শোক দিবসের মঞ্চ করাকে কেন্দ্র করে জেলা পরিষদ প্রশাসকের সঙ্গে ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতির হাতাহাতি

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শামসুল হক ভোলা মাস্টার শোক দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরিতে বাঁধা প্রদান এবং স্থানীয় নেতাকে মারধোরের বিষয়টি আমরা কেন্দ্রে জানিয়েছি।

শোক দিবসের মঞ্চ করাকে কেন্দ্র করে জেলা পরিষদ প্রশাসকের সঙ্গে ইউনিয়ন আ.লীগ সভাপতির হাতাহাতি
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

অনলাইন  ডেস্কঃ

শোকের মাস চলছে। পুরো জাতি যেখানে শোক মুহ্যমান সেখানে শোক দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি করাকে কেন্দ্র জেলা পরিষদের প্রশাসক ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতির মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা সত্যিই আওয়ামী ঘরানার মানুষদের নিকট অবাক করার মতো। অনেকেই বলছেন হাইব্রিড ও অনু্প্রবেশকারীদের জন্যই আজ এ অবস্থা দেখতে হয়।
 
জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের আয়োজনে জাতীয় শোক দিবসের মঞ্চ তৈরিতে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে দুইপক্ষের মাঝে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জেলা পরিষদ প্রশাসকের সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতির হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে স্থানীয় বিক্ষুব্ধরা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাস্টারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে ও বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা তাকে ঘিরে রাখে। একপর্যায়ে দুইপক্ষের মারমুখী অবস্থানে থাকায় পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে পুলিশি প্রহরায় শোক দিবসের মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়। এ নিয়ে চরমাধবদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দুইটি পক্ষের মাঝে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, চরমাধবদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আজ শুক্রবার শোক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্থানীয় মাধবদিয়া ময়েজউদ্দিন স্কুল মাঠ ব্যবহারের জন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়াল সরদার লিখিত আবেদন করেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শামসুল হক ভোলা মাস্টারের কাছে। তবে তিনি স্কুল অভ্যন্তরের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেননি। তিনি স্কুলের খেলার মাঠে অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা বলেন।

আগষ্ট ২৬ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা স্কুলের ভেতরে মঞ্চ তৈরি করতে গেলে শামসুল হক ভোলা মাস্টার তাদের বাধা প্রদান করেন। একপর্যায়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলামের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল হক ভোলা মাষ্টারের হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এসময় সেখানে থাকা নেতাকর্মীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এসময় শামসুল হকের বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দিতে থাকে। দুইপক্ষের মাঝে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

কোতোয়ালি থানার ওসি এমএ জলিল, পরিদর্শক (তদন্ত) আবদুল গাফফারের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ দুইপক্ষের সঙ্গে বসে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেন। আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ স্কুলের ভেতরে এবং বাইরে মারমুখী অবস্থান নিলে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। প্রায় দুই ঘণ্টা পর দুইপক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

 মমিনখার হাটের নিজস্ব চেম্বারে নেতাকর্মীদের নিয়ে কথা বলেন শামসুল হক । তিনি বলেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও চরমাধবদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তুহিনুর রহমান মণ্ডল তাদের সমর্থকদের নিয়ে অন্যত্র চলে যান। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে স্কুল অভ্যন্তরেই মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্কুল মাঠ ব্যবহারের অনুমতি না দেওয়ায় আগে থেকেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা শামসুল হকের উপর ক্ষিপ্ত ছিল। সকালে একপ্রকার জোর করে মঞ্চ তৈরি করতে গেলে তাদের বাঁধা দেওয়া হয়। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সভাপতির উপর হামলা করা হয়। পরে দুইপক্ষের নেতা-কর্মীদের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একটি পক্ষের লোকজন স্কুলের ভেতরে ঢুকে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির চেয়ার ভাংচুর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

চরমাধবদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, শামসুল হক শোক দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরিতে বাঁধা প্রদান করেন। এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময় শামসুল হক তাকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে থাকেন। সেখানে থাকা উপস্থিত কর্মীরা তাকে রক্ষা করেন। তিনি বলেন, শোক দিবসের মঞ্চ তৈরিতে যে বাধা সৃষ্টি করে এবং প্রতিবাদ করলে মারতে পারে সে কখনো আওয়ামী লীগ নেতা হতে পারে না। তাকে অবিলম্বে জেলা পরিষদের প্রশাসক থেকে বরখাস্ত করা হোক।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শামসুল হক ভোলা মাস্টার শোক দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরিতে বাঁধা প্রদান এবং স্থানীয় নেতাকে মারধোরের বিষয়টি আমরা কেন্দ্রে জানিয়েছি। দ্রুতই তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা পরিষদের প্রশাসক শামসুল হক মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, যারা স্কুল মাঠটি ব্যবহারের অনুমতি নিতে আবেদন করেছেন তিনি স্কুলের বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত। তাছাড়া স্কুলের শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে স্কুলের অভ্যন্তরে মাঠটি ব্যবহারের অনুমতি না দিয়ে স্কুলের বড় খেলার মাঠে অনুষ্ঠানের কথা বলা হয়। তাছাড়া জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে বাঁধা দেবার প্রশ্নই উঠে না।

কোতোয়ালি থানার ওসি এমএ জলিল বলেন, শোক দিবসের অনুষ্ঠানের মঞ্চ তৈরি নিয়ে একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যাটির সমাধান করেছি। 

ক্রাইম ডায়রি/রাজনীতি