ছিনতাইকৃত মোবাইলের আইএমই নম্বর পরিবর্তন চক্রের সন্ধান

সফটওয়্যার ব্যবহার করে পরিবর্তন করা হতো চোরাই ও ছিনতাই করা মোবাইলের আইএমইআই নম্বর।

ছিনতাইকৃত মোবাইলের আইএমই নম্বর পরিবর্তন চক্রের সন্ধান
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত
আর অপরাধী চক্র আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা মোবাইল দিয়ে কোনো অপকর্ম করলেও এর দায়ভার পড়ে বৈধ ব্যবহারকারীর ওপর।  
জাকির হোসেন রনিঃ
রাজধানী থেকে চুরি-ছিনতাই হওয়া মোবাইল ফোন হাতবদল হয়ে যেত একটি চক্রের হাতে। চক্রটি এসব মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করত বিভিন্ন অপরাধীদের কাছে। অপরাধীরা এসব মোবাইল দিয়ে সহজেই বিভিন্ন অপরাধ কর্ম চালিয়ে যেত।
চোরাই-ছিনতাই হওয়া এসব মোবাইল উদ্ধারে বেশ বেগ পেতে হতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। শুধু তাই নয়, চোরাই-ছিনতাইকৃত মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য একটি ল্যাবও গড়ে তোলে চক্রটি। সেখানে দৈনিক ২৫-৩০টি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা হতো। 
পরিবর্তনের সময় আন্দাজে নতুন একটি আইএমইআই নম্বর বসিয়ে দেয় চক্রের সদস্যরা। এতে অনেক বৈধ ব্যবহারকারীর আইএমইআই চলে যেত চোরাই মোবাইলে; যা বৈধ ব্যবহারকারী কোনভাবেই জানতে পারতেন না। ফলে এক আইএমইআই নম্বর চালু থাকত দুটি মোবাইলে। আর অপরাধী চক্র আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা মোবাইল দিয়ে কোনো অপকর্ম করলেও এর দায়ভার পড়ে বৈধ ব্যবহারকারীর ওপর।  
সম্প্রতি মোবাইল চোর-ছিনতাই চক্রের সাতজনকে গ্রেফতারের পর এমনটি জানতে পারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত ২৩ আগস্ট এমন একটি চক্রের সন্ধান পেয়ে গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের ‘স্পেশাল অপারেশনস টিম’ মাতুয়াইল এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। 
অভিযানে চোরাই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। তারা হলো- সাইদুল ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলাম। পরদিন তাদের বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় মামলা করা হয়। 
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় একটি বাসার ৬ষ্ঠ তলায় সন্ধান মেলে একটি কম্পিউটার ল্যাবের। যেখানে বসে সিএম২ ও সিগমা নামক দুটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে পরিবর্তন করা হতো চোরাই ও ছিনতাই করা মোবাইলের আইএমইআই নম্বর।
সেখান থেকে জব্দ করা হয়- একটি মাইক্রোস্কপি, কম্পিউটার (১টি মনিটর, ১টি সিপিইউ), ২টি ল্যাপটপ, ১৯টি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল (এর মধ্যে ৫টি মোবাইল প্রকৃত মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে), ১টি মোবাইলের আনলক করার সিএম২ সফটওয়্যার ডিভাইস ও ১টি আইএমইআই পরিবর্তনের সিগমা সফটওয়্যার ডিভাইস, ৪টি ডাটা ক্যাবল, ১টি পাওয়ার মেশিন, ১টি হিটার মেশিন এবং ১টি রাউটার।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে একই চক্রের আরও পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো- সোহেল রানা, রানা শেখ, বেলাল হোসেন রাসেল, আমির হোসেন ও রবিন। 
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, ছিনতাই করা মোবাইল ফোনের বেশিরভাগ অপরাধ কাজে ব্যবহার করা হয়। দেশের বাইরেও পাচার হয়ে যায়। 
সম্প্রতি কয়েকটি মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারি, ছিনতাই করা বা চোরাই মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে সিএম২ ও সিগমা নামক সফ্টওয়্যার। দুটিই পেইড সফটওয়্যার; যা ব্যবহার আইনত অপরাধ। 
ডিবি পুলিশ সুত্রে জানা গেছে , তিনজন ভুক্তভোগী থানায় জিডি করার পর সেটি তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় দুটি ফোন শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ধারণা করা হয়, আইএমইআই পরিবর্তন করা হয়েছে। চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার ও মোবাইল উদ্ধারের পর স্পষ্ট হয় আইএমইআই পরিবর্তন করা হয়েছে।
ক্রাইম ডায়রি/ ক্রাইম