সন্তান খারাপ হোক, কোন বাবাই চায় না

নিজেকে একজন ক্ষমতাশীল ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে খুব কড়া সুরে বাবা বললো, কেন তার ছেলেকে ওখানে খেলতে বাধা দেয়া হয়েছে। ভদ্রলোকের ছেলে এবং স্ত্রীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে খুব মারমুখী মনে হলো। রীতিমতো চার্জ করে কথা বলতে লাগলো ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের কথাগুলো তার স্ত্রী এবং ছেলেটিকে খুব ইনজয় করতে দেখলাম।

সন্তান খারাপ হোক, কোন বাবাই চায় না
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত
উনি উনার ছেলেকে ঠিকমতো শাসন করেছেন কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তার ছেলে কখন কোথায় কি করছে, কার সাথে মিশছে এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ রেখেছেন বলে অন্তত আমার মনে হয় না।‌
কাজী ওয়াজেদ আলীঃ
আনুমানিক দেড় বছর আগে ‘৯৯৯’-এ এক ভদ্রলোক ফোন করে বললেন, তাদের বাসার সামনে কয়েকটি ছেলে রাস্তায় নেট টাঙিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলছে এবং এত চিৎকার চেঁচামেচি করছে যে, তারা বাসায় টিকতে পারছেন না। এছাড়া রাস্তা বন্ধ করে রাখায় লোকজন গাড়ি নিয়ে ওই রাস্তা পার হতে পারছেন না। সাথে সাথে একটা টিম পাঠালাম। ‌
তাৎক্ষণিকভাবে সব ছেলেরা খেলা বাদ দিয়ে চলে গেলেও একটি ছেলে পুলিশ টিমের সাথে খুব দুর্ব্যবহার শুরু করল। সে যেতেও চাইলো না। তার বক্তব্য মাঠ নেই, আমরা খেলব কোথায়? কথাটা হয়তো ঠিক, কিন্তু তাই বলে রাস্তা বন্ধ করে মানুষের বিরক্তি সৃষ্টি করে তো খেলতে দেয়ার সুযোগ নেই।‌ যাহোক, বুঝিয়ে-সুজিয়ে আমার অফিসার চলে আসার আধা ঘণ্টা পর ওই ছেলে তার বাবা এবং মাসহ থানায় এসে ওসির কক্ষে ঢুকলো।
নিজেকে একজন ক্ষমতাশীল ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে খুব কড়া সুরে বাবা বললো, কেন তার ছেলেকে ওখানে খেলতে বাধা দেয়া হয়েছে। ভদ্রলোকের ছেলে এবং স্ত্রীর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে খুব মারমুখী মনে হলো। রীতিমতো চার্জ করে কথা বলতে লাগলো ভদ্রলোক। ভদ্রলোকের কথাগুলো তার স্ত্রী এবং ছেলেটিকে খুব ইনজয় করতে দেখলাম।
ভদ্রলোক যখন তার কথার গিয়ার বাড়িয়ে দিল ঠিক তখনই রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির আইনি বাধ্যবাধকতার কথা বলে তাকে বিশেষ কায়দায় থামিয়ে দিলাম। এবার তিনজনই সুড়সুড় করে থানা থেকে চলে গেল। 
যে জন্য কথাটা শুরু করেছিলাম তাহলো ওই ছেলের বাবার আচরণ। বিধিবহির্ভূত একটি বিষয়কে সাপোর্ট দেয়ার জন্য তার বাবা শেষ পর্যন্ত ছেলেটিকে নিয়ে থানায় এসে ওসির সাথে তর্ক শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ বাবা তার ছেলেকে দেখাচ্ছে সে কত ক্ষমতাধর, আর ছেলেটিও বিষয়টা ইনজয় করছে। এই ছেলেকে ভবিষ্যতে কিভাবে তিনি সামলাবেন তা আমার বোধগম্য নয়।
সম্প্রতি সাভারে যে ঘটনাটা ঘটেছে সেটার জন্য বাবাকে গ্রেফতার করায় অনেকে নাখোশ হয়েছে। আমিও বিশ্বাস করি, কোন বাবাই চায় না তার সন্তান খারাপ হোক। কিন্তু আমাদের বাবাদের অনেকের আচরণে সত্যি আশ্চর্য হই। এখনো কিছু বাবারা আছে যারা চায় তার ছেলে একটু ডেস্পারেট টাইপের হোক।
সাভারের শিক্ষক হত্যার ঘটনায় যে ছেলেটিকে ধরা হয়েছে তার চেহারা এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে মনে হল সে একটু ডেস্পারেট টাইপের। পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী আগে পরে সে অনেক ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনা নিশ্চয়ই ২-১ বার তার বাবার কানে গেছে। কিন্তু এসব শোনার পরও তিনি তার সন্তানের লাগাম টেনে ধরেননি বলে আমার ধারণা।
যদি আগে থেকেই তিনি সতর্ক হতেন তাহলে নিশ্চয়ই ওনার ছেলে এত বড় ঘটনা ঘটাতে পারতো না। অর্থাৎ উনি উনার ছেলেকে ঠিকমতো শাসন করেছেন কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তার ছেলে কখন কোথায় কি করছে, কার সাথে মিশছে এ ব্যাপারে তিনি খোঁজ রেখেছেন বলে অন্তত আমার মনে হয় না।‌
 
এমনিতেই পারিবারিক অবক্ষয় এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কিভাবে একটি সন্তানকে সুশিক্ষিত এবং প্রকৃত মানুষ করতে হবে- তা আমরা ভুলতে বসেছি। আর ধর্মীয় অনুশাসন তো আমাদের মধ্যে নেই বললেই চলে। সন্তানের উগ্রতা এবং বেলেল্লাপনাকে আমরা প্রশ্রয় দিচ্ছি বেশি। কখনো অতি আদরে আবার কখনোবা না বুঝে।‌
শাসন নামের বিষয়টি আমাদের কাছ থেকে একেবারে উঠে গেছে। নৈতিকতা ও মূল্যবোধ তো নেই বললেই চলে। আর যার কারণেই শিক্ষক হত্যার মতো এত বড় জঘন্য ঘটনা ঘটানোর সাহস পেয়েছে ছেলেটি।
শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছেলেটির বাবার দায় খোলা চোখে অনেকে না দেখলেও (যদিও এই গ্রেফতার আইন মেনে করা হয়েছে), তার ছেলের মধ্যে আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলো সামাল দিতে না পারার ব্যর্থতার দায় তিনি কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। এ ঘটনা থেকে আমরা অভিভাবকরা অন্তত একটা শিক্ষা নিতে পারি।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
লেখক: কাজী ওয়াজেদ আলী  একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর