চট্টগ্রাম থেকে ফরেক্স ট্রেডিং হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা

সম্প্রতি, ঢাকাসহ অনেক জেলাশহরের এসব ডিজিটাল দুর্বৃত্তদের কার্যক্রম অব্যহত আছে। ক্রাইম ডায়রিতে ধারাবাহিকভাবে তাদের নাম,ঠিকানাসহ তথ্য প্রকাশিত হবে।

চট্টগ্রাম থেকে ফরেক্স ট্রেডিং  হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত
হোসেন মিন্টুঃ
প্রতারনা এখন অনলাইন মাধ্যমে। এরচেয়ে ভয়াবহ এবং ভয়ংকর প্রতারনার হাতিয়ার ডিজিটাল দুনিয়ার বিরল। এর লোভে পড়ে সর্বস্বান্ত কয়েক হাজার মানুষ।  সংস্হাগুলির একটি চক্র ধরা পড়ার পরই কয়েকটি  গ্রুপ উধাও হয়ে গেছে এবং লাপাত্তা হয়েছে টাকা কালেকশনের সাথে জড়িত সুমিষ্টভাষী শতাধিক সিইও। এই প্রতারনার সাথে জড়িত দেশের অসংখ্য ডিজিটাল অপরাধী। 

চট্টগ্রামে অনলাইন ট্রেডিং ‘ফরেক্স ট্রেডিং’-এর মাধ্যমে ডিজিটাল প্রতারক চক্র অন্তত এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাঢাকা দিয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ বেশি মুনাফার আশায় এই অ্যাপের মাধ্যমে বিনিয়োগ করে এখন সর্বস্বান্ত। শুধু চট্টগ্রামেই ফরেক্স ট্রেডিং-এর একশ’র বেশি কথিত সিইও (চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার) জড়িত রয়েছেন। যাদের এখন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। কথিত সিইওদের ধরতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভুক্তভোগীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ‘ফরেক্স ট্রেডিং’-এর নামে ক্রিপটোকারেন্সির আদলে গড়ে ওঠে অ্যাপ মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ বা এমটিএফই। এই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা হয়। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষকে লাভের স্বপ্ন দেখিয়ে বিনিয়োগ করায় এই অ্যাপসটিতে। চিহ্নিত কিছু জুয়াড়ি বা গেম্বলার পরিকল্পিতভাবে তরুণদের টার্গেট করে এ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করে তারা। টিম-কমিশনের লোভে পড়ে প্রত্যেক ট্রেডার রেফার করতে থাকে কাছের মানুষদের। লোভে পড়ে সাধারণ মানুষ জড়িয়ে পড়ে ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে। নিজের সবটুকু বিনিয়োগ করেছেন বেশি লাভের আশায়। কিন্তু এক বছর পর তারা দেখছেন তাদের অ্যাকাউন্ট শূন্য। তারা প্রতারিত হয়েছেন।

টিম-কমিশনের লোভে পড়ে প্রত্যেক ট্রেডার রেফার করতে থাকে কাছের মানুষদের। লোভে পড়ে সাধারণ মানুষ জড়িয়ে পড়ে ডিজিটাল প্রতারণার ফাঁদে। নিজের সবটুকু বিনিয়োগ করেছেন বেশি লাভের আশায়। কিন্তু এক বছর পর তারা দেখছেন তাদের অ্যাকাউন্ট শূন্য। তারা প্রতারিত হয়েছেন।

সূত্র জানায়, শতাধিক সিইও’র অধীনে প্রতি গ্রুপে কয়েক হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছেন। যাদের বিনিয়োগের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। আর এই টাকার সবই এমটিএফইর মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে। ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮ থেকে ৪০ এর মধ্যে। তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে ব্যাপক প্রসার হয় ‘এমটিএফই’ নামের অ্যাপসটির। এতে অ্যাকাউন্ট আছে এমন কারও রেফারেন্সের মাধ্যমে নতুন বিনিয়োগকারী অন্তর্ভুক্ত করা হয়। হিসাব খুলতে প্রয়োজন হয় ন্যূনতম চার হাজার টাকা। বাইন্যান্সের মতো আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিনিয়োগের টাকা রূপান্তরিত হয় ভার্চুয়াল ডলার বা ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। সেই ডলার স্থানান্তর করা হতো এমটিএফই’র অ্যাকাউন্টে। বাইন্যান্স মানি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বৈধ হলেও বাংলাদেশে অ্যাপসটির বৈধতা নেই। 

ভুক্তভোগীরা জানান, গুগল প্লে স্টোর থেকে এমটিএফই অ্যাপ নামিয়ে ব্যবহার করতে হয়। অ্যাকাউন্ট চালু করার জন্য সর্বনিম্ন ২৬ ডলারের সমপরিমাণ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। বিনিয়োগ করলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার পাওয়া যেত। এমন প্রলোভনে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন চট্টগ্রামের মানুষ। চট্টগ্রামে শতাধিক সিও পদধারী ব্যক্তি কাজ করতেন। তারা এখন পলাতক। শুধু শিক্ষিত কিংবা অশিক্ষিতরাই নন, বিনিয়োগ করেছিলেন ব্যাংকার, শিক্ষকসহ নানা পেশার লোকজন। এখন গ্রুপটি উধাও।

কথিত সিওদের মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন-রাউজানের রুবেল বড়ুয়া, সাতকানিয়ার রনি দাস, কেরানীহাট এলাকার আরাফাত, বাঁশখালীর শিবু চৌধুরী ও আনিসুর রহমান, ভোলা জেলার আলাউদ্দিন, রাউজান এলাকার সুকুমারসহ অনেকে। বিনিয়োগকারীরা এখন তাদের খুঁজে পাচ্ছেন না। মোবাইল ফোন বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, ফরেক্স ট্রেডিং-এর মতো আরও অর্ধশত অ্যাপসের মাধ্যমে চলছে প্রতারণা। এসব অ্যাপসের মধ্যে রয়েছে হিলটন মেটা এফএক্স, ফিনটচ, প্লাটিন কয়েন, প্লাটিন আই-এক্স, ক্রাউড ওয়ান, এইচএফএম, সেভেন ডেক্স, কাইজেন এক্স ইত্যাদি। 

 

সিএমপির এডিসি (মিডিয়া) স্পিনা রানী প্রামাণিক গনমাধ্যমকর্মীদের বলেন, অনলাইনভিত্তিক ট্রেডিংয়ে কেউ প্রতারিত হয়ে মামলা করলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অ্যাপসের মাধ্যমে বিনিয়োগ বেশিরভাগই অবৈধ হওয়ায় এবং এর আইনি ভিত্তি না থাকায় কেউ মামলা করতে আসছেন না।

ক্রাইম ডায়রি/ক্রাইম