তেলের মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানঃ সরকারের প্রশংসায় জনগন

রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মুল্য বেড়েছে এমন অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়ার পূর্বেই দাম বাড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে মজুত শুরু করেছে একদল খাদ্য সন্ত্রাসী।

তেলের মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযানঃ সরকারের প্রশংসায় জনগন

পাইকারি পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ১৭৩ টাকা দরে যা নির্ধারিত দরের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি। এছাড়া তিনি তেল বিক্রি করে কাউকে রশিদ প্রদান করছেন না

শাহাদাত হোসেন রিটনঃ 

চারিদিক তেলের বাজারে আগুন। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পায়তারা করছে খাদ্য সন্ত্রাসীরা। বেশি দামে বিক্রির আশায় মজুত করে রাখছে ভোজ্য তেল। আর এই মজুতদারদের বিরুদ্ধে জোরেসোরে মাঠে নেমেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অভিযান চলছে রাজধানী জুড়ে এবং চলছে সারাদেশেই। মহানগরী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার সৈয়দ ফারুক রোড। এখানে অবস্থিত ভোজ্যতেলের পাইকারি ব্যবসায়ী মেসার্স আবুল খায়ের ট্রেডার্স থেকে ১২ হাজার লিটার  খোলা সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

গত এক বছরে কয়েক দফায় দাম বেড়েছে তেলের। সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে খুচরা পর্যায়ে বোতলজাত সয়াবিনের লিটার ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিনের লিটার ১৪৩ এবং পাম তেলের লিটার ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

কিন্তু সম্প্রতি বিশ্ববাজারে দাম বেড়েছে এমন অজুহাতে আবারও প্রতি লিটার তেলে ১২ টাকা দাম বাড়ানোর দাবি জানায় ভোজ্যতেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীরা। গত ১ মার্চ থেকে দাম বাড়াতে চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাতে সায় দেননি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রমজানের আগে তেলের দাম বাড়ানো যাবে না। তবে মন্ত্রীর এই নির্দেশের পর সয়াবিন তেলের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়েছে। একদিনের মধ্যেই খোলা সয়াবিন ও পাম তেল বাজার থেকে উদাও হয়ে গেছে। গত দুই তিন দিন ধরে বোতলজাত তেলের পরিমাণও কমে গেছে বাজারে।

সয়াবিনের লিটার ১৬৮ টাকা, খোলা সয়াবিনের লিটার ১৪৩ এবং পাম তেলের লিটার ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়

এমন প্রেক্ষাপটে বাজারে কারা তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে সেই বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তদারকিতে নেমেছে। যেখানে মজুত পাওয়া যাবে কিংবা ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হবে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে হুঁমিয়ারি দেওয়া হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গত তিন মাসের ভোলজ্যতেলের আমদানি,বিপণন ও মজুতের তথ্য চেয়ে তেল পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোকে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অভিযানের বিষয়ে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ওই ব্যবসায়ী (আবুল খায়ের ট্রেডার্স) পাইকারি পর্যায়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন ১৭৩ টাকা দরে যা নির্ধারিত দরের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি। এছাড়া তিনি তেল বিক্রি করে কাউকে রশিদ প্রদান করছেন না।

কত দামে পরিশোধনকারীদের কাছ থেকে তেল কিনেছেন সেই রশিদও দেখাতে পারেননি। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্যের মূল্য তালিকা টানানোর কথা থাকলেও তার প্রতিষ্ঠানে তা পাওয়া যায়নি। এসব অপরাধে তাকে জরিমানা এবং তেল জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা হয়েছে। 

এদিকে শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ কয়েকটি এলাকায় এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৮০০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কাওরানা বাজারের কিচেন মার্কেটের পাইকারি দোকানগুলোতে অভিযান চালায় খাদ্য অধিদপ্তর।  এখানে অনেক দোকান সিলগালা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে শাস্তি ও জড়িমানা করা হয়।

ক্রাইম ডায়রি //অর্থ -বানিজ্য