ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির বিপদ: একটি কেস স্টাডি

এর ফলে রোগীরা সাময়িক উপকার পান। কিন্তু জটিল রোগ যেমন ক্যান্সারের মতো রোগের ক্ষেত্রে কিছুদিন পরই রোগ বিপুল বিক্রমে ফিরে আসে।

ক্যান্সার চিকিৎসায় হোমিওপ্যাথির বিপদ: একটি কেস স্টাডি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশে রোগী আর ডাক্তার উভয়েই একটা ভুল করেন হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রে আর সেটা হচ্ছে রোগের চিকিৎসা করা কিন্তু হোমিওপ্যাথিতো রোগের চিকিৎসা করে না, করে লক্ষনভিত্তিক চিকিৎসা। এদেশে হাতেগোনা কয়েকজন  হোমিওপ্যাথিক ধাতুগত চিকিৎসা করেন।  যাই হোক, হোমিওপ্যাথি মেটেরিয়া মেডিকাতেই লেখা আছে যে, ক্যান্সারের তীব্র লক্ষন্সমুহে  হোমিওপ্যাথি প্যালিয়েটিভ হিসেবে কাজ করে কিন্তু ক্যান্সার নিরাময় করে না। তাছাড়া যেখানে মেকানিক্যাল ইনজুরি হয়েছে কিংবা সার্জারির প্রয়োজন সেখানে হোমিওপ্যাথি বিফল। তবে আমি কিছুদিন আগে হোমিওপ্যাথির এক বিস্ময়কর  সাফল্য দেখলাম। একজন পিত্তথলির পাথরের রোগী (নাম উল্লেখ করলাম না কারন এটা অনুচিত) আমাদের মেডিকেল সেন্টার থেকে হোমিওপ্যাথি ওষুধ সেবন করেছিলেন ৬ মাস। এই কিছুদিন আগে সিটি স্ক্যান করে দেখেন যে পিত্তথলির পাথর আর নেই। 

আতিকুল্লাহ আরেফিন রাসেল:

বিষয়টি একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তির বিষয়ে। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন ২০১৯ সালে। দেশে বিদেশে ডাক্তার দেখিয়েছেন। ওই একই রকম ক্যান্সারে আক্রান্ত অন্য রোগীদের সাথে কথা বলেছেন। তারপর কেমোথেরাপি, রেডিওথেরোপির ভয়ে তিনি শেষ পর্যন্ত হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা শুরু করলেন। গত প্রায় দুই বছর তিনি হোমিওপ্যাথির চিকিৎসা নিচ্ছেন।

শুরুর দিকে রোগের প্রকোপ একটু কমলো। তিনি উৎসাহিত হলেন। তারপর আস্তে আস্তে অবস্থা খারাপ হতে থাকলো। তিনি হোমিওপ্যাথির ডাক্তার বদলালেন। ১৩-১৪ রকমের ওষুধ চললো তার ওপর। কিন্তু অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকলো। গত মাস কয়েক ক্যান্সার আরো ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি প্রকাশিত হলো। তার খাওয়া-দাওয়া এমনকি কথা বলাও কষ্টকর হয়ে পড়লো।

 

হোমিওপ্যাথিতে ক্যান্সারের চিকিৎসার একটা গৎ আছে বটে তবে তা ক্যান্সার হটিয়ে রোগীকে ভালো করার ব্যাপারে তেমন কোন ভূমিকা রাখে না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎকসকগণ নানান প্রতারণার আশ্রয় নেন। একটি সহজ প্রতারণা হচ্ছে  হোমিওপ্যাথির মোড়কে এ্যলোপ্যাথিক ওষুধের ব্যবহার।

এর ফলে রোগীরা সাময়িক উপকার পান। কিন্তু জটিল রোগ যেমন ক্যান্সারের মতো রোগের ক্ষেত্রে কিছুদিন পরই রোগ বিপুল বিক্রমে ফিরে আসে।

উল্লিখিত রোগীকে কয়েকটি সেশনে কাউন্সিলিং করা হলো। বুঝানো হলো যে- আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরভাবে এখন ক্যান্সারের চিকিৎসা হয়। মার্কার ব্যবহার করে কেবল কার্যকর ওষুধগুলো টার্গেটেড থেরাপির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। ফলে এখন থেকে দশ বছর আগে মানুষ যেভাবে নানান পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভুগতো, এখন তেমনটা ঘটে না।

তার পরিবারের আরো সদস্যের সাথে কথা হলো। শেষ পর্যন্ত তিনি ডাক্তারের কাছে যেতে রাজী হলেন। 
ডাক্তার তাকে সপ্তাহে একটি কেমো- এবং ৫টি রেডিও-থেরাপি সেশন সাজেস্ট করলেন। তিনি গতমাসে চিকিৎসা শুরু করলেন। 
দুই সপ্তাহে তিনি দুটো কেমো এবং ৮টি রেডিওথেরাপি সেশন শেষ করেছেন। ইতোমধ্যে তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এখন আগের তুলনায় সহজে খেতে পারছেন, কথা বলতে পারছেন। 
তার চিকিৎসা বেশ স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড। যদি ২০১৯ সালেই এই  চিকিৎসা নিতেন, আজ তিনি আরো সুস্থ থাকতেন। এখনও তার ক্যান্সার ঠেকিয়ে আরো কিছু বছর ভালো থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এটিই বড় বিষয়। 
আমরা ক্যান্সার চিকিৎসায় শুরুতে কখনো হোমওিপ্যাথির শরণাপন্ন না হতে আহ্বান জানাবো। প্রথমেই আমাদের উচিত  পরীক্ষিত চিকিৎসা নেয়া। শুরুতেই ক্যান্সারকে শনাক্ত করে চিকিৎসা শুরু করলে প্রচলিত চিকিৎসায় অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়।

হোমিওপ্যাথির শরণাপন্ন হলে মহাগুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট হয়, এবং রোগীর ভালো হবার সম্ভাবনা কমে আসে। সবার এই বিষয়ে সচেতনতা দরকার। 

মূল লেখার লিঙ্ক: https://tinyurl.com/3h2tzz6r

ক্রাইম ডায়রি // বিশেষ পাতা