাকলেও তিনি বেতন পাবেন।

মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আবদুল মোতালেবের দাবি, তাঁর মাদ্রাসায় পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষার্থী কম আসছে। মাদ্রাসাটির শিক্ষক-কর্মচারী একই পরিবারের সদস্য হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান ও তাঁর এলাকার শত্রুরা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস করার জন্য এসব অভিযোগ করছেন।
মাদ্রাসা সুপার মাহফুজা বেগমের দাবি, আগে মাদ্রাসাটিতে অনেক শিক্ষার্থী ছিল। ২০০৯ সালের পর শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দোষ-ত্রুটি সব মাদ্রাসাই আছে। এ প্রতিষ্ঠানটি তাঁর শ্বশুরের জমিতে। টাকা-পয়সা সবই তাঁর। আর ঘরের লোক চাকরি করতে পারবেন না এ বিধান কোথায় আছে?

এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলে কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত থাকতে পারে না। মাদ্রাসাটির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ক্রাইম ডায়রি // অপরাধ জগত