কৃষি পণ্যের মজুত গড়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগগুলো দ্রুত নিলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। যেমন আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বললেন দাম না কমালে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। যখনি আমদানির চিঠি এলো, তখনই দাম কমতে শুরু করে দিল।

কৃষি পণ্যের মজুত গড়ার নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি- অনলাইন হতে সংগৃহীত

শাহাদাত হোসেন রিটন:

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজসহ কৃষি পণ্যের মজুত গড়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এজন্য তিনি ঢাকা সহ সারাদেশে অঞ্চলভিত্তিক সংরক্ষণাগার নির্মাণের কথা বলেছেন তিনি। 

মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি কেন এত বেশি হবে। আমরা এটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য কৃষিপণ্য সংরক্ষণ করব। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ফলে মানুষ কষ্টে আছে। মূল্যস্ফীতি আর বাড়তে দেওয়া যাবে না। এটা কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে এসব বিষয় জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন-পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, আব্দুল বাকী, একেএম ফজলুল হক, আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন প্রমুখ। 

পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আমরা স্বীকার করে নিচ্ছি মূল্যস্ফীতি ও লোডশেডিংয়ে মানুষ কষ্টে আছে। কিন্তু স্বীকার করে বসে থাকলে তো হবে না। নানা কৌশল দিয়ে এটাকে মোকাবিলা করতে হবে। এজন্য যেসব পণের দাম হঠাৎ করে বেড়ে যায়, যেমন চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্যের মজুত বাড়াতে হবে। টিসিবিকে শক্তিশালী করতে হবে। 

এছাড়া ডলার সংকট সমাধানে জি টু জি (বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে করা চুক্তি) ভিত্তিতে নেওয়া ঋণের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে তাদের (ঋণদাতাদের) গাফিলতি থাকলে ভিন্ন কথা। কিন্তু আমাদের দিক থেকে যেন কোনো সমস্যা না থাকে। সেইসঙ্গে ডলার সংকট মোকাবিলায় মিতব্যয়ী ও সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন, প্রকল্পে সরকারি বিধিনিষেধ মেনে গাড়ি ক্রয় করতে হবে। 

ব্রিফিংয়ে এমএ মান্নান বলেন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা প্রকল্প প্রস্তাবের গভীরে গিয়ে নিখুঁতভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন। যদিও এখন এ কাজটা করা হচ্ছে। সেটি আরও কঠোরভাবে করা হবে। তিনি বলেন, ডলার সংকট সাময়িক। আমরা আশা করি আমাদের রিজার্ভ বাড়বে। কুরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্স বেড়ে যাবে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী অর্থবছর ৬ শতাংশের মধ্যে মূল্যস্ফীতি রাখা যাবে কিনা সেটি নিয়ে সংশয় আছে। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগগুলো দ্রুত নিলে কার্যকর ফল পাওয়া যাবে। যেমন আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রী কয়েকদিন আগে বললেন দাম না কমালে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে ২ সপ্তাহ সময় লাগল। যখনি আমদানির চিঠি এলো, তখনই দাম কমতে শুরু করে দিল। তাই যদি বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরপরই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হতো, তাহলে মানুষকে ৮০-১০০ টাকায় পেঁয়াজ খেতে হতো না। 

হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশনসহ ১৮ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা।  এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে সাত হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বৈদেশিক ঋণ থেকে তিন হাজার ৮৬১ কোটি ৭৯ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৮০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।  একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্প হলো-ফরিদপুর জেলাধীন মধুমতি নদীর বাম তীরের ভাঙন হতে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর সংযোগ রাস্তাসহ অন্যান্য এলাকা সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্প। 

এছাড়া বাগেরহাট জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, নতুন ৬টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণার উন্নয়ন এবং নেত্রকোনা জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। 

আরও আছে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প (পঞ্চম সংশোধন), ১০টি মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি বিল্ডিং স্থাপন এবং গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। 

এছাড়া বাগেরহাট কালেক্টরেটের নতুন ভবন নির্মাণ, বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১-শেওলা-রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন প্রকল্প। সাতক্ষীরা সড়ক সিটি ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ, সাভার সেনানিবাস এলাকায় মিট প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপন প্রকল্প। 

এছাড়া ডিজিএফআই’র টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন, বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ, নড়াইল জেলার জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প।

ক্রাইম ডায়রি/জাতীয়