বিগত কয়েক মাসে ডাঃ মুরাদের মধ্যে পরিবর্তন দেখা গেছে- তথ্য মন্ত্রী

আওয়ামিলীগের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা ডক্টর হাসান মাহমুদ ঠান্ডা মাথার একজন নেতা। তারই মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ। মন্ত্রণালয়ের কাজে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখলেও বিগত কয়েক মাসে তার মধ্যে ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে বলে জানান আওয়ামিলীগের দুঃসময়ের নেতা ডক্টর হাসান মাহমুদ।

বিগত কয়েক মাসে ডাঃ মুরাদের  মধ্যে পরিবর্তন দেখা গেছে- তথ্য মন্ত্রী
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

তিনি একের পর এক মন্তব্য করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অবস্থা তৈরি করেছেন। একজন উচ্চ শিক্ষিত  মানুষ এবং মন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এমন  বক্তব্যে সবাই হতবাক হয়েছিল। চলনে বলনে  মনে হতো তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নেই

মুন্সী  মোঃ আল ইমরানঃ

হঠাৎই ভাইরাল হয়েছিলেন তিনি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন একজন মানুষ তিনি যিনি নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলাম নিয়ে জনবিরুপ মন্তব্য করেছিলেন। তার এ মন্তব্য যে সময়োপযোগী নয় তা জন বিদ্বেষ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার পোস্টের কমেন্ট বক্সে দেখা গেছে। 

তিনি একের পর এক মন্তব্য করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অবস্থা তৈরি করেছেন। একজন উচ্চ শিক্ষিত  মানুষ এবং মন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে এমন  বক্তব্যে সবাই হতবাক হয়েছিল। চলনে বলনে  মনে হতো তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নেই।

আওয়ামিলীগের দুঃসময়ের কান্ডারি স্মার্ট ও ঠান্ডা মাথার মন্ত্রী ডক্টর হাসান মাহমুদের মন্তব্য ও এমনই। তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত কয়েক মাস ধরে ডা. মুরাদ হাসানের মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে । ডা. মুরাদ হাসানের কিছু বক্তব্য সরকার এবং দলকে বিব্রত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

 

হাছান মাহমুদ বলেন, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডা. মুরাদ হাসান আমাকে সবসময় সহযোগিতা করতেন। তবে বিগত কয়েক মাস ধরে তার মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে ।

তার কিছু বক্তব্য ও  ঘটনা আসলেও সরকারকে এবং  দলকে বিব্রত করেছে। সেই কারণে বঙ্গকন্যা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে পদত্যাগ করার জন্য বলেছেন। সে অনুযায়ী তার সাইন করা পদত্যাগপত্র একটু আগে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নিয়ে গেছে তার পিআরও। তার সবগুলো ঘটনা, পুরো বিষয়টি আসলে দুঃখজনক।

মন্ত্রী বলেন,  প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি আমাকে সবসময় সহযোগিতা করায়  তাকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি ও  মঙ্গল কামনা করছি।

মুরাদ হাসানের মধ্যে আপনি কী পরিবর্তন দেখেছিলেন জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, দেখুন, আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি আগে যে রকম ছিলেন। গত তিন মাস ধরে একটা পরিবর্তন মনে হচ্ছিল। বিভিন্ন ঘটনা ও কর্মকাণ্ডে আমরা সেটি মনে হচ্ছিল।

আপনি কী মনে করেন না মুরাদ হাসান মানসিকভাবে সুস্থ নন- এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মুরাদ হাসান আমাদের সবসময় সহযোগিতা করেছেন। এজন্য তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই। তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আমাদের কোনো কাজে কখনও বাধা হয়ে দাঁড়াননি। আমি তার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল এবং তিনি যাতে ভবিষ্যতে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন সেই কামনা করি।

মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য।  তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের কারণে মুরাদ সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রীর কিছু অডিও-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও সারা দেশে দলের নেতাকর্মীরা তার ওপর বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় বিএনপিসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা ডা. মুরাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবারের মধ্যেই পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। 

এদিকে তিনি যে পদত্যাগ পত্র দিয়েছিল সেখানেও ভুল ধরা পড়ায় মনে হচ্ছে তিনি সত্যিই গুরুতর মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন।

ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের আবেদন করেছেন। ডিসেম্বর ৭,২০২১ইং মঙ্গলবার দুপুরে সাড়ে ১২টায় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে পাঠান প্রতিমন্ত্রী মুরাদ। যদিও তিনি নিজে সচিবালয়ে আসেননি।  

মুরাদ হাসান ২০১৯ সালের ১৯ মে তথ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করলেও পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন ১৯ মে ২০২১! এ বিষয়টি সংশোধন করে আবার পদত্যাগপত্র লেখা হচ্ছে বলে সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে। 
 
প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে মুরাদ হাসান লেখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্ব-শ্রদ্ধেয় সালাম নেবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গত ১৯ মে ২০২১ তারিখের স্মারকমূলে আমাকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আমি আজ ৭ ডিসেম্বর ২০২১ সাল থেকে ব্যক্তিগত কারণে স্বেচ্ছায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে ইচ্ছুক।

এমতাবস্থায়, আপনার নিকট বিনিত নিবেদন, আমাকে অদ্য ৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার লক্ষ্যে পদত্যাগপত্র গ্রহণে আপনার একান্ত মর্জি কামনা করছি।

ক্রাইম ডায়রি // জাতীয়