সাফল্যগাঁথা কপিরাইট অফিস

প্রচারহীনতার কারনে মানুষ কপিরাইট সম্পর্কে জানতে পারেনি । তাছাড়া এর যথেষ্ঠ ব্যবহারও ছিলনা। মেধাস্বত্ব কি এবং এর অধিকার কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয়, মানুষ এ বিষয়ে তেমন কিছু জানতও না। মানুষ রাজধানীর আগারগাঁয়ে অবস্থিত কপিরাইট অফিসের সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে ভাবত এর কাজটা কি?

সাফল্যগাঁথা কপিরাইট অফিস

প্রচারহীনতার কারনে মানুষ কপিরাইট সম্পর্কে জানতে পারেনি । তাছাড়া এর যথেষ্ঠ ব্যবহারও ছিলনা। মেধাস্বত্ব কি এবং এর অধিকার কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয় মানুষ এ বিষয়ে তেমন কিছু জানতও না। মানুষ রাজধানীর আগারগাঁয়ে অবস্থিত কপিরাইট অফিসের সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে ভাবত এর কাজটা কি?

আতিকুল্লাহ আরেফিন রাসেলঃ
কপিরাইট সেটা আবার কি? এইতো কয়েক বছর আগেও এমন ধারনাই ছিল মানুষের মনে। এমনকি কপিরাইট আইন পড়ে আইনজীবি হয়েছেন এমন অনেক আইনজীবিও কপিরাইটের বিশাল জগত সম্পর্কে উন্নত ধারণা রাখতেন না।
সৃজনশীল ব্যক্তি তাঁর মেধা প্রয়োগ করে যা কিছু সৃজন করেন তাই মেধাসম্পদ। মেধাসম্পদের মালিকানা নিবন্ধনের লক্ষ্যে কপিরাইট অফিস ১৯৬৭ সালে  প্রতিষ্ঠিত হয়। কপিরাইট অফিস একটি আধা-বিচার বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান। এর কার্যাবলী কপিরাইট আইন-২০০০ (২০০৫ সালে সংশোধিত) ও  কপিরাইট বিধিমালা ২০০৬ মোতাবেক পরিচালিত হয়। এ অফিস যে প্রধান ৪টি কাজ করে থাকে  তা হল : ১) সৃজনশীল মেধাস্বত্বের কপিরাইট রেজিস্ট্রেশন প্রদান ; ২) আপিল মামলা নিষ্পত্তিতে কপিরাইট বোর্ডকে সহায়তা প্রদান ; ৩) পাইরেসি বন্ধকরণে টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা  ও ৪) World Intellectual Property Organization, WIPO এর ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন। 
কপিরাইট অফিস সাহিত্যকর্ম, নাট্যকর্ম, সংগীতকর্ম, রেকর্ডকর্ম, শিল্পকর্ম, চলচ্চিত্র বিষয়ককর্ম, বেতার সম্প্রচার, টেলিভিশন সম্প্রচার, কম্পিউটার-সফটওয়্যারকর্ম ইত্যাদি নিবন্ধন করে থাকে। মেধাসম্পদের আর্থিক অধিকার হস্তান্তরযোগ্য। কপিরাইট নিবন্ধন করা হলে সৃজন কর্মের নৈতিক ও আর্থিক অধিকার অর্থাৎ মালিকানা সংরক্ষণ সহজ হয়। কপিরাইট নিবন্ধন আইনানুযায়ী বাধ্যতামূলক না হলেও, সৃজন কর্মের মালিকানা নিয়ে আইনগত জটিলতা দেখা দিলে ‘কপিরাইট নিবন্ধন সনদ’ প্রমাণপত্র হিসেবে বিজ্ঞ আদালতে ব্যবহৃত হতে পারে। কপিরাইট অফিস বাংলাদেশ সর্বদা আন্তরিক সেবা প্রদান করে থাকে। 
বাংলাদেশে কপিরাইট আইন প্রথম তৈরি হয় ১৯৭৪ সালে। পরবর্তীতে ২০০০ সালে নতুন একটি কপিরাইট আইন করা হয়, যা পরে ২০০৫ সালে সংশোধন হয়। এই আইনে সাহিত্যকর্ম, চলচ্চিত্র, সঙ্গীত, শিল্পকর্ম ও সাউন্ড রেকর্ডিং কপিরাইট আইনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। পরবর্তীতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অনেক কিছুই নতুন করে অন্তভুক্ত হয়েছে।

প্রচারহীনতার কারনে মানুষ কপিরাইট সম্পর্কে জানতে পারেনি । তাছাড়া এর যথেষ্ঠ ব্যবহারও ছিলনা। মেধাস্বত্ব কি এবং এর অধিকার কিভাবে সংরক্ষণ করতে হয় মানুষ এ বিষয়ে তেমন কিছু জানতও না। মানুষ রাজধানীর আগারগাঁয়ে অবস্থিত কপিরাইট অফিসের সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে ভাবত এর কাজটা কি? দুই একজন যারা জানতেন, তারা কোন বিষয়ে কপিরাইট করতে গিয়ে মনে ভীতি নিয়ে প্রবেশ করতেন এরপর কাটাগলা নিয়ে বের হতেন। ধর্ণা দিতেন মতিঝিলের ল’ফার্ম গুলোতে। দিনের পর দিন ঘুরে, অনেক টাকা ব্যয় করে ভুলে ভরা একটি অনুমোদন নিয়েই সন্তুষ্ঠ থাকতেন। 
আর এখান হতেই গল্পের শুরুঃ
সালটা ২০১৬। কপিরাইট অফিসে যোগদান করেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের যুগ্ম-সচিব ও কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী। এক এলোমেলো কর্মহীন অফিসের অন্ধকারে প্রবেশ করে আলোর মুখ দেখানোর কারিগর। তার কর্ম অসাধারণ।  কপিরাইট অফিসকে এক অনন্য মর্যাদায় উন্নীত করার পিছনে তার মেধা ও অক্লান্ত পরিশ্রম অনস্বীকার্য। তিনিই একমাত্র ব্যাক্তি যিনি কপিরাইট জগতে অসাধারণ কিছু সমস্যার সমাধান করে সারা বিশ্বের জন্য নজীর স্থাপন করেছেন। ই-কমার্স ও নিউজ পোর্টালের লাইসেন্স এ কপিরাইট এর ব্যবহার ও অনস্বীকার্য প্রয়োজনীতা কর্তৃপক্ষের নজরে এনেছেন এবং থমকে থাকা কপিরাইট অফিসকে চরম গতিশীল করে বহুমুখী সমস্যার সমাধান করেছেন। সরকারি সম্পদের সুষম ব্যবহার ও কপিরাইট কর্মকর্তা -কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে   জনসেবার অনন্য নজীর স্থাপন করেছেন। 
সাফল্য গাঁথা তার কর্মদক্ষতা-০১ঃ 
মানুষ জানতই না কপিরাইট অফিসের কার্যক্রম সম্পর্কে। তিনিই প্রথম কপিরাইট অফিসের কার্যক্রম ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এফবি পেইজ, গ্রুপ খোলার উদ্যোগ নেন এবং কপিরাইট ইন্সপেক্টর আতিককে দায়িত্ব দেন। ইন্সপেক্টর আতিক তার নির্দেশনায় মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে মেধাস্বত্ব নিয়ে কাজ করে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার এমন সব সাংবাদিকদের একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেন। পাশাপাশি তিনি নিয়মিত সকল ঘটনাপ্রবাহের প্রেস রিলিজ প্রেরণ করে গণমাধ্যমকে অবহিত করেন।
 জাফর রাজা চৌধুরী  দায়িত্ব নেবার পর নিয়মিত ও ঘনঘন সভা, সেমিনার এর আয়োজন করেন। যেখানে উপস্থিত করেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, প্রবীন ও নবীন আইনজীবি, সাংবাদিক ও অন্যান্য শ্রেণীপেশার মানুষকে।
আভ্যন্তরীন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। নিজ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সময় ও আচরণগত প্রশিক্ষণ দিয়ে এক অভাবনীয় পরিবর্তন আনেন। যার গল্প পূর্বে সেবা নিত এবং বর্তমানেও নিচ্ছে এমন লোকেদের মুখে মুখে। ক্রাইম ডায়রির সম্পাদক ও প্রকাশক এবং সেলিনা ল’ এন্ড কনসালটেন্সি ফার্মের সিইও এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটি কাজের জন্য তিনি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ঘুরেছেন এবং সিস্টেমের মারপ্যাচে পড়ে দীর্ঘ হয়রানির শিকার হয়েছেন। পূর্বে এই অফিসে আচরণটা পর্যন্ত ভাল পাওয়া যেতনা কিন্তু এখন যেকোন কাজের জন্য গেলে সর্বোচ্চ সেবা ও পাশাপাশি দ্রুত কাজ পাওয়া যায়। কর্মকর্তাদের আচরনেও এক অভাবনীয় পরিবর্তনে কথা জানান তিনি। পাশাপাশি  কপিরাইট অফিসের সফলতা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং তিনি দাবী করেন, এ সফলতার কারিগর বর্তমান রেজিষ্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী।
সাফল্য গাঁথা তার কর্মদক্ষতা-০২ঃ
 অনলাইন নিউজপোর্টাল ও ই কমার্স সাইট ব্যবসা যারা করেন তারা ধারনাই রাখেন না যে, প্রাথমিক ভাবে কোন্ অনুমোদনে ওয়েবসাইটগুলি চালাবেন এবং নিজের স্বত্ব সংরক্ষণ করবেন। তিনি কপিরাইট আইনে স্পষ্ট উল্লেখিত ধারাগুলো জনসন্মুখে প্রচারের ব্যবস্থা করেন। প্রতিটি সমসাময়িক অধিদপ্তরে, মন্ত্রণালয়ে এবং এ সংক্রান্ত যে কোন সেমিনার, সভা, সিম্পোজিয়াম ও কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেন । এখন অনলাইন ব্যবসায়ীরা জানতে পেরেছে তাদের অধিকার রক্ষায় কার শরণাপন্ন হতে হবে। ফেইসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেলের জয়-জয়কারের এ যুগে তিনি কপিরাইট আইনের লাইসেন্স নিতে ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করেছেন এবং লাইসেন্স প্রদান করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। উন্নতবিশ্বের মতো বাংলাদেশের মানুষ এখন তাদের অধিকার রক্ষায় মেধাস্বত্ব আইনের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পেরেছে। সম্প্রতি, বাংলাদেশী একটি ই-কমার্স ব্যবসায়ীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশী ওয়েবসাইট নকলকারী ব্রাজিলিয়ান একটি ই কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিয়েছেন।  একই নামের ওয়েবসাইট সেই দেশের কপিরাইট অফিসকে অবহিত করে আন্তর্জাতিক চুক্তি মোতাবেক ই-কমার্স সাইটটি বন্ধ করার ব্যবস্থা করে আন্তর্জাতিকভাবে নজীর স্থাপন করেছেন। যা বিশ্বের সকল দেশের জন্য অন্যতম দৃষ্টান্ত ।
সাফল্য গাঁথা তার কর্মদক্ষতা-০৩ঃ 
তিনি যোগদানের বছর এসে দেখলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তেমন কোন কাজ নেই। ২০১৬ সালে যোগদানের সময় কপিরাইট অফিসে টোটাল কাজ ছিল ৫৭৫টি। এ অবস্থা দেখে তিনি ব্যথিত হলেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ডেকে তার বেদনার কথা জানালেন। সবাইকে কাজের জন্য  সময়ানুবর্তী ও মনোযোগী হয়ে রাষ্ট্রের এ প্রতিষ্ঠানকে কার্যকরী প্রতিষ্ঠান করার লক্ষ্যে তার কর্মচাঞ্চল্যের স্রোতের সঙ্গে মিশে যাবার আহবান জানালেন। তার প্রচেষ্টায় পরবর্তী বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে লাইসেন্স প্রদানের সংখ্যা-৬২১, ২০১৮ সালে ১৭৯৬, ২০১৯ সালে ৩২০৫, ২০২০ সালে ৩৬২১, ২০২১ সালে ৩৬৯৮টি। তিনি তার অক্লান্ত পরিশ্রম দিয়ে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়ার এক অদম্য চেষ্টা অব্যহত রেখেছেন।
সাফল্য গাঁথা তার কর্মদক্ষতা-০৪ঃ
"মাসুদ রানা" সিরিজের লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন কে না জানে? কিন্তু এই ধারণাকে পাল্টে দিয়ে নজীর সৃষ্টি করেছে কপিরাইট অফিস। মাসুদ রানা সিরিজের লেখক শেখ আবদুল হাকিমের আবেদনের প্রেক্ষিতে জাফর রাজা চৌধুরীর একক প্রচেষ্টায় "মাসুদ রানা" সিরিজের কিছু বইয়ের লেখক যে শেখ আব্দুল হাকিম তা আদালতে প্রমাণিত হয়েছে এবং শেখ আব্দুল হাকিম তার মেধার মূল্যায়ন পেয়েছেন। যা দেশের মেধাস্বত্ব জগতে এক অন্যতম দৃষ্টান্ত। 

ফেইসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেলের জয়-জয়কারের এ যুগে তিনি কপিরাইট আইনের লাইসেন্স নিতে ব্যবহারকারীদের উৎসাহিত করেছেন এবং লাইসেন্স প্রদান করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী  সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভায় কপিরাইটস অফিসে আসা ০৭ টি জনগুরুত্বপূর্ন ও আলোচিত আপীল ও অভিযোগসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির বিষয়ে বোর্ডের সকল সদস্যের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মিস. সাবিহা পারভীন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জাতীয় আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মোঃ দাউদ মিয়া (এনডিসি), সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মিস. ফারজানা সুলতানা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব জনাব মোঃ তবিবুর রহমান এবং রেজিস্ট্রার অফ কপিরাইটস জনাব জাফর রাজা চৌধুরী  এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় মোট ০৭টি আপীল মামলার বিষয়ে আলোচনা ও শুনানী গ্রহণ করা হয়। তন্মধ্যে বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা নামক গ্রন্থ, ইমপ্রেস টেলিফিল্ম লিঃ প্রযোজিত চলচ্চিত্র "নিঝুম অরন্যে" এবং ফকির আনোয়ার হোসেন মন্টুশাহ রচিত লালন সংগীত প্রথম খন্ড, দ্বিতীয় খন্ড ও তৃতীয় খন্ডের কপিরাইট স্বত্ব সংক্রান্ত আপীল মামলা উল্লেখযোগ্য। 
আমাদের দেশের ৬০, ৭০ এবং ৮০’র দশকের শ্রোতাদের নিকট খুবই জনপ্রিয় বেশ কিছু পুরনো লোকগান, আঞ্চলিক গান বা দেশাত্মবোধক গান বিলুপ্তির পথে। প্রায়শ: এরুপ কিছু গানের রচয়িতা, সুরকার কিংবা কন্ঠশিল্পীর পরিচিতি সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কপিরাইট আইন অনুযায়ী উক্ত গানগুলো ব্যবহারের জন্য গানের প্রকৃত গীতিকার, সুরকার বা তাদের বৈধ উত্তরাধিকারীর অনুমতির প্রয়োজন হয়। কিন্তু অনেক সময়ই অনুমতির জন্য প্রনেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। 
এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে এ গানগুলোর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে একটি বিশেষ সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উক্ত সেল কর্তৃক দেশের সকল লোক গান ও দেশাত্মবোধক গান সংরক্ষণ এবং প্রকৃত গীতিকার, সুরকার ও প্রথম কণ্ঠশিল্পীর নামসহ গানগুলো আরকাইভের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়াও যে সকল গানের প্রণেতা বা তাদের বৈধ উত্তারাধিকারীগণকে খুঁজে পাওয়া না গেলে তাদের পক্ষে এ সেল আইনানুগ শর্তসাপেক্ষে আবেদনকারীকে লাইসেন্স প্রদান করবে।
এছাড়া সভায় বহুল আলোচিত ‘যুবতী রাধে’ শীর্ষক গানের কপিরাইট বিষয়ক রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে সিদ্ধান্ত দেয়া হয় যে, অঙ্গীকারনামায় যুবতী রাধে গানটি মৌলিক হিসেবে দাবী করে অসত্য তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে কপিরাইট আইনের ৮৮  ও ৮৯ ধারা লঙ্ঘন করার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণীত হওয়ায় সরলপুর ব্যান্ডের অনুকূলে রেজিস্ট্রেশনকৃত “যুবতী রাধে” শীর্ষক গানটির কপিরাইট সনদ বাতিল করা হলো।

মেধাস্বত্বে কপিরাইট আইনের ব্যবহার সন্তোষজনক অবস্থায় আনার জন্য তার চেষ্টা অনস্বীকার্য। মৌলিক সৃষ্টিকর্মের মালিকানা বা স্বত্ব নিশ্চিত করাই হচ্ছে কপিরাইট। সাহিত্য, শিল্পকর্ম, সংগীত, চলচ্চিত্র, স্থাপত্য, আলোকচিত্র, ভাস্কর্য, লেকচার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, নকশাসহ যেকোনো ধরনের মৌলিক সৃষ্টিই কপিরাইটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। বিপুল আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছিলেন চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত সংশ্লিষ্ট নির্মাতারা। কপিরাইট অফিসের বর্তমান সাফল্যগাঁথা কর্মকান্ডে তারা এখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী ক্রাইম ডায়রিকে বলেন, ‘সাহিত্য, শিল্পকর্ম, সংগীত, চলচ্চিত্র, সফ্টওয়্যার ইত্যাদি স্রষ্টা বা রচয়িতার অনুমতি ছাড়া কপি, পুনরুৎপাদন, অনুবাদ, রূপান্তর বা অধিযোজন করা কপিরাইট ধারণা, আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি, দেশীয় আইন, নৈতিকতা ও ইতিবাচক বোধের চরম পরিপন্থী।  একটি কোম্পানির বিভিন্ন পণ্য বা সার্ভিস যদি আইনগতভাবে সংরক্ষিত না থাকে, তাহলে সেগুলো যে কেউ ইচ্ছামতো তৈরি করতে পারবে। ফলে সে কোম্পানির ব্যবসা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে দরকার হয় ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি আইনের প্রয়োগ।’

বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার অব কপিরাইটস জাফর রাজা চৌধুরী ক্রাইম ডায়রিকে বলেন, ‘সাহিত্য, শিল্পকর্ম, সংগীত, চলচ্চিত্র, সফ্টওয়্যার ইত্যাদি স্রষ্টা বা রচয়িতার অনুমতি ছাড়া কপি, পুনরুৎপাদন, অনুবাদ, রূপান্তর বা অধিযোজন করা কপিরাইট ধারণা, আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি, দেশীয় আইন, নৈতিকতা ও ইতিবাচক বোধের চরম পরিপন্থী।

বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউ­ওয়াইপিও) সদস্য।  এ সংস্থাটির সাধারণ নিয়মকানুন তাই আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর ধারাবাহিকতায় পেনাল কোড অনুযায়ী কপিরাইট আইন  যেকোনো বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির ওপর হস্তক্ষেপ রোধ নিশ্চিত করে। তবে, বিভিন্ন শিল্প-ব্যবসায় ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ও কপিরাইট আইনের প্রয়োগ তুলনামূলকভাবে নতুন হলেও জাফর রাজা চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট অগ্রণী ভুমিকা পালণ করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন ।

কপিরাইট বিষয়ক রেগুলেটরি হিসেবে কপিরাইট অফিসকে আগের অবস্থা থেকে আরও শক্তিশালী করার প্রস্তাব, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে কার্যকারিতা বাড়াতে শাস্তি ও জরিমানা বাড়ানো, টাস্কফোর্স গঠন ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার  প্রস্তাব করে তিনি কপিরাইট অফিসকে জনস্বার্থের জন্য এক অসাধারন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। 
ক্রাইম ডায়রি//শিল্প সংস্কৃতি