চট্টগ্রাম বন্দরে বিপজ্জনক পণ্যভর্তি ২৪১ কনটেইনারঃ দ্রুত না সরালে দুর্ঘটনার আশংকা

এখানে ড্রাম, কার্টন ও বস্তাবোঝাই বিপজ্জনক পণ্য পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে আছে সালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, থিনার, সোডিয়াম সালফেট, মিথানল, ইথাইল হেক্সানল, নাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, ফার্মাসিউটিক্যালসের কাঁচামাল, রং তৈরির কাঁচামাল, টেক্সটাইল কাঁচামালসহ নানা ধরনের রাসায়নিক পণ্য। যার বেশির ভাগই দাহ্য ও বিস্ফোরকজাতীয়।

চট্টগ্রাম বন্দরে বিপজ্জনক পণ্যভর্তি ২৪১ কনটেইনারঃ দ্রুত না সরালে দুর্ঘটনার আশংকা
ছবি-অনলাইন হতে সংগৃহীত

বছরের পর বছর এ ধরনের পণ্য বন্দরে পড়ে থাকার মূল কারণ হচ্ছে নিলামে ধীরগতি ও চিঠি চালাচালিতে সময়ক্ষেপণ হওয়া। নিলাম ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, প্রচলিত নিলাম প্রথার বাইরে গিয়ে প্রয়োজনে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এসব পণ্য বন্দর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।

হোসেন মিন্টু, চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিসঃ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর সতর্ক  অবস্থায় রয়েছে  চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকাতায় বিভিন্ন ডিপোতে পড়ে থাকা কনটেইনারের ধরণ পরীক্ষা ও খোঁজ খবর নিচ্ছে তারা। সম্প্রতি, বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা ২৪১ কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্য সরাতে তোড়জোড় শুরু করেছে তারা। এসব পণ্যের মধ্যে দাহ্য ও বিস্ফোরকজাতীয় রাসায়নিক পদার্থ থাকায় যে কোনো সময় তা বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এসব পণ্যে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের দুর্ঘটনা ঘটায় এমন সতর্কতা।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে কাস্টমস বিভাগ বিপজ্জনক পণ্যবাহী কনটেইনারগুলো নিলামে বিক্রি বা ধ্বংসের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে রাসায়নিকের কয়েকটি চালান স্পট নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে। বন্দর থেকে ডেলিভারি না নেওয়া পণ্য নিলাম বা ধ্বংস করার দায়িত্ব চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদ এবং সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,  বন্দরে পড়ে থাকা বিপজ্জনক পণ্যের মধ্যে ২০-২৫ বছর আগের পণ্যও রয়েছে। তবে ১০-১৫ বছর ধরে পড়ে রয়েছে এমন পণ্যই বেশি। অনেক কনটেইনার জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বেরিয়ে এসেছে ভেতরের মালামাল, যা বন্দরের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বছরের পর বছর এ ধরনের পণ্য বন্দরে পড়ে থাকার মূল কারণ হচ্ছে নিলামে ধীরগতি ও চিঠি চালাচালিতে সময়ক্ষেপণ হওয়া। নিলাম ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা বলছেন, প্রচলিত নিলাম প্রথার বাইরে গিয়ে প্রয়োজনে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এসব পণ্য বন্দর থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।

 বন্দরে আসা পণ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ডেলিভারি না নিলে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আইনি জটিলতা না থাকলে কাস্টম এসব পণ্য নিলামে তোলে। তবে আইনি জটিলতা, নিলামে বিক্রি না হওয়াসহ নানা কারণে খালাস না নেওয়া পণ্য দীর্ঘদিন বন্দরের বিভিন্ন শেড ও ইয়ার্ডে পড়ে থাকে, যা বন্দরের স্বাভাবিক পণ্য হ্যান্ডলিং বাধাগ্রস্ত করে। এসব পণ্যের মধ্যে বিভিন্ন সময় আমদানি করা বেশকিছু কেমিক্যাল, দাহ্য ও তেজস্ক্রিয় পদার্থ রয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ সূত্র জানা গেছে, তারা বন্দর থেকে ধ্বংস ও নিলামযোগ্য বিপজ্জনক পণ্যের একটি তালিকা পেয়েছে। তাতে দেখা যায়, এ মুহূর্তে ২৪১ কনটেইনার বোঝাই এজাতীয় পণ্য বন্দরের ভেতরে রয়েছে, যা আমদানির পর আর ডেলিভারি নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে যেসব পণ্য ব্যবহার উপযোগী, সেগুলো নিলামে তোলা হবে। আর ব্যবহার অনুপযোগী পণ্যগুলো ধ্বংস করা হবে। তবে রাসায়নিক ধ্বংসের প্রক্রিয়াটি বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তাই আপাতত দ্রুত নিলামের দিকেই মনোযোগী হয়ে উঠেছে কাস্টমস।

জমে থাকা ঝুঁকিপূর্ন ৪৪টি কনটেইনার ধ্বংসযোগ্য পণ্য রয়েছে। যা ধ্বংস করা জরুরী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের ১৪টি শেড। এরমধ্যে P’ শেডে বিপজ্জনক পণ্যগুলো রাখা হয়। এখানে ড্রাম, কার্টন ও বস্তাবোঝাই বিপজ্জনক পণ্য পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে আছে সালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, সালফিউরিক অ্যাসিড, ফায়ার এক্সটিংগুইশার, থিনার, সোডিয়াম সালফেট, মিথানল, ইথাইল হেক্সানল, নাইট্রিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম অক্সাইড, ফার্মাসিউটিক্যালসের কাঁচামাল, রং তৈরির কাঁচামাল, টেক্সটাইল কাঁচামালসহ নানা ধরনের রাসায়নিক পণ্য। যার বেশির ভাগই দাহ্য ও বিস্ফোরকজাতীয়। এসব পণ্য সরানো না হলে যে কোনো সময় অগ্নিকাণ্ড কিংবা বিস্ফোরণ থেকে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থাকে।

কাস্টম হাউজ সূত্রে জানা গেছে, জমে থাকা ঝুঁকিপূর্ন ৪৪টি কনটেইনার ধ্বংসযোগ্য পণ্য রয়েছে। যা ধ্বংস করা জরুরী। এছাড়া কয়েকটি চালান রয়েছে, যেগুলো কাস্টম হাউজের নথিতে নিলামের পর ডেলিভারি হয়েছে। কিন্তু বন্দর বলছে ডেলিভারি হয়নি। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের উপকমিশনার (নিলাম) আলী রেজা হায়দার বলেন, সীতাকুণ্ডের ঘটনার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়ে কিছু রাসায়নিক দ্রত সরানোর ব্যবস্থা করতে বলেছেন। আমরা এরই মধ্যে দুই কনটেইনার হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড স্পট নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করেছি। অন্য যেসব বিপজ্জনক পণ্য রয়েছে, সেগুলোও নিলাম বা ধ্বংসের প্রক্রিয়া চলছে।  তারা বলছেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ  ২৬৫ কনটেইনার বিপজ্জনক পণ্যের তালিকা দিয়েছিল। সেখান থেকে ২৪টি কনটেইনার ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। এখনো রয়ে গেছে প্রায় ২৪১টি।

ক্রাইম ডায়রি/সুত্রঃ সরেজমিন ও অনলাইন মিডিয়া/হোসেন মিন্টু