নকল ও ভেজাল ঔষধঃ অনুমোদনহীন গোপন কারখানাঃ অভিযান জরুরী

বাংলাদেশে মানুষের উন্নত জীবনযাত্রায় ফুড সাপ্লিমেন্ট ও যৌন উত্তেজক ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে সর্দি-কাশির ওষুধ তৈরির আড়ালে এসব অবৈধ পণ্য তৈরি করে আসছে।

নকল ও ভেজাল ঔষধঃ অনুমোদনহীন গোপন কারখানাঃ অভিযান জরুরী
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত
ক্রাইম ডায়রির নিজস্ব অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে এমন ভেজাল ও অনুমোদনহীন অসংখ্য কারখানার সন্ধান। যাদের কারো বা আংশিক অনুমোদনও রয়েছে। কারো বা মেয়াদ নেই কিন্তু উৎপাদনও থেমে নেই। অনেকের আবার অনুমোদন একনামে উৎপাদন হচ্ছে অন্য নামে।
আলাউদ্দিন সোহেল, বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দিনে দিনে বেড়েই চলেছে ভেজাল ও নকল ঔষধের কারখানা এবং বাজারজাতকরন। অধিক লাভের আশায় বিভিন্ন সময় ঔষধ প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করত কিংবা চাকরীরত অসাধু চিন্তাধারার কিছু অসৎ মানুষের নিকৃষ্ট মানসিকতায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ কারখানা। বিশেষ করে হার্বাল ইউনানি কিংবা আয়ুবের্দীয় ঔষধের ব্যানারেই চলে এসব অবৈধ বানিজ্য। স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রয়োজন স্বাস্থ্য সচেতনতা, ডাক্তার ও ঔষধ।

 

আর ঔষধই অসুস্থতার একমাত্র নিয়ামক। বর্তমানে বাংলাদেশে ঔষধ শিল্প অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক ভালো সময় পার করছে। বাংলাদেশের ঔষধ শিল্প দেশের প্রয়োজনীয় সকল ঔষধ উৎপাদন যথেষ্ট সামর্থ্য রাখে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫৭টি কারখানায় প্রায় ২৪,০০০ ব্র্যান্ডের ঔষধ উৎপাদন হচ্ছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো বছরে প্রায় ২৫,০০০ কোটি টাকার ঔষধ ও কাঁচামাল তৈরি করছে। এতে করে ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ ঔষধের চাহিদা পূরণ করছে দেশীয় কোম্পানিগুলো।
তাছাড়াও, দেশের অর্থনীতিতে রাখছে বিরাট ভূমিকা। বাংলাদেশের উৎপাদিত ঔষধ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের প্রায় ১৪৫টি দেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। বাংলাদেশের উৎপাদিত ঔষধের চাহিদা ও ব্যবহার বিশ্ববাজারে বেড়েই চলেছে।
এত সব সুখবরের মধ্যে খারাপ খবরটা কোথায়? বিশ্ববাজারে যখন বাংলাদেশে উৎপাদিত ঔষধের চাহিদা বেড়ে চলেছে ঠিক তখনই এর বিপরীত চিত্র দেশের ঔষধের বাজারে। দেশীয় বাজারে উৎপাদিত হচ্ছে ভেজাল ও নকল ঔষধ, যার ফলে ক্রমশই অস্থির হয়ে উঠছে ঔষধ শিল্প ও চিকিৎসা ব্যবস্থা। ভেজাল ও নকল ঔষধ এই শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে এক বিরাট অশনি সংকেত। পরিসংখ্যান মতে, দেশীয় বাজারে ভেজাল ও নকল ঔষধের বার্ষিক বিক্রি প্রায় ১.৫ হাজার কোটি টাকার উপর।
 বিরাট অংকের ভেজাল ঔষধের বিক্রি থেকে সহজে অনুমান করা যায় বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত ঔষধের সুনাম থাকলেও দেশীয় বাজারে চলছে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি। এইসব ভেজাল ও নকল ঔষধ বাণিজ্যের ফলে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ছে। ভেজাল ঔষধের ফলে রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রাণহানির ঘটনাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
ভেজাল ঔষধের বিক্রয় মানেই ভোক্তার সাথে প্রতারণা। ক্ষতির মধ্যে পড়ছে সাধারন মানুষ। ভেজাল ও নকল ঔষধ ব্যবহারের ফলে নিজেদের অজান্তেই সুস্থতার বদলে উল্টো দীর্ঘায়িত করছে অসুস্থতা। ভেজাল ও নকল ঔষধকে অসুস্থ ব্যক্তির জন্য মরণ ফাঁদ বললেও ভুল হবে না।
দেশের ঔষধ বাজারে ভেজাল এবং নকল ঔষধের বাণিজ্য কতটা শক্ত হাতে দমন করছে প্রশাসন সেটা নিয়েই এখন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সুনির্দিষ্ট তদারকি সংস্থা থাকলেও ডিবি পুলিশের তৎপরতায় বেশি চোখে পড়ে। কিন্তু যাদের তৎপরতায় অস্থির থাকার কথা অসাধুদের তাদের মুখে শোনা যায় ম্যানেজ বানিজ্যের গল্প? ভেজাল ঔষধের বাণিজ্য বন্ধে ততটা আগ্রহী এবং তৎপর নয় প্রশাসন। দেশের মোট চাহিদার আনুমানিক ২০% ভেজাল ঔষধ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রশাসনের পর্যাপ্ত তদারকি থাকলে উক্ত ২০% ভেজাল ঔষধ উৎপাদন ও বাজারজাত সম্ভব হতো না।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঔষধ শিল্পের অনিয়ম বন্ধ করার মত তেমন কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি বাংলাদেশে অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য বহুজাতিক কোম্পানি সানোফি, গ্লাক্সোস্মিথক্লিন নিজেদের ঔষধ উৎপাদন ও ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় দেশের নিজস্ব ঔষধ বাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে করে স্থানীয় বাজারে দেশীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে শুরু হয়েছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ফলে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থা হয়ে পড়ছে অস্থিতিশীল।
ভেজাল ও নকল ঔষধ বন্ধের জন্য প্রশাসন মাঝে মাঝে কিছু অভিযান পরিচালনা করে, যা তেমন কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। সম্প্রতি, সুপ্রিমকোর্ট মানহীন ঔষধ তৈরির দায়ে কিছু কোম্পানির ঔষধ উৎপাদন বন্ধ রেখেছিল। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ভাষ্যমতে, এসব নোংরা বাণিজ্যতে দেশের প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তিবর্গ যুক্ত রয়েছেন। এসব ভেজাল ও নকল ঔষধ বাণিজ্যের শুরু কখন থেকে তা বলা মুশকিল কিন্তু শেষটা বলা সম্ভব, যদি প্রশাসন শক্ত হাতে দমন করে অসুস্থ ঔষধ বাণিজ্যকে।
ভেজাল ঔষধ বাণিজ্য মূলতঃ সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত হয়। প্রশাসন এইসব সিন্ডিকেটকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পারলে ভেজাল ও নকল ঔষধের বিপণন ও বাণিজ্য অনেকটাই কমে আসবে। ঔষধ বাজারে নিয়মিত মনিটরিং সম্ভব হলে অসাধু ব্যবসায়ীরা খোলা বাজারে ভোক্তার কাছে ভেজাল ঔষধ বিক্রি করতে পারত না।
এসবের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি দরকার উৎপাদিত ঔষধের কারখানায় নজর রাখা যেন ভেজাল ও নকল ঔষধ উৎপাদন না হয়। ফার্মেসিগুলোতে রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট নিয়োগের যে বিধান রয়েছে, তা প্রশাসন থেকে নিশ্চিত করা একান্ত আবশ্যক। সময় এসেছে ভেজাল ও নকল ঔষধ বাণিজ্য বন্ধের।
ভেজাল ও নকল ঔষধ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের দাবি সব জনমহলে। ভেজাল বিরোধী গতানুগতিক অভিযান না চালিয়ে আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং যুগোপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন করা খুবই জরুরী। বর্তমানে ঔষধের হীন ও অসুস্থ ব্যবসা যদি সরকার কঠোর হাতে দমন করে তবে, দেশ আরো একধাপ এগিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস আরো প্রশংসিত হবে।
তাছাড়া দেশে নকল ওষুধ তৈরি হচ্ছে বেশ কয়েকটি বৈধ কারখানায়। রাজধানীর মিটফোর্ডকেন্দ্রিক একটি মুনাফালোভী চক্র ওষুধ ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দিচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমোদিত ৭৯টি ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক কারখানায় বিভিন্ন নামিদামি অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানির ওষুধ নকল করা হয়। আবার এসব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন পরিবেশ দেখে সন্দেহ জাগে এত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এরা অনুমোদন পেল কিভাবে?
ক্রাইম ডায়রির নিজস্ব অনুসন্ধানেও উঠে এসেছে এমন ভেজাল ও অনুমোদনহীন অসংখ্য কারখানার সন্ধান। যাদের কারো বা আংশিক অনুমোদনও রয়েছে। কারো বা মেয়াদ নেই কিন্তু উৎপাদনও থেমে নেই। অনেকের আবার অনুমোদন একনামে উৎপাদন হচ্ছে অন্য নামে।
গোয়েন্দা সংস্থা ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা সরবরাহ করেছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে। ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, দেশীয় ওষুধের পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানে নকল করা হচ্ছে বিদেশি নামিদামি ওষুধও। এগুলো উৎপাদন ও বিপণনের কাজে জড়িত একাধিক সংঘবদ্ধ চক্র। আর নকল ওষুধ বিপণনের বড় হাট রাজধানীর মিটফোর্র্ড। এখান থেকেই অসাধু চক্র কুরিয়ারের মাধ্যমে নকল ওষুধের চালান পাঠিয়ে দেয় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফার্মেসি মালিকদের কাছে। অধিক লাভের আশায় জেনেশুনেই ফার্মেসি মালিকরা তা কিনে নিচ্ছে।
এদিকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, নকল, ভেজাল ও নিুমানের এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২ হাজার ৩৬টি মামলা করা হয়েছে। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৪ হাজার ৩০০ টাকা। ডিবি পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, হুবহু আসল মোড়কে গ্যাস্ট্রিক, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগের নকল ওষুধ বাজারে ছাড়ছে সংঘবদ্ধ চক্র, যা দেখে ভোক্তাদের আসল-নকল পরখ করা অনেকটাই দুঃসাধ্য। তথ্য রয়েছে, এ চক্রকে সহযোগিতা করছে অতি মুনাফালোভী কতিপয় ফার্মেসি মালিক।
গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বৈধ বিভিন্ন ইউনানি আয়ুর্বেদিক ওষুধ কারখানায় তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির বহুল ব্যবহৃত নকল ওষুধ। আটা, ময়দা, রং ও ঘনচিনি মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এসব নকল ওষুধ। পরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অলিগলিসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ফার্মেসিগুলোয়, যা রোগ সারানোর বদলে ভোক্তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
কেইস ষ্টাডি ০১:
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, রাজধানীর ফকিরাপুলকেন্দ্রিক প্যাকেজিং ব্যবসা গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন নামিদামি ওষুধ কোম্পানিগুলো এসব কারখানা থেকে বিভিন্ন ওষুধের মোড়ক তৈরি করে। কিছু প্যাকেজিং কারখানার অসাধুরা অর্ডারের অধিক পরিমাণে মোড়ক তৈরি করে, যা পরে নকলকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করে দেয়।
 ক্রাইম ডায়রির নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে  ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির গলি. মসজিদ গলি, রাজধানীর কাটাবন,নীলক্ষেত,আটিবাজার,বাংলাবাজার ও মিটফোর্ডের পাশ্বেই রয়েছে অসংখ্য প্রিন্টিং ও ডিজাইন ব্যবসায়ী । যাদের মধ্যে আছে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী। যাদের কাজই হলো অনুমোদনহীন ও নকল ঔষধের মোড়ক তৈরি করে দেয়া। রাজধানীর বসিলা আটি বাজার এলাকার ডিজাইন ও প্রিন্ট ব্যবসায়ী সাঈদ । যার হাউজে  তৈরি হয় নিদেন পক্ষে বিশটা অবৈধ কোম্পানীর ভেজাল ঔষধের মোড়ক । এখানে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর মোড়কও তৈরি হয় দেদারসে। আগে নীলক্ষেতে দোকান করলেও এখন আটি বাজারে নিজস্ব ফ্যাক্টরী দিয়ে এই কাজ করে চলেছেন এই ব্যবসায়ী। এরই সাথে লিংক হয়ে অবৈধ মোড়ক তৈরি করে আরও প্রায় ডজনখানেক প্রিন্টিং ব্যবসায়ী।
এসব মোড়কে নকল ওষুধ বাজারজাত হলেও বোঝার কোনো উপায় থাকে না কোনটা আসল আর কোনটা নকল। তিনি বলেন, রোগ সারানোর বদলে নকল ওষুধ মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। নকল ও ভেজাল ওষুধচক্রের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযান করা গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের ডিসি রাজীব আল মাসুদ জানিয়েছিলেন, যতগুলো প্রতিষ্ঠানে আমরা নকল ওষুধ তৈরির অভিযোগ পেয়েছি, সবই অনুমোদিত। এসব আয়ুর্বেদিক বা ইউনানি কোম্পানি বিভিন্ন অ্যালোপ্যাথিক কোম্পানির বহুল ব্যবহৃত নকল ওষুধ বানাচ্ছে।

 

বাইরে নতুন করে নকল ওষুধ ফ্যাক্টরি কেউ স্থাপন করেনি। ইউনানি এবং আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানিগুলোকে মনিটরিং করতে না পারলে নকল ওষুধ তৈরি বন্ধ করা মুশকিল। ওষুধ প্রশাসন বারবার বলছে, তাদের জনবল কম, যে কারণে অ্যাকশনে যেতে পারছে না। সে ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে এসব প্রতিষ্ঠানে নজরদারি বাড়ানো যেতে পারে বলেও মত দেন তিনি।
২১ সালের মার্চের ২৮ তারিখে রাজধানীর শ্যামলীতে একটি অবৈধ কারখানায় অভিযানের কথা মনে আছে অনেকেরই। রাজধানীর শ্যামলীতে অ্যাস্ট্রেন হেলথ কেয়ার নামের ওষুধ কোম্পানির গুদামে অভিযান শুরু করা হয়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে চলে এই অভিযান। এ সময় দেখা গেছে, ২০১৩ সালে আমদানি করা বিভিন্ন কাঁচামাল ও পণ্য গুদামে পড়ে রয়েছে।
অভিযানে ওষুধ তৈরির মেশিনও জব্দ করা হয়। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন না থাকায় রাতের আঁধারেই তৈরি করা হতো ওষুধ। আর এ কাজে প্রতিষ্ঠানটির মালিককে সহায়তা করে আসছিলেন তার স্ত্রী। চার ঘণ্টা অভিযান শেষে অভিযানের সময় গুদাম থেকে আনুমানিক প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা সমমূল্যের নকল ওষুধ জব্দ করা হয়। অভিযান শেষ প্রতিষ্ঠানের মালিককে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে অভিযোগ আসার পরে আমরা দীর্ঘদিন এ চক্রকে নজরদারিতে রেখেছিলাম। সত্যতা পাওয়ার পর জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা ও র‍্যাবকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাই। সেখানে যেসব ওষুধ পাওয়া যায় তার অধিকাংশ ওষুধেরই বাংলাদেশে আমদানির কোনো বৈধতা নেই। তারপরও তারা নিজেরা সেসব তৈরি করে বিদেশি ওষুধ বলে বাজারে চালিয়ে আসছিল। অভিযানে এমন অনেক অনুমোদনহীন ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এসব নকল ওষুধ পাওয়া যাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, অভিযানে মশা মারার ওষুধ থেকে শুরু করে বিপুল পরিমাণ গ্যাস্ট্রিক, ক্যালসিয়াম ওষুধসহ নানা রকমের আয়ুর্বেদিক ওষুধ পাওয়া গেছে, যেগুলোর আমদানির কোনো অনুমোদন। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি সবার অগোচরে নিজেরাই সেগুলো তৈরি করতো।
তিনি আরও বলেন, এখান থেকে যেসব পণ্য জব্দ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়েক বস্তা বিভিন্ন কাঁচামাল, মেগা প্লাস-৩, এক্স-ভি, স্টে-অন, হোয়াইট কোড সিনেম, অ্যাস্টন লেজার, অ্যামিনো-১৮সহ বিভিন্ন যৌন উত্তেজক নকল ওষুধ। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এগুলোর বেশির ভাগ ইউনানি ওষুধ। এই ওষুধগুলো বিভিন্ন দেশের নামিদামি কোম্পানিতে তৈরি হয়, কিন্তু বাংলাদেশে এগুলো উৎপাদনের কোনো অনুমতি নেই।
অভিযান বিষয়ে র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আক্তারুজ্জামান সে সময় বলেছিলেন, বাংলাদেশে মানুষের উন্নত জীবনযাত্রায় ফুড সাপ্লিমেন্ট ও যৌন উত্তেজক ওষুধের চাহিদা বেড়ে গেছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে রাতের আঁধারে সর্দি-কাশির ওষুধ তৈরির আড়ালে এসব অবৈধ পণ্য তৈরি করে আসছে। এখানে জব্দকৃত প্রতিটি পণ্য ২০১৩ সালের কেনা, যার মেয়াদ অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে।
তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন সব নকল ওষুধ তৈরি করে আমেরিকা, কানাডা ও ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে বলে মিথ্যাচার করে আসছিল। যা ভয়াবহ প্রতারণা। আমরা এদের ধরতে সফল হয়েছি। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ফ্যাক্টরীর আদলে রাতের আধারে প্রোডাকশন কিংবা শোবার ঘরে বসেই প্রোডাকশন করা কোম্পানী আদৌ কম নয়। অসংখ্য পকেট কোম্পানী এখনও এভাবেই করে চলেছে ঔষধ উৎপাদন।
কেইস স্টাডি 2:
এছাড়া খোলাবাজারে ওষুধের কাঁচামাল বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করাও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুল কালাম লুৎফুল কবির বলেন, ভেজাল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ ওষুধসেবন করে জীবনরক্ষার জন্য; কিন্তু এতে যদি জীবনের জন্য ক্ষতিকর হয়, তা দুঃখজনক।
তিনি বলেন, নকল ওষুধে আটা, ময়দা যদি মেশায় তা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ততটা ক্ষতিকর হবে না। কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিক এবং কাপড়ের রংসহ অন্য যেসব ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশাচ্ছে, তাতে মানুষ আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক আইয়ুব হোসেন  বলেন, নকল ভেজাল ওষুধ যারা তৈরি করে, তারা অতি গোপনে এসব কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে হলে আমাদেরকে পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার সহযোগিতা নিতে হয়। তাই এখন আমরা নিজস্ব ইন্টিলিজেন্স করা যায় কি না তা ভাবছি।
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, রোগ সংক্রমণের ব্যাপকতায় বেশ কিছু ওষুধের চাহিদা বেশি বাজারে। গ্যাস্ট্রিক, প্রেশার, ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ ও অ্যাজমার ওষুধ অন্যতম। অতি মুনাফার লোভে এসব ওষুধ নকল করছে জালিয়াতচক্র। তারা নিবন্ধিত কারখানায় এসব নকল ওষুধ তৈরি করছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এমন ৭৯টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছিল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ উৎপাদনের জন্য ২৮৪টি কোম্পানির অনুমোদন রয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। এছাড়া ২৮১টি ইউনানি, ৩৪টি হারবাল ও ২১২টি আয়ুর্বেদিক কোম্পানিকেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ইউনানি, হারবাল ও আয়ুর্বেদিক কোম্পানিগুলোর কিছু স্বার্থান্বেষী মালিক তাদের নিজস্ব ওষুধ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যালোপেথিক কোম্পানির নকল ওষুধ তৈরি করছে। তাদের কাছ থেকে মিটফোর্ডকেন্দ্রিক কিছু চক্র এসব ওষুধ কিনে এনে দেশব্যাপী বাজারজাত করছে।
করোনা মহামারির মধ্যে ঢাকা, সাভার ও পিরোজপুরে পৃথক অভিযান চালিয়ে এ চক্রের আট সদস্যকে আটকও  করেছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এসময় সন্ধান মিলেছিল নকল ওষুধ তৈরির কারখানার। অভিযানে বিপুল পরিমান নকল ওষুধ, নকল ওষুধ তৈরির যন্ত্র ও ছাঁচ জব্দ করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে অভিযানে আটক হওয়া আটজন হলেন ফয়সাল মোবারক, নাসির, ওহিদুল, মামুন, রবিন, ইব্রাহিম, আবু নাঈম ও ফয়সাল। এদের মধ্যে ফয়সাল মোবারক এ চক্রের মূল হোতা।
জানতে চাইলে ডিবির লালবাগ বিভাগের কোতয়ালি জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, এ চক্রের সদস্যরা আয়ুর্বেদিক ওষুধ তৈরির ভুয়া লাইসেন্স বানান।
এই লাইসেন্স ব্যবহার করে তাঁরা প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নকল ওষুধ তৈরি করে বাজারজাত করছিলেন। এর মধ্যে সেকলো, মোনাস, মন্টিয়ার, সেফ৩, নেপ্রোক্সেন প্লাসের মতো বহুল ব্যবহৃত ওষুধও রয়েছে। উৎপাদিত নকল ওষুধ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করতো বলেও জানান সাইফুর রহমান আজাদ।
তিনি আরও জানান, নকল ওষুধ বানাতে এ চক্রের মূল হোতা ফয়সাল সাভার ও পিরোজপুরে কারখানা স্থাপন করেন। আতিয়ার নামে একজন কেমিষ্টের কাছ থেকে বাজারে প্রচলিত ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ওষুধের ফর্মুলা সংগ্রহ করেন তিনি। এরপর রাজধানী পুরান ঢাকার কেমিকেল ব্যবসায়ী মুহিবের কাছ থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে সেই কারখানায় নকল ওষুধ বানানো হত। গত বৃহস্পতিবার কারখানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান নকল ওষুধ ও তা তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করে পুলিশ।
সাইফুর রহমান আজাদ আরও জানান, নকল ওষুধে মোড়ক লাগানো ও বাজারজাতের দায়িত্বে ছিলেন আবু নাঈম। আটক হওয়া বাকিরা এসব নকল ওষুধ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দিতেন। এ চক্রের আরও সাত সদস্য ওয়াহিদ, নাদিম, আতিয়ার রনি, চঞ্চল, কালাম, পাভেল ও মুহিব পলাতক রয়েছে।
কেইস ষ্টাডি 3
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনে ঢাকাসহ সারাদেশে একাধিক চক্র সক্রিয়। গোয়েন্দাতথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কিছু চক্রকে আইনের আওতায় আনা হয় ঠিকই, কিন্তু জামিনে বেরিয়ে তারা আবার শুরু করে ভেজাল ওষুধ তৈরির কাজ। গত কয়েকবছরে মিটফোর্ডের বাজার থেকেই কয়েক শ কোটি মূল্যের ভেজাল ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, নকল ওষুধ উৎপাদনকারীরা বিভিন্ন এলাকায় কারখানা বানায়। তবে তাদের পাইকারি বাজার মিটফোর্ড। এখান থেকেই ভেজাল ওষুধ ছড়ায় সারাদেশে।
নকল-ওষুধ-তৈরির-মেশিনসম্প্রতি জব্দ হওয়া নকল ওষুধ তৈরির মেশিন
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক ফার্মেসি মালিক কম টাকায় ওষুধ কিনতে মিটফোর্ড আসেন। নকল ওষুধ উৎপাদনকারীরা তাদের প্রস্তাব দেয়। বেশি লাভের আশায় ফার্মেসি মালিকরা রাজি হলে কুরিয়ারের মাধ্যমে ওষুধ পাঠানো হয়।
মিটফোর্ডের পাইকারি ওষুধ মার্কেটের কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির এক পরিচালক জানান, তারাও নকল ওষুধ উৎপাদন এবং বিপণনের বিপক্ষে। এ জন্য ২০১৮ সালে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে একটি টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তারা। কিন্তু প্রশাসন পদক্ষেপ নেয়নি।
ওই ব্যবসায়ী স্বীকার করেছেন, কেউ কেউ আয়ুর্বেদিক লাইসেন্সের আড়ালে কারখানা বানিয়ে নকল ওষুধ তৈরি করছে। অনেকে বাসাবাড়িতেও ডাইস বানিয়ে ভেজাল ওষুধ বানাচ্ছে। এদের সংখ্যা কম। অল্প কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য পুরো মার্কেটের দুর্নাম হচ্ছে।
যোগাযোগ করা হলে মিটফোর্ডের ড্রাগিস্ট অ্যান্ড কেমিস্ট সমিতির সাবেক পরিচালক জাকির হোসেন রনি বলেন, আমরা চাই নকল ওষুধ যারা তৈরি করে তাদের সর্বোচ্চ সাজা হোক। যারা বিপণন করে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি  যাবতীয় লাইসেন্স বাতিল করে কালোতালিকাভুক্ত করা হোক। একই জেনেরিক নামের ওষুধ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাজারজাত করলেও একেকটির মান একেকরকম। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদারকির অভাবেই নিম্নমানের ওষুধ দেদার বিক্রি হচ্ছে।
নকল-ওষুধ-তৈরির-ডায়াসসম্প্রতি জব্দ হওয়া নকল ওষুধ তৈরির ডায়াস
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফার্মেসি মালিক বলেন, বড় ও নামকরা কোম্পানির ওষুধের দাম বেশি। কিন্তু অন্য আরেক কোম্পানি একই ওষুধ কমদামে বিক্রি করে। এজন্য অনেক ফার্মেসি মালিক প্রেসক্রিপশন দেখে জেনেরিক নাম ঠিক রেখে ব্র্যান্ড বদলে দেয়। তাদের কাছে লাভটাই বড়, মান নয়।
মোনাস, মন্টিলুকাসের মতো ওষুধগুলি ব্যাপকভাবে নকল করছিল এসব আয়ুর্বেদিক কারখানা। সমস্যা হচ্ছে আয়ুর্বেদিক কারখানাগুলি নিবন্ধিত। তবে তাদের এ ওষুধ তৈরির কোনো লাইসেন্স নেই।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাজ হলো মাঝে মাঝে বাজার থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে মান পরীক্ষা করা। কিন্তু তাদের ল্যাবরেটরির সক্ষমতা কম। এই সুযোগ কাজে লাগায় অনেক কোম্পানি। লোকবলের অভাব ও ক্যাপাসিটি না থাকার দোহাই দিয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কুমিল্লা ও ঢাকায় অভিযানে চক্রের মূলহোতাসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা মূল্যের ২২ লাখ পিস নকল ওষুধ। স্বয়ংক্রিয় মেশিনে চলছে ওষুধ তৈরির মহাযজ্ঞ। তবে দেশের নামিদামি ব্রান্ডের বহুল ব্যবহৃত ওষুধ হিমালয়েস ল্যাবরেটরির লোকজন নিজেরাই তৈরি করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে কুমিল্লা থেকে নকল ওষুধ তৈরি করে পাঠিয়ে দেয়া হতো রাজধানীর মিডফোর্ট ও চকবাজারের পাইকারি বাজারে। ওষুধ তৈরি থেকে বাজারজাতকরণ প্রতিটি ধাপে রয়েছে নির্দিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত লোক।
এদের মধ্যে মূলহোতা কবির হোসেন ও সহযোগী মোরশেদ আলম শাওন কারখানায় নকল ওষুধ তৈরি করত। বিপণনের জন্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে দিত চক্রের অন্য সহযোগীরা। 
গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, মোনাস, মন্টিলুকাসের মতো ওষুধগুলি ব্যাপকভাবে নকল করছিল এসব আয়ুর্বেদিক কারখানা। সমস্যা হচ্ছে আয়ুর্বেদিক কারখানাগুলি নিবন্ধিত। তবে তাদের এ ওষুধ তৈরির কোনো লাইসেন্স নেই।
 
এ ঘটনায় রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে মূলহোতা কবির হোসেন সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ ও তৈরির সরঞ্জাম। পুলিশ বলছে, সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি ওষুধ ক্রয়ে গ্রাহকদেরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ।
 
কেইস ষ্টাডি ৪
রংপুর নগরীর রবার্টসনগঞ্জ মন্ডলপাড়া এলাকায় অনুমোদনহীন আয়ুবের্দীয় ঔষধ কারখানা এসআর ল্যাবরেটরীজে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর ঔষধ তৈরীর কারখানায় অভিযান পরিচালনা করেছে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালত। ঐ প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা। প্রওেয়াজনীয় অনুমোদন ও বৈধ কাগজ পত্র না থাকা ও ক্ষতিকর ঔষধ তেরী করার অভিযোগে মালিককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ঔষধ কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়।
নির্বাহি ম্যাজিষ্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা সাংবাদিকদের জানান এসআর ল্যাবরেটরিজ নামে আয়ুবেদীয় প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত শিশুদের বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ের নাম করে বাসক, তুলশি, দিনার, বেবিপেপ, জাইম, বিকোরেক্স, এনাফেরন নামের ঔষধ তৈরী করে বাজারজাত করে আসছিলো। গোপন সংবাদের উপর ভিত্তি করে ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে সকল ঔষধ ধংস করা হয়। সেই সাথে কারখানা পরিচালনার অনুমোদন, কেমিস্টসহ প্রয়োজনীয় জনবল না থাকার অপরাধে কোম্পানীর মালিক রফিকুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। সেই সাথে কারখানাটি পুরোপুরি বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
 ইউনানি ও আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠানগুলো নকল ও ভেজাল ঔষধ তৈরির দিকে ঝুঁকছে। যেভাবে ব্র্যান্ডের ঔষধ নকল ও ভেজাল হচ্ছে, এটা ভবিষ্যতে করোনার চেয়েও ভয়াবহ মহামারির আকার ধারণ করবে। তাই উচিত এখনই এর লাগাম টানা।
প্রতিষ্ঠানগুলি দেশি-বিদেশি নয়টি ব্র্যান্ডের ঔষধ নকল করছে। জব্দ করা ঔষধের মধ্যে রয়েছে- ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের প্যানটোনিক্স- ২০ এমজি নয় লাখ ১৮ হাজার ৪৫৬ পিস, স্কয়ারের সেকলো- ২০ চার লাখ ১০ হাজার ৪০০ পিস, দি একমি ল্যাবরেটরিজের মোনাস- ১০ ৫৮ হাজার ৫০ পিস, হেল্থকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সার্জেল ক্যাপসুল ৯৬ হাজার পিস, অপসোনিন ফার্মার ফিনিক্স- ২০ ৫৮ হাজার ৮০০ পিস, কুমুদিনি ফার্মার অ্যান্টিবায়োটিক দিজা (thiza) ছয় হাজার ২৪০ পিস, আমবে (Ambee)ফার্মাসিউটিক্যালসের Myzid- 500 ছয় হাজার ৪৮০ পিস, জেনিথের ন্যাপ্রক্সেন প্লাস ৪১ হাজার ৪০০ পিস, ব্রোনসন-ইউএসএ-এর জিবি- ৬০ তিন হাজার পিস।
অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি ফয়েল পেপার দিয়ে সুন্দর করে এসব ঔষধ মোড়কজাত করছে। বোঝার কোনো উপায় নেই এটা আসল না নকল। এ ঔষধের গুণগত মান বলতে কিছুই নেই। আটা বা ময়দার সঙ্গে ক্যামিকেল মিশিয়ে তৈরি এসব নকল ঔষধ প্যাকেজিং করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আমরা এসব ঔষধ পরীক্ষা করে দেখব কী পরিমাণ ক্ষতিকারক উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। আদৌ এর কোনো গুণগত মান আছে কি না!
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, ডেমরা, কাজলা, আরামবাগ, লালবাগ ও মিটফোর্ড এলাকা থেকে কয়েকজন নকল ওষুধ প্রস্তুতকারকদের গ্রেপ্তার করা হয়। এই চক্রটি সারাদেশে নকল ওষুধ ছড়িয়ে দিয়েছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলকে টার্গেট করে বহুল বিক্রীত ওষুধগুলো নকল করে তারা বাজারজাত করছিল। যেসব ওষুধ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়, সেগুলোই নকল করে বাজারজাত করছিল চক্রটি। আসল ওষুধের প্রকৃত দামের তুলনায় অনেক কমদামে নকল ওষুধগুলো বাজারে বিক্রি হচ্ছিল। এগুলো মাদকের থেকেও ভয়ংকর।
নিয়ম-কানুন মেনে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেও মানুষ ভেজাল, মানহীন ওষুধের প্রভাবে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। কেউ চরম কষ্টে জীবন পার করছেন, কেউবা অল্প বয়সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন।
ভেজাল ও নকল ওষুধ সেবনের কারণে এক মাস ধরে অসুস্থ হয়ে ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন মুন্সিগঞ্জের স্বাধীন। স্বাধীন বলেন, একটি ভুল চিকিৎসা ও ওষুধের জন্য দিনের পর দিন আমাকে ভুগতে হচ্ছে।
 মিরপুরের শাপলা ফার্মেসির সহকারী নজরুলের দেওয়া ওষুধ খেয়ে অসুস্থ হয়ে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন রিকশাচালক আবুল মিয়া। এ সময় আবুল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, আমাকে নজরুল কী ওষুধ দিল, সেটা খেয়ে আমার পেটে জ্বালা করে, ব্যথা করে, পরে আমি হাসপাতালে ১৫ দিন ধরে ভর্তি আছি। আর আমি কোনো দিন ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ খাব না। নিয়ম-কানুন মেনে স্বাভাবিক জীবনযাপন করেও মানুষ ভেজাল, মানহীন ওষুধের প্রভাবে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। কেউ চরম কষ্টে জীবন পার করছেন, কেউবা অল্প বয়সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন।
দেশে মোট ওষুধের চাহিদার ৯৭ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকেই মেটানো হচ্ছে। বাকি ৩ শতাংশ ওষুধ আমদানি করতে হয়। বিশ্ববাজারে যখন বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধের চাহিদা বেড়েই চলেছে ঠিক তখনই এর বিপরীত চিত্র দেশের বাজারে। বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, দেশীয় বাজারে ভেজাল ও নকল ওষুধের বার্ষিক বিক্রয় প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উপরে। এই বিরাট অংকের ভেজাল ওষুধের বিক্রি থেকে সহজে অনুমান করা যায়, বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের উৎপাদিত ওষুধের সুনাম থাকলেও দেশীয় বাজারে চলছে চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি।
 জাতীয় ভেজাল প্রতিরোধ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এসএম মোরশেদ বলেন, বাংলাদেশে ভেজাল ওষুধ নির্ধারণ করার মতো সরকারের পক্ষ থেকে যে জনবল রয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। একেবারেই অপ্রতুল। সেজন্য ভেজাল প্রতিরোধে গত দশ বছর ধরে আমরা কাজ করছি।  সংগঠনের পক্ষ থেকে ভেজাল খাদ্যসামগ্রী ও ওষুধ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সচেতন করার জন্য জেলায় জেলায় প্রচারণা চালাচ্ছি। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে গিয়ে কথা বলছি। আসলে সব কিছুতেই তো ভেজাল। যে কোনো ওষুধ কোম্পানিতে গেলে দেখবেন যে, তারা যখন লাইসেন্সটা নেয়, তখন মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করেই লাইসেন্সটা নেয়। কিন্তু লাইসেন্স পাওয়ার পর, তারা আর মানসম্মত ওষুধ তৈরির দিকে খেয়াল রাখে না। তখন নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে ওষুধ উৎপাদন করে। ফলে এর ভুক্তভোগী হন সাধারণ মানুষ। অথচ সাধারণ জনগণ পয়সা দিয়েই এই ওষুধ কিনছেন। অথচ তাঁদের রোগ প্রতিরোধে তা কাজে আসছে না। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজির চেয়ারম্যান অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, অনেক সময় ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব ধীরে বা দীর্ঘসময় পরে পড়লে ধরাও যায় না সেটি ভেজাল ওষুধের কারণে হয়েছে কি না। ভেজাল বন্ধে সচেতন না হলে সাধারণ মানুষ হয়ত আবারো আমদানি করা ওষুধের ওপর নির্ভর করতে শুরু করবেন। ফলে শেষ পর্যন্ত ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন বন্ধের মূল দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ভেজাল ওষুধ ও নিম্নমানের ওষুধ কারবারি চক্রের প্রধান টার্গেট ঢাকা। এসব ওষুধ খেয়ে অনেক মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন। রাজধানীর মিটফোর্ড ও এর আশপাশের এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা কারখানা গড়ে তোলে।
 ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, সক্ষমতা অনুযায়ী চাহিদার ৯৫ শতাংশ ওষুধের জোগান দিচ্ছে প্রস্তুতকারক দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া আমেরিকা, কানাডা, জাপানসহ বিশ্বের ১৫৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসা কুড়ানোর পাশাপাশি ২০১৮ সালে  মেডিসিন প্রডাক্ট অব দ্য ইয়ার পদকে ভূষিত হয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে এত সক্ষমতা অর্জন সত্ত্বেও বাজারে কেন ছড়াচ্ছে নকল ওষুধ, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন খোদ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও।
প্রতিষ্ঠানটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো সমন্বয় করে অভিযান চালাচ্ছে। অধিদপ্তরও নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। তবে জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট কম থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়মিত নজরদারি ও অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকায় নকল ওষুধ তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। পরে প্রতিষ্ঠিত ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের অভিযোগের ভিত্তিতে এসব কারখানায় একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের পর ভেজাল ওষুধ তৈরির কার্যক্রম কিছুটা কমলেও নিয়মিত নজরদারি না থাকায় ফের তা শুরু হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ভেজাল ওষুধ ও নিম্নমানের ওষুধ কারবারি চক্রের প্রধান টার্গেট ঢাকা। এসব ওষুধ খেয়ে অনেক মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন। রাজধানীর মিটফোর্ড ও এর আশপাশের এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা কারখানা গড়ে তোলে। পরবর্তীকালে চাহিদা বাড়তে থাকায় কুমিল্লা ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গড়ে ওঠে কারখানা। এসব কারখানার তৈরি নকল ওষুধ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
দেশে ভেজাল বা নিম্নমানের ওষুধের ব্যাপকতা বেড়ে গেছে। উৎপাদন হচ্ছে ভেজাল ও নকল ওষুধও, যার ফলে ধীরে ধীরে অস্থির হয়ে উঠছে ওষুধ শিল্প ও চিকিৎসাব্যবস্থা। ভেজাল বা নকল ওষুধ সেবনের ফলে রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রাণহানির ঘটনাও ধীরে ধীরে বাড়ছে। এটি ওষুধ শিল্পের উন্নয়ন ও প্রসারে বিশাল অশনিসংকেত।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বর্তমানে প্রায় তিনশটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে উৎপাদন হয় পঁচিশ হাজার ধরনের ওষুধ। এর মধ্যে মাত্র চার হাজার ওষুধ পরীক্ষা করে দেখার সামর্থ্য আছে সরকারের। আর এর দুই থেকে তিন শতাংশ ওষুধ ভেজাল, নকল বা নিম্নমানের। বাকি একুশ হাজার ওষুধ কখনো পরীক্ষাই করা হয় না। কিছু লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন কোম্পানি অধিক মুনাফার জন্য ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করছে, যা মানুষের যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের চেয়ে শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। 
 এসব ভেজাল ওষুধের বিষয়ে সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, মানুষ আর কতভাবে প্রতারিত হবে। কোনটা ভেজাল আর কোনটা ভেজাল না সেটা আমরা কীভাবে বুঝব। এসব ভেজাল ওষুধ বন্ধ হবে কবে। রাজধানীর অলি গলিতে ও বড় বড় ওষুধ মার্কেটগুলোতে ভেজাল ও নকল ওষুধে সয়লাব। মানুষের রোগমুক্ত হয়ে বেঁচে থাকার অন্যতম অপরিহার্য উপাদান ওষুধ।
সুস্থ জীবনযাপন করতে ওষুধের ব্যবহার কোনো না কোনো সময় করতেই হয়। জীবন রক্ষায় সহায়ক হিসেবে কার্যকরী সেই ওষুধই এখন জীবন ধ্বংসের কারণ। এমনটি কারো কাম্য না হলেও কিছু নৈতিকতা বর্জিত ব্যবসায়ীরা মুনাফার লোভে উৎপাদন করছেন ভেজাল ও নকল ওষুধ। যা খেয়ে জীবন রক্ষা বা সুস্থ হওয়া তো দূরের কথা, উল্টো মানবদেহ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কিছু লাইসেন্সধারী ও লাইসেন্সবিহীন কোম্পানি অধিক মুনাফার জন্য ভেজাল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করছে, যা মানুষের যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের চেয়ে শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করছে। 
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা নকল ওষুধ প্রতিরোধের জন্য আপাতত দোকানদারকে ইনভয়েসের মাধ্যমে ওষুধ ক্রয়ের জন্য বলেছি। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া কাউকে ওষুধ দেওয়া যাবে না।
তিনি বলেন, কোম্পানির অনুমোদিত প্রতিনিধির কাছ থেকেই ওষুধ নিতে হবে। এর বাইরে নকল ও ভেজাল ওষুধ ঠেকানো সম্ভব না। স্যাম্পল ওষুধ কোনো দোকানদার বিক্রি করতে পারবে না। এটা আইনগত নিষিদ্ধ। এটা করা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ড্রাগস আইনে নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান আছে ১০ বছর। তবে জরিমানার অঙ্ক নির্দিষ্ট না থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয় না। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু মামলা হওয়ার পর তদন্তের ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ফেলে নকল ওষুধ উৎপাদনকারীরা। তাদের টাকার অভাব নেই। নকল ওষুধে পুরোটাই লাভ। (  ধারাবাহিক আগামী সংখ্যায় আসছে অবৈধভাবে গড়া ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানের তালিকাসহ তথ্যবহুল প্রতিবেদন। সে পর্যন্ত ক্রাইম ডায়রির সাথেই থাকুন)
ক্রাইম ডায়রি/ক্রাইম জনস্বার্থে প্রকাশিত