বাবার পথে হাঁটছেন তারেক রহমান
তারেক রহমান বাবার আদর্শকে সারাবিশ্বে ফুটিয়ে তুলতে এবং দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে যে সিদ্ধান্ত নিবেন তা মেনে নিবেন দলের সকল নেতা-কর্মী।

বিএনপিকে রাজধানী সহ দেশের কোথাও দিতে হতোনা মিটিং-মিছিল এবং অনুষ্ঠানের অনুমতি। আবার অনুমতি দিলে লাঠিপেটা করে টিয়ারগ্যাস মেরে সভাস্থল থেকে নেতা-কর্মীদের ধরে মামলা ঠুকে দেয়া হতো। পন্ড করে দেয়া হতো মিটিং-মিছিল।
শাহীন আবদুল বারীঃ
ওয়ান ইলেভেনের দুই বছর এবং আওয়ামী দুঃশাসনের সাড়ে ১৫ বছরে বিএনপি অনেকটাই কোনঠাসা ছিল। নেতা-কর্মীদেরদের মামলা-মকদ্দমা দিয়ে হয়রানি, ঘুম-খুনের শেষ ছিলনা। সরকারের কিছু পা-চাটা প্রশাসনের লোকজন খালি করেছে হাজার হাজার মায়ের বুক। এতিম হয়েছে শিশু সন্তান। তাদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠলেও মন গলেনি নিষ্ঠুর পাষণ্ডদের। বাবাকে ফিরে পেতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়েও ফেরত তো পায়ইনি উপরন্তু মিথ্যা নাটক করা হয়েছে।
বিএনপিকে রাজধানী সহ দেশের কোথাও দিতে হতোনা মিটিং-মিছিল এবং অনুষ্ঠানের অনুমতি। আবার অনুমতি দিলে লাঠিপেটা করে টিয়ারগ্যাস মেরে সভাস্থল থেকে নেতা-কর্মীদের ধরে মামলা ঠুকে দেয়া হতো। পন্ড করে দেয়া হতো মিটিং-মিছিল।বিএনপির চেয়ারম্যান দেশনেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে মামলা দিয়ে সাজাঁ দিতেও কার্পন্য করেনি পতিত সরকার। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হত্যা মামলা সহ বিভিন্ন মামলায় আসামি করে তাকে করা হয় দেশান্তরি।
শুধু তাই নয়, ফখরুদ্দিন-মঈনূদ্দিনের নির্মম নির্যাতনের শিকার হোন তারেক রহমান। নির্যাতন এবং মামলার যাতাকলে পড়ে মায়ের দোয়া নিয়ে পাড়ি জমান লন্ডনে। সেখান থেকেই দলের হাল ধরেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য পুত্র তারেক রহমান। ওয়ান ইলেভেনের সময় ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকোকে হারান। সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত ক্যান্টনমেন্টের বাসাটিও ছাড়তে বাধ্য করে আওয়ামী সরকার। স্ত্রী জুবায়দা রহমানকেও কৌশলে সরকারি চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়। আটকানোর চেষ্টা করা হয় দুদকের জালে। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। কঠিনতম বাস্তবতা এবং নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করে বিএনপি জিয়াউর রহমানের আদর্শের পথে এগুচ্ছে। মাঠ থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মীদেরকে চাঁদাবাজি, দখল বাণিজ্য, মারামারি-হাঙ্গামা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সাংগঠনিকভাবে দল গোছানোর পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে কৌশলী পথে এগোচ্ছে বিএনপি। বিভিন্ন দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলের মতো সরকার ও দল পরিচালনার মধ্যে সীমারেখা টানতে চাইছে বিএনপি। রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে এমন চিত্র দেখা গিয়েছিল দলের মধ্যে। এরই অংশ হিসেবে মহানগর, জেলা ও উপজেলা কমিটি পুনর্গঠনে দলের তরুণ প্রজন্মের ত্যাগী, পরীক্ষিত ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়নের চিন্তা-ভাবনা করছে দলের হাইকমান্ড।
আর সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী ও ২০১৮ সালের দলীয় প্রার্থীদের রাখা হচ্ছে কম গুরুত্বপূর্ণ পদে। সম্প্রতি বিএনপি অনুমোদিত ঢাকা মহানগর বিএনপিসহ ১৩টি মহানগর ও জেলা কমিটি বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে এমন চিত্র।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, আগামী দিনে দল ও সরকারের কর্মকাণ্ডের ভিন্নতা নিরূপণের চেষ্টা করছে বিএনপি। কারণ দলের অনেক সাংগঠনিক কাজ থাকে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এমপি-মন্ত্রীরা যদি আঁকড়ে থাকেন, তাহলে দল ও সরকার উভয়ের কাজে ব্যাহত হয়। তাই কমিটি পুনর্গঠনে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের মহানগর ও জেলা কমিটির শীর্ষ আসনে পদায়ন করা হচ্ছে। আবার যারা দলের আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী, তাদের ছোট পদে বা অনেকে পদেই রাখা হয়নি।
এতে একদিকে বিগত ১৭ বছরের ত্যাগী ও পরীক্ষিত সব নেতার মূল্যায়নের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে জেলা বা মহানগরে মন্ত্রী-এমপিদের একক আধিপত্য কমবে। ইতোমধ্যে দল ও এমপি আলাদা করার ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে দলকে সরকার থেকে পুরোপুরি আলাদা করাও খুব কঠিন কাজ হবে বলে বিএনপির হাইকমান্ড মনে করেন। তবে তারেক রহমান বাবার আদর্শকে সারাবিশ্বে ফুটিয়ে তুলতে এবং দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে যে সিদ্ধান্ত নিবেন তা মেনে নিবেন দলের সকল নেতা-কর্মী।
এ বিষেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম এক নেতা বলেন, এমপিদের দলীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হবে না, এমন কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নির্বাচন কেন্দ্রিক একটি প্রস্তুতি সব সময়ই দলের থাকে। সে অনুযায়ীই এখন দলীয় নেতারা কাজ করছেন। বিশেষ করে দলের দুর্দিনে যারা জেল, জুলুম, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন তাদের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হবে বেশি। এক প্রশ্নবানে বলেন, বিগত সরকার যে সব ভুল করেছে বিএনপি সে পথে হাটবেনা। আমাদের নেতা তারেক রহমান প্রতিটি মুহুর্ত মনিটরিং করছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে যারা দলের সংসদ সদস্য বা মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন, তারা দলের দায়িত্বে থাকতেন না। আবার কেউ একসঙ্গে মন্ত্রী-এমপি ও জেলা বা মহানগরের শীর্ষ পদে থাকতে পারতেন না। বর্তমানে রাজনীতিতে এই চর্চা নেই। তাই জিয়াউর রহমানের উত্তরসূরি তারেক রহমান তার বাবার দেখানো নীতিতেই হাঁটতে চাইছেন। যার ছাপ মহানগর ও জেলা কমিটিতে দেখা গেছে। এবার যাদের বড় পদ-পদবি দেয়া হচ্ছে, আগামীতে তাদের হয়তো এমপির টিকিট দেয়া সম্ভব হবে না।
ঢাকা মহানগরের শীর্ষ নেতার ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে একই চিত্র। যেমন ঢাকার দুই সিটি কর্পেোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী হবেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়াল। আবার শোনা যাচ্ছে, দক্ষিণের রফিকুল ইসলাম মজনু ফেনী থেকে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এসব খবর দলের বাইরের সিদ্ধান্ত। তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই আসল সিদ্ধান্ত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দল যাকে যেখানে যোগ্য মনে করছে, তাকে সেখানে বসানো হয়েছে। এটা দলের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত। এদের মধ্যে অনেকে হয়তো এমপি পদে মনোনয়ন পেতে পারেন, আবার নাও পেতে পারেন।’
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, সিলেট মহানগর, বরিশাল মহানগর, খুলনা, মাগুরা, মেহেরপুর, মৌলভীবাজার, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক বা সদস্যসচিব পদে নতুন মুখের ছড়াছড়ি। তারুণ্য নির্ভরতা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সুদূর পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মূলত এমন উদ্যোগ নিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আবার তিনি সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের জন্য রেখেছেন চমক। যা খুব শিগগিরই জানা যাবে। সব চেয়ে বেশি চমকপ্রদ হবে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন। দলটির কেন্দ্রীয় একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে তারা বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যারা দল করেছেন, তাদের অনেকের বয়স ৭০ বছরের বেশি।
এবার মহানগর ও জেলা কমিটিতে পদ না পেলেও তারাই দলে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী। দীর্ঘ ১৭ বছর তাদের লড়াই-সংগ্রাম মূল্যায়ন করবেন তিনি। অন্যদিকে নতুন প্রজন্মকে আগামীর নেতৃত্বে তৈরি করতে পদ-পদবি দেয়া হচ্ছে। এতে সমাজে নতুন শক্তির সঞ্চার হবে। দল থেকে এমপি আলাদা করার জিয়াউর রহমানের আমলে ফিরে যাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে নেতৃবৃন্দ বলেন, এটা সময়ই বলে দেবে। তাদের মতে, তারেক রহমানের জনপ্রিয়তা এবং ভাবমূর্তি সর্বত্র বাড়ছে। দেশের মানুষ, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম তারেক রহমানকে রাষ্ট্র প্রধানের গুরুদায়িত্বে দেখতে চান।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানের আমলে যারা দলের সংসদ সদস্য ও মেয়র নির্বাচিত হতেন, তারা দলের দায়িত্বে থাকতে পারতেন না। জিয়াউর রহমানের আমলে এই প্র্যাকটিস থাকলেও এখন নেই। দেখা যাক সামনে কী হয়। দলের মধ্যে অনেক কিছু নিয়েই আলোচনা হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে মহাসচিব এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী দলীয় কাজে মনোযোগ দিতে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। দলীয় নির্বাচিত এমপিরা সংসদে জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করবেন, আর দলের নেতারা সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ দেবেন- ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হয়তো সেই চিন্তা করছেন। এই চিন্তা থেকে দলে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। অপর একটি সূত্র বলছে, বাবার নীতি-আদর্শ ধরেই এবার এগুচ্ছেন তারেক রহমান।
১৩টি মহানগর ও জেলা কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রাম-৮। তার আসনে সম্ভাব্যে এমপি প্রার্থী দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। আবার মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমানের নির্বাচনি এলাকা চট্টগ্রাম-১১ আসনে ধানের শীষে প্রার্থী স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী এবং সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী।
কিন্তু এদের দুজনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। কারণ সিলেটে ৬টি আসনে দলের হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন। সিলেট-১ আসনে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদির, সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর লুনা, সিলেট-৩ শফি আহমদ চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সিলেট-৪ আসনে সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী অ্যাডভোকেট জেবুন নাহার সেলিম ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট-৫ আসনে প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী, চাকসুর সাবেক আপ্যায়ন সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন ও সাবেক পৌর মেয়র ইকবাল হোসেন, সিলেট-৬ আসনে ফয়সল আহমদ চৌধুরী।
খুলনা ও মহানগর কমিটিতেও একই চিত্র দেখা গেছে। যারা আগামী দিনের সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী তাদের জেলা ও মহানগর কমিটিতে কম গুরুত্বপূর্ণ পদ দেয়া হয়েছে। খুলনা-১ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আমীর এজাজ খান, খুলনা-২ নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩ রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আজিজুল বারী হেলাল। খুলনা-৫ আসনে সাবেক এমপি ডা. গাজী আবদুল হক ও মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজ, খুলনা-৬ আসনে বর্তমান জেলা কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু। কিন্তু মনিরুজ্জামান মন্টু জেলার আহ্বায়ক হলেও নির্বাচনের ব্যাপারে কোনো তোড়জোড় নেই। ২০১৮ সালের নির্বাচনে খুলনা-৫ ও ৬ আসন জামায়াতকে ছাড় দিয়েছিল বিএনপি।
বরিশাল জেলা ও মহানগরের ৬ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন বরিশাল-১ চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহির উদ্দিন স্বপন, বরিশাল-২ আসনে সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ ও সাবেক হুইপ শহীদুল হক জামালের ছেলে ব্যারিস্টার সাইফ, বরিশাল-৩ আসনে জয়নুল আবেদীন, বরিশাল-৪ সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, বরিশাল-৫ মো. মজিবর রহমান সরওয়ার, বরিশাল-৬ আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন খান। এদের বাইরে বরিশালে যেকোনো আসনে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে দেখা যেতে পারে।
তবে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান ফারুক ও সদস্যসচিব জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়ার মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। উপরোক্ত চার মহানগরে দলীয় এমপি প্রার্থীদের কাউকেই কমিটিতে রাখা হয়নি। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুর রহমান ময়ুন নির্বাচনি আসন-৩ আসনে এবার দলের প্রার্থী সাইফুর রহমানের ছেলে নাসের রহমান। মৌলভীবাজার-১ আসনে নাসির উদ্দিন মিঠু, মৌলভীবাজার-৪ হাজি মুজিবুর রহমান চৌধুরী ও মহসিন মিয়া মধু। কিন্তু এদের অনেকেই কমিটি পুনর্গঠনে বড় পদে নেই।
মাগুরা জেলা কমিটিতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে দলের প্রার্থী ছিলেন মাগুরা-১ আসনে মনোয়ার হোসেন খান, মাগুরা-২ নিতাই রায় চৌধুরী। বর্তমানে জেলা কমিটির আহ্বায়ক আলী আহমেদ মনোনয়ন চাইবেন না নিতাই রায় চৌধুরীর বিপরীতে। সদস্যসচিব মনোয়ার হোসেন খানকে নিয়ে দলের মধ্যে বির্তক ওঠায় তার আসনেও নতুন মুখ দেখা যেতে পারে।
মেহেরপুর জেলা কমিটিতে ২০১৮ সালের এমপি প্রার্থীদের একজন জাভেদ মাসুদ মিল্টনকে করা হয়েছে আহ্বায়ক ও আরেকজন মাসুদ অরুণ পেয়েছেন সদস্যপদ। মাসুদ অরুণ মেহেরপুর-২ আসনের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী। তবে জাভেদ হোসেন মিল্টনের আসনে এবার মনোনয়নের দাবিদার বর্ষীয়ান নেতা সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন।
কুষ্টিয়া-১ আসনে রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, কুষ্টিয়া-২ আসনে সাবেক এমপি শহীদুল্লাহ ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য রাগীব রউফ চৌধুরী ও মহিলা দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, কুষ্টিয়া-৩ ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন সরকার, কুষ্টিয়া-৪ সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী। কিন্তু জেলা কমিটির আহ্বায়ক পদ পেয়েছেন কুতুব উদ্দীন আহমেদ। যদিও সদস্যসচিব করা হয়েছে জাকির হোসেনকে।
সুনামগঞ্জ জেলার ৫ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সুনামগঞ্জ-১ আসনে কৃষক দলের আহ্বায়ক আনিসুল হক ও জেলার আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম কামরুল, সুনামগঞ্জ-২ আসনে সাবেক এমপি নাছির উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে যুক্তরাজ্যে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমেদ, সুনামগঞ্জ-৪ সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নুরুল, সাবেক সহসভাপতি দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন ও বর্তমান আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মিজানুর রহমান চৌধুরী। যদিও কলিম উদ্দিনের নিজ এলাকা সুনামগঞ্জ-৫ আসন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান ও সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম। কিন্তু এই জেলার ৬ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন সাবেক এমপি রুমিন ফারহানা, ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহাবুব শ্যামল, কবির আহমেদ ভূঁইয়া, কাজী নাজমুল হোসেন তাপস, আব্দুল খালেক।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্ট এর পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আওয়ামীলীগ বিহীন মাঠে সামনের দিনগুলোতে নতুন হিসেব নিকেশ শুরু হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে শত্রু মিত্রের চর্চা নতুন কোন বিষয় নয়। দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রাজনীতির মাঠে একটা সময় যারা পরস্পরের মিত্র হিসেবে পরিচিত ছিল পরবর্তীতে তারাই শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভ্যর্থানের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান বন্দি দশা থেকে মুক্তি হয়ে ছিলেন। এরপর তার ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত হয়ে ছিল। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপিকেও চ্যালেঞ্জ তৈরি করে জনগণের ভোটে দেশের মানুষকে রাহু মুক্ত করতে হবে।
এজন্য শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের বিকল্প নেই। মাত্র আড়াই বছরে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করে ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। যাকে দেশের মানুষ মেজর জিয়া বলে চিনতেন বা ডাকতেন। তিনি ছিলেন নির অহংকার, বিনয়ী ও ধৈর্যশীল। জিয়ার আড়াই বছরের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে বিএনপি আজ দেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। তারেক রহমান জিয়াউর রহমানের প্রতিটি নীতি আদর্শ ধরে রাখলে, “এক জিয়া লোকান্তরে; লক্ষ জিয়া ঘরে ঘরে” শ্লোগানটির মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকবে। দেশ এগিয়ে যাবে। মানুষ শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করবে। অস্থিরতা থেকে স্বস্তিতে ফিরবে দেশের আপামর জনসাধারণ।
বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের বক্তব্য হচ্ছে, ৫ আগস্টের পর বিএনপির মূল দলের নেতা সহ বিভিন্ন অংগ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা দলের হাইকমান্ডকে উপেক্ষা করে চাঁদাবাজি, দখলবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। বাদ পড়েনি সরকারি আফিস-আদালতও। এজন্য কিছুটা সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কেন্দ্রীয় নেতাদেরকে এ ব্যাপারে কঠিনতম নির্দেশনা দেন। এ যাবৎ নানা অভিযোগে অনেক নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। মূলত: এই অসৎ নেতা-কর্মীরা দলের জন্য বা দেশের জন্য কাজ না করে নিজেদের আখের গোছাতে মরিয়া। নির্বাচনের আগেই এদেরকে চিহ্নিত করে দল থেকে চিরতরে নিষিদ্ধ করা বিএনপির গুরু দায়িত্ব। কারণ দেশের মানুষ পতিত সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতি, দখন-বাণিজ্য, ক্ষমতার অপব্যবহারে অতিষ্ঠ এবং আতঙ্কিত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাবার পথে হাঁটবেন এই প্রত্যাশা দেশের সর্বস্তরের মানুষের।
ক্রাইম ডায়রি// রাজনীতি