পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যাঃ নিঃসঙ্গ রাখার দায়ভার পরিবার এড়াতে পারেনা

সন্তান দায়ী, স্ত্রী দায়ী। সন্তানকে নিষ্ঠুর হতে বাধ্য করা ইন্ধনদাতা পুত্রবধুও কি দায়ী নয়? যেদিন হতে যৌথ পরিবার ভাঙ্গন আমরা স্বেচ্ছায় শুরু করেছি সেদিন হতে ডিভোর্স আর পারিবারিক অশান্তি প্রকট হয়েছে। আত্মহত্যার প্রবণতাও বেড়েছে।

পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যাঃ নিঃসঙ্গ রাখার দায়ভার পরিবার এড়াতে পারেনা

 জীবন বলি দেওয়ার আগে পুরো জাতীকে মেসেজ দিয়ে গেছেন। যেদিন হতে লোভী সমাজ ব্যবস্থা যৌথ পরিবারের ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে সেদিন হতে পারিবারিক নির্যাতন, ডিভোর্স এবং আত্মহত্যা বেড়েছে। ক্রমাগত সেই পরিমাণ এত দ্রুত বাড়ছে যে বিয়ের মাসের মাথায় ডিভোর্স এখন অসংখ্য

প্রকৌশলী আয়াতুস সাইফ মুনঃ

আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন নায়ক রিয়াজের শ্বশুর। জীবন বলি দেওয়ার আগে পুরো জাতীকে মেসেজ দিয়ে গেছেন। যেদিন হতে লোভী সমাজ ব্যবস্থা যৌথ পরিবারের ভাঙ্গন সৃষ্টি করেছে সেদিন হতে পারিবারিক নির্যাতন, ডিভোর্স এবং আত্মহত্যা বেড়েছে। ক্রমাগত সেই পরিমাণ এত দ্রুত বাড়ছে যে বিয়ের মাসের মাথায় ডিভোর্স এখন অসংখ্য। 

সামাজিক ব্যবস্থা এখন এতটাই নাজুক যে বিয়ের পরই জামাই কব্জা নাটকে মেতে ওঠে মেয়েরা। স্বামীকে কব্জা করে আলাদা করে থাকার প্রবনতা এবং শ্বশুর শ্বাশুরীকে আলাদা করে দেয়ার জন্য মানসিক চাপ এটা যেন স্বাভাবিক বিষয়।

সম্প্রতি নায়ক রিয়াজের শ্বশুর রাজধানীর অভিজাত ধানমন্ডি এলাকায় বসবাসকারী আবু মহসিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভে এসে দেশবাসীকে দেখিয়ে  আত্মহত্যা করেন।

ফেব্রুয়ারী ২,২০২২ইং বুধবার রাত সোয়া ৯টার দিকে নিজের হতাশার কথা জানিয়ে মহসিন আত্মহত্যা করেন। শ্বশুর আবু মহসিন খানের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন রিয়াজ। তিনি তার শ্বশুরের জন্য দোয়া চেয়েছেন।

ফেব্রুয়ারী ৩,২০২২ইং বৃহস্পতিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে যান রিয়াজ। সেখানে তার শ্বশুরের ময়নাতদন্ত হয়। মর্গ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকরা মুখোমুখি হলে রিয়াজ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আপনারা আমার বাবার (শ্বশুর) জন্য দোয়া করবেন, যেন আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন। বেহেশত নসিব করেন। এর বাইরে আমি আর কিছু বলতে পারছি না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের লাইভে দেখা যায়,বুধবার রাত ৯টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে নিজের লাইসেন্স করা পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন আবু মহসিন খান (৫৮)।

জীবন বিসর্জন দেবার আগে তিনি পুরো বিশ্বকে সামাজিক ব্যবস্থার ধ্বসের চিত্র বুঝিয়ে গেছেন।এসময় ব্যক্তিজীবনের নানা হতাশার কথা তুলে ধরেন তিনি

লাইভে এসে মহসিন খান বলেন, আমি মহসিন । ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো একসময়ে আমি ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত। তাই আমার ব্যবসা কিংবা কোনো কিছুই নেই। ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো— মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আমার যে এক্সপেরিয়েন্স, সেটি শেয়ার করলে হয়তো সবাই জানতে পারবেন, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবেন।

গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। তার একটি ছেলে আমেরিকায় থাকে, মা মারা গেল অথচ ছেলেটি আসল না। এটি আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে, কষ্ট লেগেছে। 

আজকে আমার আরেকজন খালা মারা গেছেন। তারও একটি ছেলে আমেরিকায় ছিল। অবশ্য তার তিনটি ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিনজনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তারা হয়তো দাফন-কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সেদিক দিয়ে বলব, এই খালা অনেকটা লাকি (ভাগ্যবান)। 

আমার একটা মাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। আমার বাসায় আমি সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে, এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি। 

ছেলেমেয়ে, স্ত্রী যাদের জন্য যাই কিছু আমরা করি; আমরা সব কিছু করি সন্তান ও ফ্যামিলির জন্য। আপনি যদি ১০০ টাকা ইনকাম করেন, আয় করেন, তার টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকাও আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকা আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন, তা হলে ৮০ পারসেন্ট টাকা আপনার ফ্যামিলির জন্য ব্যয় হয়।

গত করোনা শুরুর আগ থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট, যারা একা থাকে, তারাই একমাত্র বলতে পারে বা বোঝেন। যাদের জন্য আমি বেশি করছি, প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। যাকে আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে। 

এর পর পিস্তলের লাইসেন্স দেখান। বলেন, আমি যেটা দিয়ে আত্মহত্যা করছি সেটি ইলিগ্যাল (অবৈধ) কিছু না। এটির লাইসেন্স আছে। সেটি নবায়নও করা হয়েছে। আমি চলে যাব। আত্মীয়স্বজন যারা আছ, যেহেতু বাবাও আমাকে জায়গাটা দেয়নি, আমি যে কবরস্থানটা করেছি সেখানে আমাকে দাফন করো না। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধে একটি কবরস্থান হয়েছে, সেখানে তোমরা আমাকে দাফন করে দিও। প্রত্যেকটা লোক আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমার বাবা, মা, ভাইয়েরা— প্রত্যেকটা লোক, এভরিওয়ান।

লাইভে কথা বলার সময় তার সামনে টেবিল ছিল। ওই টেবিলে কাফনের কাপড় ছিল। এর ওপর একটি চিরকুট ছিল; তাতে লেখা— ‘এখানে কাফনের কাপড় রাখা আছে, যা আমি ওমরাহ হজে ব্যবহার করেছিলাম। যারা দেখছেন, তাদের সাথে এটাই শেষ দেখা।’

সবাই ভালো থাকবেন। এভাবে ১৫ মিনিট কথা বলে ১৬ মিনিটের সময় নিজের মাথায় গুলি করেন মহসিন। কালেমা পড়তে পড়তে নিজের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করেন তিনি।

ক্রাইম ডায়রি // ক্রাইম