ডেল্টা লাইফের ৩৩০ কোটি টাকা কর ফাঁকিঃ কেঁচো খুড়তে সাপ

Delta Life's Rs 330 crore tax evasion: Snakes to dig earthworms

ডেল্টা লাইফের ৩৩০ কোটি টাকা কর ফাঁকিঃ কেঁচো খুড়তে সাপ

ডেল্টা লাইফের ৩৩০ কোটি টাকা কর ফাঁকির ঘটনায় তদন্তে কেঁচো খুড়তে সাপ বের হবার মত পরিস্থিতি হয়েছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভাল ভাবে তদন্ত করলে এমন আরও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির চিত্র বের হয়ে আসবে। যা ইচ্ছে তাই করে চলছিল প্রতিষ্ঠানগুলি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় অপরাধীর ঠাঁই নাই এমন নীতিতে অটল বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার আমলে যে কোন ফাঁকি ধরা পড়ে যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড দশ বছরে ৩৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা কর ফাঁকির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এই কর পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠিও  দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভুয়া অডিট রিপোর্ট তৈরি করলেও সেই অডিট রিপোর্টে পার পাওয়া যায়নি। সঠিক মানদন্ডে রিপোর্ট যাচাই করা হলে কেঁচো খুড়তে বের হয়ে আসে সাপ।

শাহাদাত হোসেন রিটনঃ

ডেল্টা লাইফের ৩৩০ কোটি টাকা কর ফাঁকির ঘটনায় তদন্তে কেঁচো খুড়তে সাপ বের হবার মত পরিস্থিতি হয়েছে। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভাল ভাবে তদন্ত করলে এমন আরও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির চিত্র বের হয়ে আসবে। যা ইচ্ছে তাই করে চলছিল প্রতিষ্ঠানগুলি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় অপরাধীর ঠাঁই নাই এমন নীতিতে অটল বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার আমলে যে কোন ফাঁকি ধরা পড়ে যাবে। এরই ধারাবাহিকতায় ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড দশ বছরে ৩৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা কর ফাঁকির ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে এই কর পরিশোধে প্রতিষ্ঠানটিকে চিঠিও  দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ভুয়া অডিট রিপোর্ট তৈরি করলেও সেই অডিট রিপোর্টে পার পাওয়া যায়নি। সঠিক মানদন্ডে রিপোর্ট যাচাই করা হলে কেঁচো খুড়তে বের হয়ে আসে সাপ।

এনবিআরের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ১০ বছরে ৩৩০ কোটি ৮০ লাখ টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে ডেল্টা লাইফ। এর মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫৫ কোটি ১৯ লাখ, ২০১৮-১৯ সালে ২৩ কোটি ৯৬ লাখ, ২০১৭-১৮ সালে ১৭ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৬-১৭ সালে ৫১ কোটি ৬৮ লাখ, ২০১৫-১৬ সালে ৪৭ কোটি ১১ লাখ, ২০১৪-১৫ সালে ৫৩ কোটি ৩৮ লাখ, ২০১৩-১৪ সালে ৪৭ কোটি ৬ লাখ, ২০১২-১৩ সালে ১০ কোটি ৪৫ লাখ, ২০১১-১২ সালে ১১ কোটি ২ লাখ, ২০১০-১১ সালে ১০ কোটি ৭৮ লাখ এবং ২০০৭-০৮ সালে ৩৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা কর ফাঁকি দিয়েছে। টাকা দ্রুত পরিশোধ না করলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। বিশেষ সুত্রে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বিমা খাতের কোম্পানিটি ব্যাপক অনিয়ম করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে গ্রাহককে পলিসির টাকা না দেওয়া, তহবিল বাড়িয়ে দেখানো এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) ইতোমধ্যে  বর্তমান প্রশাসক সুলতানুল আবেদীন মোল্লাকে তার পদ হতে অবসরে দিয়ে  রফিকুল ইসলামকে নিয়োগ দিয়েছেন। সীমাহীন অনিয়ম এবং গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে এই নতুন প্রশাসক নিয়োগ । জানা গেছে, তারা ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে টাকা আদায় হলেও তা কোম্পানির হিসাবে দেখাননি। ব্যাংক হিসাবে ব্যাপক গরমিল। কোম্পানির আর্থিক রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রেও মানদণ্ড মানা হয়নি। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক প্রেরিত দুটি  অডিট প্রতিষ্ঠানের বিশেষ নিরীক্ষা ও তদন্তে ডেল্টা লাইফের ৪৭টি অনিয়ম চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি অনিয়মকে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ মনে করছে, এই কোম্পানি গ্রাহকের স্বার্থ ক্ষুণ্নের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে নিজেদেরও ক্ষতি করেছে।

জাতীয় দৈনিকে বরাতে জানা গেছে, আইডিআরের নিয়োগ দেওয়া দুটি অডিট ফার্ম হলো এমএস হাওলাদার ইউনূস অ্যান্ড কো. এবং এমএস ফেমাস অ্যান্ড আর। এর একটি ফার্ম নিরীক্ষা এবং অন্যটি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের তদন্ত করেছে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ২২টি অডিট আপত্তির ক্ষেত্রে বিমা আইন ও বিধির লঙ্ঘন হয়েছে। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এই নিরীক্ষা করা হয়।

নিরীক্ষা রিপোর্টে ১০টি বিষয়ে অধিকতর তদন্তের কথা বলা হয়েছে। তদন্ত করতে গিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে আরও ২৫টি অনিয়ম পাওয়া গেছে। এসব অনিয়মের বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়। প্রতিষ্ঠানটিতে ২২১ কোটি টাকার ব্যাংক বিবরণী পাওয়া যায়নি। ২১৮ কোটি টাকা ব্যাংকে যথাযথভাবে জমা হয়নি। ২০২০ সালের ডিসেম্বরেই ১০০ কোটির বেশি নগদ টাকা  উত্তোলন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এক্ষেত্রে মুনাফায় বড় অংশের কমিশন দেখানো হয়েছে। ব্যাংকের যে বিবরণী দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে সুদ ও লভ্যাংশের তথ্য মেলেনি এবং বাস্তবিকও নয়।

ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, ডেলটার বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৃত ফাঁকি ১৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং এরপর সুদ বাবদ ১৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। তারা ভ্যাট কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে বলে ডেল্টার  একাধিক ডিপসোর্স সুত্রে জানা গেছে।

ক্রাইম ডায়রি// ক্রাইম