সিলেট ট্রাজেডির খলনায়ক সাইফুর সকল অপকর্মের মূলহোতা

সিলেট ট্রাজেডির খলনায়ক সাইফুর   সকল অপকর্মের মূলহোতা

সিলেট সংবাদদাতাঃ

ক্ষমতায় আসলে  ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন প্রভাব বিস্তার করবে এটাই বাস্তবতা। নিয়ন্ত্রিত সেই দলের মধ্যে অপরাধী আসন গেড়ে বসবে, সুবিধা নিবে এটাও স্বাভাবিক।  সিলেট ট্রাজেডি এরই ধারাবাহিকতা। বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনার সফলতাকে ম্লান করার নীলনকশা বাস্তবায়নেও কাজ করছে এসব হাইব্রিড নেতারা।   হাইব্রিড নেতাদের প্রশ্রয়ে অপরাধ করলে হাইব্রিডদের ক্ষমতা মসনদে বসার পথ পরিস্কারের একটা গতি তৈরি হয়।  স্থানীয় কতিপয় আওয়ামীলীগ নাম ব্যবহার করে সুবিধা আাদায়ের খলনায়ক হাইব্রিড  নেতার প্রত্যক্ষ মদদে সন্ত্রাসীদের সংখ্যা সিলেটে দিন দিন বেড়েছে। তারা প্রায়ই নিজেরা সশস্ত্র সংঘাতে লিপ্ত হয়। এ পর্যন্ত ১২ জনেরও বেশি নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে নিজেদের মারামারিতে।

এমসি কলেজকেন্দ্রিক সন্ত্রাসীদের সংখ্যা অনেক। বর্তমানে বেশি অপকর্মে যারা লিপ্ত তাদের অন্যতম হচ্ছে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান। এমসি কলেজ ও ছাত্রাবাসে সংঘটিত সকল অপকর্মে তিনি জড়িত।ছাত্রাবাসে অবৈধ সিট দখল, সিট বাণিজ্য, খাবারের টাকা না দেওয়া, ক্রীড়া সামগ্রীর জিনিসপত্র বিক্রি করে দেওয়া, সাধারণ ছাত্রদের হয়রানি, মারধর, গালাগালি, মিছিল মিটিংয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের লাঞ্ছিত করা ছিলো সাইফুর রহমানের নিত্যনৈমিত্তিক কাজ। ছাত্রাবাসের পাশের বাজার বালুচরে দোকান থেকে মালামাল নিয়ে কখনো টাকা পরিশোধ করতেন না। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে তিনি দলবল নিয়ে রেস্টুরেন্টে ও বিভিন্ন দোকানে খাওয়া-দাওয়া করতেন।

শুধু রেস্টুরেন্টে নয়, সাইফুর টিলাগড় ও বালুচরের সেলুনগুলোতে টাকা না দিয়েই চুল ও দাঁড়ি কাটতো। টাকা চাইলে দোকান ভাংচুরের ভয় দেখাতেন। এম সি কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক আজহার উদ্দিন শিমুল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন, এম সি কলেজ ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্রীদের ইভটিজিং করা ছিলো তার নেশা। তার ভয়ে এম সি কলেজের এক ছাত্রী দেড় বছর পর্যন্ত ক্যাম্পাসে না আসার নজির রয়েছে।

স্ট্যাটাসে বলা হয়, মেয়েদের ওড়নায় টান দেয়া ছিলো তার খুব সাধারণ একটি কাজ। সাইফুরের বিরুদ্ধে প্যান্টের বেল্ট খুলে মারধরের অভিযোগ রয়েছে । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্র দেশের একটি সুনামধন্য জাতীয় দৈনিককে  জানান, ২০১৮ সালে তিনিসহ তার বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভবনের সামনে। এ সময় সাইফুর এসে তাদের সাথে থাকা মেয়ে বন্ধুটিকে উত্যক্ত করে। এর প্রতিবাদ করায় সাইফুর সবাইকে বেধড়ক প্যান্টের বেল্ট দিয়ে পেটাতে থাকে। ঘটনা শুনে মেয়েটির গরীব অভিভাবক তাড়াহুড়ো করে মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেন। এভাবেই শত মায়ের, বাবার, ভাইয়ের, বোনের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে সাইফুর।এক সংবাদকর্মী তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘২০১৪ সালের ১৬ অক্টোবর। দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ঘড়িতে তখন সময় দুপুর সাড়ে ১২টা। আমার সমাজ বিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টের ভবনের সামনের বরই তলায় বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছিল। ক্লাস ছিলো না সেদিন, তাই আমি দেরিতে ক্যাম্পাসে যাই। মূলতঃ, ডিপার্টমেন্ট অফিসে জমা দেয়া ইন্টারমিডিয়েটের মূল টান্সক্রিপ্ট তুলতেই যাওয়া। বড়ইতলায় বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দেই। পরে জোহরের আজান হয়ে যাওয়াতে সবাই চলে যায়। তখনও আমার কাজিনসহ আরও তিন চারজন মেয়ে বন্ধু কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের সামনের সিঁড়িতে বসে গল্প করছিল। তাদের সেখানে দেখতে পেয়ে আমিও সেখানে যাই। অনুমানিক দেড়টার দিকে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যখনই ডিপার্টমেন্টে ফিরছিলাম তখনই পেছন থেকে এই সাইফুরের ডাক। এই দাঁড়া। আমি ফিরতে না ফিরতেই সাইফুর, অভিসহ ৬/৭ জন ছাত্রলীগ ক্যাডার হামলে পড়ে আমার ওপর। কোন কিছু বুঝার আগেই তারা আহত করে আমাকে। এমনকি এই সাইফুর আমার গলায় পা দিয়ে পাড়া দেয়। ------আমার মাস্টার্স শেষ হয়েছে ২০১৮ তে। এ ঘটনার পেরিয়েছে ৬ বছর। সময়ের পরিবর্তনে ক্যাম্পাস আর হোস্টেলে বড় নেতা হয়ে গেছে সাইফুর। এই সাইফুররা একদিনে তৈরি হয়নি। তাদের তৈরি করা হয়েছে। শুধু আমি নই, তার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে তারই দলের কর্মীকে ছুরিকাঘাত করে মৃত ভেবে ফেলে রাখার অভিযোগ আছে। আছে ক্যাম্পাসে আগত দর্শনার্থীদের হয়রানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজীসহ নানা অভিযোগও। এমন সাইফুর তৈরির পেছনের কারিগরদেরও মুখোশ উন্মোচন করে শাস্তির আওতায় আনা প্রয়োজন।’

জানা যায়, এমসি কলেজ ছাত্রাবাসকে কেন্দ্র করে সাইফুর একটি টর্চার সেল গড়ে তুলেন। হোস্টেল সুপারের বাংলো দখল করে থাকতেন সাইফুর। ভয়ে অন্যত্র থাকতেন হোস্টেল সুপার জামাল উদ্দিন। হোস্টেলের নতুন ভবনের ২০৫ নম্বর কক্ষ ও বাংলোতে সাইফুরের নেতৃত্বে বসানো হয় ‘শিলং তীর জুয়া’র আসর। এছাড়া প্রতিদিন রাতে বসতো মাদকের আসর।

করোনা পরিস্থিতির কারণে হোস্টেল বন্ধ থাকায় নিজের দখলে থাকা হোস্টেলের রুমকে মাদক সেবন ও ইয়াবা ব্যবসার আখড়ায় পরিণত করেন সাইফুর।গণধর্ষণের ঘটনার পর শুক্রবার রাতে সাইফুরের দখলে থাকা হোস্টেলের ২০৫ নম্বর রুম থেকে আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় সাইফুরের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলাও হয়েছে।

২০১৩ সালে কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় চাঁদাবাজি শুরু করেন সাইফুর ও তার সহযোগীরা। এতে বাধা দেয়ায় নিজ দলের কর্মী ছদরুল ইসলামের বুকে ছুরিকাঘাত করেন সাইফুর। গুরুতর আহত ছদরুলকে সিলেট থেকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে। পরে নেতাদের চাপে ছদরুল বাধ্য হয় মামলা আপস করতে। এমন ঘটনা ঘটিয়ে সাইফুরের মতো অপরাধীরা শুধু সুবিধাই আদায় করে ; বিনিময়ে দলকে দেয় দূর্নামের কলংক। আওয়ামীলীগের মত পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী দলের সুনাম ক্ষন্ন করে এই অপরাধী চক্রগুলো কোন ইস্যু তৈরির ষড়যন্ত্রের নক্সা আঁকছিল কিনা সেটাই বা কে বলবে?? খতিয়ে দেখার এখনই সময়। নইলে পরে পস্তাতে হতে পারে। 

ক্রাইম ডায়রি// ক্রাইম