গ্রাম্য সালিশের পর সংঘর্ষ: ২ বছরের শিশুকে পিটিয়ে হত্যা
মারধরের একপর্যায়ে মায়ের কোলে থাকা দুই বছরের শিশু ফাতেহা খাতুনের মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর আহত হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় শ্রীপুর হাসপাতালে নিয়ে যাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
সালিশ শুরুর একপর্যায়ে জমির কাগজপত্র দেখা শুরু করে। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আমাদের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন দা লাঠি এনে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুর জেলার শ্রীপুর এলাকায় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে গ্রাম্যসালিশে সংঘর্ষের ঘটনায় দুই বছর বয়সি এক শিশুকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় নিহত শিশুর মা-বাবাসহ পরিবারের চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন।বুধবার দুপুরে উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
প্রতিপক্ষের মারধরের সময় শিশুর মা-বাবা আত্মরক্ষার্থে বসতঘরের ভেতর প্রবেশ করার সময় প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়ির আঙিনায় ফেলে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। মারধরের একপর্যায়ে মায়ের কোলে থাকা দুই বছরের শিশু ফাতেহা খাতুনের মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর আহত হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় শ্রীপুর হাসপাতালে নিয়ে যাবার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
মৃত শিশু ফাতেহা খাতুন (২) উপজেলার কাওরাইদ ইউনিয়নের হয়দেবপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের মেয়ে।আহতরা হলেন- মৃত শিশুর মা কুলসুম (২২), বাবা ছাত্তার (৩৬), চাচা মোক্তার হোসেন (২৭), চাচি ইতি আক্তার (২০)। অভিযুক্তরা হলেন- একই গ্রামের ফরহাদ (৩২), আব্দুর রশিদ (৫০), হুমায়ুন (৩০), খোরশেদ (৪৫), জাকির হোসেন (২০), আকাশ (২০), মেহেদী হাসান (১৮), ইসলাম উদ্দিন (৭০), লাল মিয়া (৭৫), তুতু মিয়া (৪৫)।
নিহতের চাচা মোক্তার হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী লাল মিয়ার সঙ্গে আমাদের জমিসংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। কিছুদিন পূর্বে প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দাখিল করে। এর ধারাবাহিকতায় ইউপি চেয়ারম্যান কয়েকজন ইউপি সদস্যকে দায়িত্ব দিলে গ্রাম্যসালিশে বসে। সালিশ শুরুর একপর্যায়ে জমির কাগজপত্র দেখা শুরু করে। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে আমাদের বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজন দা লাঠি এনে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে।
তিনি বলেন, এ সময় শিশুর মা-বাবাকে মারধর শুরু করলে তারা আত্মরক্ষার্থে দৌড়ে বসতঘরে আশ্রয় নিতে যান। প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়ির আঙিনায় ফেলে তাদের পেটাতে থাকে। মায়ের কোলে থাকা ছোট্ট শিশুটি মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়। এ সময় প্রতিপক্ষের লোকজন আমার ভাই ভাবিসহ কয়েকজনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে।
কাওরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুস সামাদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে দাখিল করার বিষয়ে গ্রাম্যসালিশ বসে জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই চলছিল। এ সময় উভয়পক্ষের লোকজন উত্তেজিত হয়ে উঠলে আমরা উভয়পক্ষকে থামিয়ে দেই। এর কিছুক্ষণ পরই লাল মিয়ার নেতৃত্বে দা লাঠি নিয়ে হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাবিনা আক্তার বলেন, শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায়। মারা যাওয়ার পরপরই পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে।
শ্রীপুর থানার অফিসার ইনচার্জ এএফএম নাসিম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, খবর পেয়ে হাসপাতাল থেকে শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পুলিশের কয়েকটি টিম পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা বলে তিনি জানান।
ক্রাইম ডায়রি/ ক্রাইম/