অবশেষে বিতর্কিত মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ বঙ্গকন্যা ও লৌহমানবী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
পাপ নাকি বাপকেও ছাড়েনা। আর পাপী ব্যাক্তির স্থান আওয়ামীলীগে নেই। ক্যাসিনো হতে দলকানা ভুঁইফোড় কিংবা হঠাৎ আসা বিশাল মাপের নেতা; সবাই একে একে বঙ্গকন্যা ও লৌহমানবী শেখ হাসিনার কাছে ধরা পড়ে পালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শেখ হাসিনার চোখ ফাঁকি দেয়া অত সহজ নয়। ডাঃ মুরাদ তারই সর্বশেষ জলন্ত উদাহরন।
এরাইতো আওয়ামীলীগকে ঝোঁপ বুঝে কোঁপ দিয়ে তরী ডুবাবে। এই মিশনেই এরা আওয়ামীলীগার সেজেছে। এরা উভয় দলেই বেইমান। কি আওয়ামীলীগ, কি জামাত কিংবা বিএনপি। সব দলেরই এরা বিষফোঁড়া, এরা জাতীয় বেইমান।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ডিসেম্বর ৮,২০২১ইং মঙ্গলবারের মধ্যেই ডা. মুরাদকে পদত্যাগের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।তিনি জানান, সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সাথে ডা. মুরাদের বিষয়ে তার কথা হয়। আলোচনার পর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা থেকে ডা. মুরাদকে পদত্যাগের নির্দেশ দিলে তিনি এই বার্তা রাত ৮টায় প্রতিমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেন।
জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) ও একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারে তাকে প্রথমে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে ২০১৯ সালের মে মাসে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে নিযুক্ত হন তিনি।
গত কয়েকদিন থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত মন্তব্যের ফলে আলোচনায় ছিলেন মুরাদ হাসান। বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে বিভিন্ন মহল থেকেই তাকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করার দাবি উঠছিলো।
সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, তার ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বেগম জিয়ার নাতনি ও তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ।পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
চিকিৎসাশাস্ত্রের ডিগ্রিধারী মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) আসন থেকে প্রথমবার সংসদে যান নবম সংসদে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে দ্বিতীয়বার জয়ী হওয়ার পর তাকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ দফায় সরকার গঠনের পাঁচ মাসের মাথায় ২০১৯ সালের মে মাসে স্বাস্থ্য থেকে সরিয়ে মুরাদকে তথ্য প্রতিমন্ত্রী করা হয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া জীবনবৃত্তান্ত অনুযায়ী, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় ২০০০ সালে ছাত্রলীগের কলেজ শাখার সভাপতি হন মুরাদ হাসান। তিন বছর পর আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা পান।
৪৭ বছর বয়সী মুরাদ তার নিজের এলাকা জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক’। তার বাবা অ্যাডভোকেট মতিয়র রহমান তালুকদার ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নাতনিকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য সম্প্রতি মুরাদ হাসানের পদত্যাগের দাবি তোলে বিএনপি।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই একটি টেলিফোন আলাপের অডিও ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে একজন অভিনেত্রীর সঙ্গে অশালীন ভাষায় কথা বলতে এবং হুমকি দিতে শোনা যায় এক ব্যক্তিকে। বলা হচ্ছে, ওই ব্যক্তি, মুরাদ হাসান, যদিও এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানা যায়নি।
এরই মধ্যে রোববার মধ্যরাতে চলচ্চিত্র অভিনেতা মামনুন হাসান ইমন ও অভিনেত্রী মাহিয়া মাহির সাথে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর এক ফোনালাপের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ফোনালাপে প্রতিমন্ত্রী আপত্তিকর ভাষা ব্যবহার করেন। সংবাদমাধ্যমকে ভাইরাল হওয়া সেই অডিওর সত্যতা নিশ্চিত করে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ওই ফোনালাপ দুই বছর আগের। একটি সিনেমার মহরত অনুষ্ঠানের আগের রাতে প্রতিমন্ত্রী তাকে ফোন করেছিলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে মুরাদ হাসানের সমালোচনা করতে গিয়ে বলেন, “শুনেছি সে না কি একসময় ছাত্রদল করত। দুঃখের কথা, দুর্ভাগ্যের কথা। আগে সে ছাত্রদল করতো। সে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্রচার সম্পাদক ছিল। পরবর্তীকালে সে ছাত্রলীগে জয়েন করেছে। ধিক্কার দিই আমি তাকে। শেইম।” ফখরুলের ওই দাবি এবং প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করার নির্দেশের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে সাংসদ মুরাদ হাসানকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।
ক্রাইম ডায়রি/জাতীয়