করোনায় আইভারমেকটিন কার্যকর বলে জানালো আইসিডিডিআরবি

Ivormectin is effective in corona, said ICDDRB

করোনায় আইভারমেকটিন কার্যকর বলে জানালো আইসিডিডিআরবি

শাহাদাত হোসেন রিটনঃ

গবেষণার আওতায় ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ২২ জনকে শুধুমাত্র মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন (১২মিগ্রা দিনে একবার ৫ দিন), ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের (১২মিগ্রা) সাথে ডক্সিসাইক্লিন (২০০মিগ্রা ডক্সিসাইক্লিন প্রথম দিন এবং পরবর্তীতে ১০০মিগ্রা দিনে দু’বার ৪ দিন) এবং ২৩ জনকে প্লাসিবো (ওষুধ সদৃশ বস্তু) দিয়ে চিকিৎসার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তুলনা করে দেখেছে। 

অনেক  নিরাশার মাঝেও আশার আলো জাগালো আইসিডিডিআরবি।   যেসব রোগীর করোনার মৃদু সংক্রমণ রয়েছে তাদের সুস্থতায় আইভারমেকটিন কার্যকর হয় একটি পরীক্ষা চালিয়ে তা প্রমাণ করেছে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআরবির ।

অ্যান্টি-প্যারাসাইটিক ওষুধ আইভারমেকটিনের পাঁচ দিনের কোর্স এসব রোগীদের ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স এবং রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতি দেখা গেছে। ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ জন করোনা রোগীর ওপর এই গবেষণা পরিচালিত হয়। সোমবার আইসিডিডিআরবি আয়োজিত একটি সেমিনারে এসব তথ্য জানানো হয়।  

রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত এ সেমিনারে ‘হাসপাতালে ভর্তি নিশ্চিতভাবে মৃদু কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আইভারমেকটিন অথবা আইভারমেকটিনের সাথে অ্যান্টিবায়োটিক ডক্সিসাইক্লিন ব্যবহারের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা’ বিষয়ে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়।  

সেমিনারে জানানো হয়, আইসিডিডিআরবি এই র‌্যান্ডোমাইজড, ডাবল-ব্লাইন্ড, প্লাসিবো-কন্ট্রোলড ট্রায়াল, যা একটি দৈবচয়ণ ভিত্তিক গবেষণা।  যেখানে প্রয়োগকৃত ওষুধ বিষয়ে পরীক্ষক ও অংশগ্রহণকারীর কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা থাকে না। ওষুধের পরিবর্তে ওষুধ সদৃশ বস্তু ব্যবহার করা হয়। এরকম একটি গবেষণার আওতায় ঢাকার তিনটি হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৬৮ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ২২ জনকে শুধুমাত্র মুখে খাওয়ার আইভারমেকটিন (১২মিগ্রা দিনে একবার ৫ দিন), ২৩ জনকে এক ডোজের আইভারমেকটিনের (১২মিগ্রা) সাথে ডক্সিসাইক্লিন (২০০মিগ্রা ডক্সিসাইক্লিন প্রথম দিন এবং পরবর্তীতে ১০০মিগ্রা দিনে দু’বার ৪ দিন) এবং ২৩ জনকে প্লাসিবো (ওষুধ সদৃশ বস্তু) দিয়ে চিকিৎসার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা তুলনা করে দেখেছে। 

গবেষণাটি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অংশগ্রহণে সম্পন্ন হয়েছে। 

গবেষণায় দেখা গেছে, ১৪ দিনের মাথায় ৫ দিন ধরে শুধুমাত্র আইভারমেকটিন পাওয়া রোগীদের ৭৭ শতাংশ রোগীর সার্স-কোভ-২ এর ক্লিয়ারেন্স হয়েছে। অর্থাৎ আরটি-পিসিআর টেস্টে তারা কোভিড-১৯ মুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছেন।  অন্যদিকে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৬১ শতাংশ এবং প্লাসিবো পাওয়া ৩৯ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স দেখা যায়। 

এছাড়াও দেখা যায় যে, ৩য় দিনে শুধু আইভারমেকটিন পাওয়া দলে ১৮ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হয়েছে। অন্যদিকে আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন পাওয়া ৩ শতাংশ এবং প্লাসিবো দলে ৩ শতাংশ রোগীর ভাইরাল ক্লিয়ারেন্স হতে দেখা যায়, এবং ৭ম দিনে এটি ছিল যথাক্রমে ৫০ শতাংশ, ৩০ শতাংশ এবং ১৩ শতাংশ। 

গবেষণায় দেখা গেছে, আইভারমেকটিন ও ডক্সিসাইক্লিন এবং প্লাসিবো চিকিৎসার তুলনায় ৫ দিনের আইভারমেকটিন চিকিৎসায় রোগীর ক্লিনিক্যাল অবস্থার উন্নতি ছিল সম্ভাবনাময়। যেখানে রক্তের বিভিন্ন বায়োমার্কারের উন্নতির মাধ্যমে নির্দেশিত সংক্রমণের তীব্রতার মাত্রা কমার লক্ষণ দেখা যায়। শুরু থেকে ৭ দিনের মাথায় শুধুমাত্র ৫ দিন আইভারমেকটিন প্রাপ্ত দলে অন্য দু’টি দলের তুলনায় সি-রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন (সিআরপি) ও ল্যাকটেইট ডিহাইড্রোজিনেস (এলডিএইচ) এবং ফেরিটিন লক্ষণীয়ভাবে কমতে দেখা যায়। মৃদ্যু কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক এবং এর ব্যবহার নিরাপদ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। এই গবেষণার ফলাফলের ওপর একটি প্রবন্ধ ২ ডিসেম্বরের ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকশাস ডিজিজেসে (আইজেআইডি) প্রকাশিত হয়েছে।  

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।  এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ মেডিকেল রিসার্চ কাউন্সিলের (বিএমআরসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বিশেষ অতিথি হিসেবে অনলাইনের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন। আইসিডিডিআরবির ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক ও নিউট্রিশন অ্যান্ড ক্লিনিক্যাল সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র ডিরেক্টর ড. তাহমিদ আহমেদ এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।

আইসিডিডিআরবি-র এন্টারিক অ্যান্ড রেসপিরেটরি ডিজিজিস-এর সিনিয়র ফিজিশিয়ান সায়েন্টিস্ট ড. ওয়াসিফ আলী খান গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। 

তিনি বলেন, যদিও কোনো  উপসংহারে পৌঁছানোর বিবেচনায় এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম। পরবর্তীতে আইভারমেকটিন নিয়ে বড় ধরনের ট্রায়ালের জন্য এই গবেষণালব্ধ জ্ঞান নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি জানান।

ক্রাইম ডায়রি/স্বাস্থ্য