হৃদয় কাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা উঠছে কাতারে

কাতার সমগ্র বিশ্বকে কথা দিয়েছিল যে বিশ্বকাপ আয়োজন করে সবাইকে চমকে দেবে, প্রযুক্তির দিন বদলে দেবে। কাতার সেই কথা রাখার চেষ্টা করেছে অনেকটুকু। বিশ্বকাপের এবারের আসরে চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে থাকছে নজরকাড়া সব আয়োজন।

হৃদয় কাঁপানো বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা উঠছে কাতারে
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

বিশ্বকাপের যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে কাতারের খরচ হয়েছে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ

বিশ্বকাপ ফুটবল। হৃদয় কাঁপানো একটি শব্দ। আজ মরুর বুকে পর্দা উঠছে সেই বিশ্বকাপের। নিয়মতান্ত্রিক চার বছরের ব্যবধানে আবারো শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর ফিফা বিশ্বকাপ। আজ রোববার (২০ নভেম্বর) পর্দা উঠবে এই‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ‘-এর। ১৯৩০ সালে শুরু হওয়া ফিফা বিশ্বকাপের ২২তম আসরের আয়োজক দেশ কাতার। কাতারের আয়োজক হওয়া নিয়ে যেমন আছে আলোচনা, তেমনি আছে সমালোচনাও। তবে সব কিছু ছাপিয়ে আজ মাঠে গড়াচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের এই মহারণ।

আয়োজক দেশ হওয়ায় এবারের বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে পারছে কাতার। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি এবারই প্রথম বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ। এর আগে কখনো ফুটবল বিশ্বকাপ না খেলেই হোস্ট করা সর্বশেষ দেশ ছিল ইতালি, সেটাও আবার ১৯৩৪ বিশ্বকাপে। যা ফুটবল ইতিহাসের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ।

একমাত্র প্রথম ফিফা বিশ্বকাপ অর্থাৎ ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপেই এক শহরেই বিশ্বকাপের সব ম্যাচ হয়েছিল। ৯২ বছর পর এসে আবারো তেমনটি হতে যাচ্ছে। কাতারের দোহা শহরেই হবে বিশ্বকাপের সবগুলো ম্যাচ। দোহা শহরের একমাত্র খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামকেই সংস্কার করে নতুন রুপ দেয়া হয়েছে। বাকি ৭টি স্টেডিয়াম বিশ্বকাপের জন্যই নতুন করে তৈরি করা হয়েছে।

ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে কাতারের না ছিল কোনো অভিজ্ঞতা, না ফুটবলীয় ইতিহাস, না ছিল কোনো সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু ২০১০ সালে আয়োজক দেশ ঘোষণা হবার পরপরই কাতার সমগ্র বিশ্বকে কথা দিয়েছিল যে বিশ্বকাপ আয়োজন করে সবাইকে চমকে দেবে, প্রযুক্তির দিন বদলে দেবে। কাতার সেই কথা রাখার চেষ্টা করেছে অনেকটুকু। বিশ্বকাপের এবারের আসরে চোখ ধাঁধানো স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে থাকছে নজরকাড়া সব আয়োজন।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্টেডিয়ামে নির্মাণ করতে গিয়ে বানিয়ে ফেলা হয়েছে একটা গোটা শহরই। কোনো কোনো শহরে আবার মেট্রো সার্ভিস চালু করা হয়েছে কেবলমাত্র বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে। আর এই কারণেই এবারের বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে ফিফা বিশ্বকাপের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যায় বহুল বিশ্বকাপ।

বিশ্বকাপের যাবতীয় প্রস্তুতি নিতে কাতারের খরচ হয়েছে প্রায় ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ লাখ কোটি টাকা। গত ৮টি বিশ্বকাপের মধ্যে যা সবচেয়ে বেশি। শুধু বেশি বললে ভুল হবে, গত ২০১৮ রাশিয়া আসরের চেয়ে ২২ গুন বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে এবারের আসরে।

এবারের বিশ্বকাপে মোট ৩২টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। দেশগুলোকে এ থেকে এইচ পর্যন্ত ৮টি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছে। আগামী ২০ নভেম্বর এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডর। ২১ নভেম্বর ম্যাচ হবে দুটি।এরপর থেকে প্রতিদিন চারটি করে ম্যাচ হবে গ্রুপ পর্বে।

গ্রুপ পর্বের লড়াই শেষে ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে নক-আউট পর্বের ম্যাচ। রাউন্ড অব ১৬ থেকে বিজয়ী দলগুলো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলবে আগামী ৯, ১০ ও ১১ ডিসেম্বর। এরপর ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর হবে সেমিফাইনালের ম্যাচ। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ফাইনালের পর বিশ্ব খুঁজে পাবে এবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে। এরইসাথে পর্দা নামবে ফিফা বিশ্বকাপের এবারের আসরের।

তবে এতো আনন্দ আর উত্তেজনার মাঝে খারাপ সংবাদ আছে অনেক ফুটবল ভক্তদের জন্য। এবারের বিশ্বকাপ শেষে ফুটবল বিশ্ব হারাবে এক ঝাঁক তারকা খেলোয়াড়কে। অনেক খেলোয়াড়েরই এটা শেষ বিশ্বকাপ। এ তালিকাটাও বেশ লম্বা বটে। তবে প্রসিদ্ধ নাম লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নেইমার, দানি আলভেজ, থিয়াগো সিলভা, লুকা মদ্রিচ, টমাস মুলার, রবার্ট লেভানডফস্কি, কেভিন ডি ব্রুইনা ও করিম বেনজেমা।

তবে এই বিশ্বকাপের পর যে ফুটবল বিশ্বে নতুন করে একঝাঁক তারকা ফুটবলারের জন্ম হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এক প্রজন্ম শেষে নতুন প্রজন্মের আগমন ঘটবে। অন্তত এই আশাতেই বুক বাঁধতে পারেন ফুটবল সমর্থকরা।

এবারের বিশ্বকাপ শুধু আয়োজনের দিক থেকেই খরুচে নয়, প্রাইজমানির দিক দিয়েও এবারের বিশ্বকাপকে সেরা বলা চলে। এবারের বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নদের প্রাইজমানি শুনলে যে কারোরই চোখ কপালে উঠবে। এবারের চ্যাম্পিয়ন দল বাড়ি নিয়ে যাবে ৪০৪ কোটিরও বেশি টাকা। রানার্স-আপ দল পাবে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা। প্রাইজমানি থাকছে শেষ ১৬ নিশ্চিত করা প্রত্যেক দলের জন্যও।

শেষ ১৬ নিশ্চিত করা প্রতিটি দল পাবে বিপুল অঙ্কের প্রাইজমানি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সমান। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া চার দল প্রায় ১৬৪ কোটি টাকা নিয়ে ঘরে ফিরবে। এছাড়া তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান নিশ্চিত করা দল পাবে যথাক্রমে ২৬০ ও ২৪০ কোটি টাকা ।

উল্লেখ্য, প্রথমে অবশ্য এই ট্রফির নাম ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি ছিল না, বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনকারী প্রথম ফিফা প্রেসিডেন্টকে সম্মান জানাতে ১৯৪৬ সালে বিশ্বকাপ ট্রফির তখন নাম ছিল জুলেস রিমেট ট্রফি। এরপর ১৯৭৪ বিশ্বকাপের‘ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি’ নামকরণ করা হয়েছিল।

ক্রাইম ডায়রি// খেলাধুলা