বাজছে যুদ্ধের দামামা: আতংকিত পুরো বিশ্ব

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইনটেলিজেন্স এজেন্সি ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলের মাটিতে হামলা চালানো হতে পারে। ইরানের কাছে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে মিসাইল হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে। 

বাজছে যুদ্ধের দামামা: আতংকিত পুরো বিশ্ব
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, শিগগিরই হামলা চালাবে ইরান। এ সময় ইসরাইলে হামলা না চালাতে ইরানকে সতর্কও করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে ইরান। 

প্রকৌশলী আয়াতুস সাইফ মুন,মালয়েশিয়া প্রতিনিধি:

 দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরাইলি হামলায় ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) সাত সদস্য নিহতের জেরে ইজরায়েল-ইরান যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এদের মধ্যে দুজন বাহিনীটির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকায় যুদ্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে। যে কোন মুহুর্তে হতে হামলা কিংবা পাল্টা হামলা। গাজা যুদ্ধের উত্তেজনার মধ্যেই গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইহুদিবাদী ইসরায়েল। এতে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর বিদেশ শাখার শীর্ষ জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি-সহ ১৩ জন নিহত হন। এ হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এরইমধ্যে ইসরায়েলে প্রতিশোধমূলক হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে ইরান। ইসরায়েলে ইরানের সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক এই হামলা নিয়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। এরই মধ্যে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলের মাটিতে সরাসরি হামলা চালাতে ইরান শতাধিক ড্রোন ও কয়েক ডজন ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রস্তুত করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যেকোনও সময় ইসরায়েলের মাটিতে হামলা চালাতে পারে ইরান।

ইরানি হামলায় আশঙ্কায় ইসরায়েলে নতুন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সেখানে নতুন এক যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রও ওই এলাকায় উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অথবা ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কোনও টার্গেটে যদি ইরান হামলা চালায় তাহলে তার উল্লেখযোগ্য জবাব দিতে প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র।

ইরান ও ইসরায়েলের কার কত সামরিক শক্তি?

অত্যাধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তির দিক থেকে ইসরায়েল বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরানও সামরিক প্রযুক্তিতে অনেক দূর এগিয়েছে। সামরিক সক্ষমতায় কোন দেশ কোন অবস্থানে রয়েছে, তার পরিসংখ্যান তুলে ধরে ‘গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার’ ওয়েবসাইট। ফায়ার পাওয়ার সূচকে ১৪৫টি দেশের মধ্যে ইরানের অবস্থান ১৪তম আর ইসরায়েলের অবস্থান ১৭তম। 

এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ইরান ও ইসরায়েলের সামরিক সক্ষমতা:

নিয়মিত সেনা

ইরান: ৬ লাখ ১০ হাজার
ইসরায়েল: ১ লাখ ৭০ হাজার

রিজার্ভ সেনা
ইরান: ৩ লাখ ৫০ হাজার
ইসরায়েল: ৪ লাখ ৬৫ হাজার

আধাসামরিক বাহিনী
ইরান: ২ লাখ ২০ হাজার
ইসরায়েল: ৩৫ হাজার

মোট সামরিক উড়োজাহাজ
ইরান: ৫৫১টি
ইসরায়েল: ৬১২টি

যুদ্ধবিমান
ইরান: ১১৬টি
ইসরায়েল: ২৪১টি

হামলায় ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান
ইরান: ২৩টি
ইসরায়েল: ৩৯টি

পরিবহন উড়োজাহাজ
ইরান: ৮৬টি
ইসরায়েল: ১২টি

হেলিকপ্টার
ইরান: ১২৯টি
ইসরায়েল: ১৪৬টি

হামলায় ব্যবহৃত হেলিকপ্টার
ইরান: ১৩টি
ইসরায়েল: ৪৮টি

ট্যাংক
ইরান: ১ হাজার ৯৯৬টি
ইসরায়েল: ১ হাজার ৩৭০টি

সাঁজোয়া যান
ইরান: ৬৫ হাজার ৭৬৫টি
ইসরায়েল: ৪৩ হাজার ৪০৩টি

যুদ্ধজাহাজ (ফ্লিট)
ইরান: ১০১টি
ইসরায়েল: ৬৭টি

সাবমেরিন
ইরান: ১৯টি
ইসরায়েল: ৫টি

ইরান ও ইসরায়েলের হাতে রয়েছে শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা। ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। এর সুবাদেই বর্তমান যুদ্ধে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও গাজার হামাসের রকেট থেকে নিজেদের অনেকটাই রক্ষা করছে ইসরায়েল। এছাড়া দেশ দুটির হাতে রয়েছে বিভিন্ন পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও হামলার কাজে ব্যবহার করা যায় এমন বহু ড্রোন।

অন্যদিকে, বিশেষজ্ঞ মহলে দাবি- ইসরায়েলের কাছে পারমাণবিক বোমাও রয়েছে। তবে এ নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলে না দেশটি। অন্যদিকে, আমেরিকাসহ পশ্চিমা বিশ্বের সন্দেহ ইরানও পরমাণু বোমা তৈরিতে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। যদিও এসব বিষয় গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্যে উল্লেখ নেই। 

উল্লেখ্য যে, সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেট ভবনে হামলার জেরে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইসরাইলে হামলা চালাতে পারে ইরান। গোয়েন্দাদের বরাত দিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। অপরদিকে ইসরাইলকে সহায়তার জন্য দুটি মার্কিন রণতরী ইসরাইলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেছেন, শিগগিরই হামলা চালাবে ইরান। এ সময় ইসরাইলে হামলা না চালাতে ইরানকে সতর্কও করে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পারে ইরান। 
  
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইনটেলিজেন্স এজেন্সি ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেটের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলের মাটিতে হামলা চালানো হতে পারে। ইরানের কাছে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে মিসাইল হামলা চালানোর সক্ষমতা আছে। মার্কিন নৌবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ভূমধ্যসাগরে পূর্ব দিকে তাদের দুটি যুদ্ধজাহাজ স্থান পরিবর্তন করছে। এর একটি হলো ইউএসএস কার্নি, যেটি সম্প্রতি লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের ড্রোন ও অ্যান্টি-শিপ মিসাইলের বিরুদ্ধে বিমান প্রতিরক্ষা কার্য সম্পাদন করছিল। সেই সঙ্গে এই অঞ্চলে অতিরিক্ত সেনাও মোতায়েন করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।  

ইসরাইল-ইরান সম্ভাব্য যুদ্ধ থামাতে কূটনৈতিক তৎপরতাও বাড়িয়েছে আমেরিকা। মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরাইল, সৌদি আরব, কাতার এবং অন্যান্য সরকারের আলোচনা করে একটি প্রতিষ্ঠিত সুইস চ্যানেলের মাধ্যমে ইরানকে বার্তা পাঠাতে কাজ করছে। বাইডেন মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইকেল কুরিলাকেও ইরানের হুমকি নিয়ে জরুরি আলোচনার জন্য ইসরাইলে পাঠিয়েছেন।

ক্রাইম ডায়রি/ আন্তর্জাতিক