ভোলার তরুন কোটিপতি আটকঃ প্রতারক এ কোটিপতির টাকার ও ক্ষমতার উৎস কোথায়??

Where is the source of money and power of this young millionaire arrested in Bhola?

ভোলার তরুন কোটিপতি আটকঃ প্রতারক এ কোটিপতির টাকার ও ক্ষমতার উৎস কোথায়??

এদিকে কোটিপতি শিবির কর্মীকে (পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা) পাহাড়া দেয়া আওয়ামীলীগার কারা তা নিয়ে কানাঘুষা চলছে। কথিত আছে এসব আওয়ামীলীগাররাও  ভুঁইফোর। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা এসব ভুঁইফোরের মুখোশ উম্মোচন করে প্রকাশ্য শাস্তি চান।

ভোলা সংবাদদাতাঃ

ইউটিউব একটি চলমান বিশ্বকোষ। এহেন বিষয় নেই যা এখানে দেখতে পাওয়া যায়না । চাইসে ভাল কিংবা মন্দ। অনেকেই ইউটিউব দেখে হেদায়েতও হয়েছে। গ্লাস একটাই কেউ খায় মদ,কেউ দুধ, কেউ বিষ আবার কেউ খায় জীবন রক্ষাকারী পানি কিংবা ঔষধ। ডিজিটাল মিডিয়ার কল্যান আর কল্যান। বড়ই আজব। সম্প্রতি এর ক্ষতিকারক প্রভাবও চোখে পড়ার মতো। হ্যা, ভোলার চরফ্যাশনের কোটিপতি দিপুর আচরনে সেটাই এখন মানুষের মুখে মুখে। চরফ্যাশন উপজেলার নজরুল নগর ইউনিয়নের বাবুরহাট বাজারের মতু ফকিরের ছেলে আশরাফুল ইসলাম দীপু। বাবা এলাকার খামারি ও দিনমজুর। চেহারায় শিশুবাচ্চা ‍দিপু ইউটিউব দেখে প্রতারণার কৌশল রপ্ত করে  ২০ বছর বয়সেই কোটিপতি। সে নিজেকে কখনো মার্কিন নাগরিক, কখনো এনএসআইয়ের পরিচালক, বড় সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিত। ভোলার তরুন কোটিপতি ও প্রতারক এ কোটিপতির টাকার ও ক্ষমতার উৎস কোথায়?? 

এ ছাড়াও পরিচয় দিত গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক হিসাবেও। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে  একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি এ প্রতারক পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার খবর জানাতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রতারণা করে উপার্জিত টাকা সে বিনিয়োগ করেছে এই কোম্পাণীতে বলে জানায়।

ফেসবুক লাইভে জানায়, গুলশান ওয়েল ফেয়ার ক্লাবে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছে। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে নোমান গ্রুপের হেড অব প্রটোকল মাজহার ইসলাম চৌধুরীর নজরে আসে বিষয়টি। এটি যে প্রতারণা, তা ধরে ফেলেন তিনি। পরে প্রতারক দীপুর বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। এ ছাড়া অভিযোগ করা হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগে। পরে তাকে রাজধানীর পল্লবী থেকে রোববার বিকালে গ্রেফতার করে পুলিশ।

এ ছাড়াও পরিচয় দিত গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক হিসাবেও। রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে  একটি অনুষ্ঠানে সম্প্রতি এ প্রতারক পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান নোমান গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার খবর জানাতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রতারণা করে উপার্জিত টাকা সে বিনিয়োগ করেছে এই কোম্পাণীতে বলে জানায়।

 

ডিএমপি গোয়েন্দা সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম জানান, প্রাথমিক তদন্তে দীপুর প্রতারণার সত্যতা পাওয়া গেছে। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে তার প্রতারণার নানা কৌশল। তিনি জানান, ১৪ বছর বয়সে ভোলায় ত্রাণের টাকা আত্মসাতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় দীপুর প্রতারণা। নিজ জেলা ভোলাসহ, কিশোরগঞ্জ ও সিলেট সরকারি প্রটোকলে সফর করে সে। এমনকি সৌদি সরকারের ডাকে হজও করে। এনএসআইয়ের সহকারী পরিচালক হিসাবে চাকরি দেওয়ার নামে হাতিয়েছে মোটা অঙ্কের অর্থ।

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, করোনায় অসহায় মানুষকে সহায়তার নামে টিম গঠন করে প্রবাসীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয় লাখ লাখ টাকা। তার নামে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ আছে এমন চেক দেখিয়ে করে প্রতারণা। ফাঁদ পাততে সে চলাফেরা করত দামি ব্র্যান্ডের ভাড়া করা গাড়িতে। তার হাত থেকে রেহাই পাননি ভাড়া করা গাড়িচালকরাও। তার বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর ভাটারা থানায় মামলা করেন লেকশো অটো লিমিটেডের গাড়িচালক মীর সুজেল।

দীপুকে নিয়ে সম্প্রতি  টিভি চ্যানেলগুলো  নিউজ করার পর থেকে তার গ্রামে চলছে আলোচনা, সমালোচনা। সবার মুখে একটাই কথা- এ যেন আরেক রিজেন্টের সাহেদ করিম। এতদিন তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে পারেনি। নিজ এলাকায় মাদক ও দেহব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত সে। এক্ষেত্রে তার ডানহাত হিসাবে পরিচিত ছিল নজরুল নগর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোহাম্মদ আলী আগে শিবিরকর্মী ছিল। হঠাৎ করে ২০১৪ সাল থেকে ছাত্রলীগের খাতায় নাম লিখিয়ে হয়ে যায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারক দীপু নিজ এলাকার অর্ধশত মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা আত্বসাৎ করে। এ টাকা লেনদেন হতো মোহাম্মদ আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে। দীপু গ্রেফতারের পর থেকে তার ডানহাত মোহাম্মদ আলী এখন পলাতক। এদিকে কোটিপতি শিবির কর্মীকে (পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতা) পাহাড়া দেয়া আওয়ামীলীগার কারা তা নিয়ে কানাঘুষা চলছে। কথিত আছে এসব আওয়ামীলীগাররাও  ভুঁইফোর। স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতারা এসব ভুঁইফোরের মুখোশ উম্মোচন করে প্রকাশ্য শাস্তি চান।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ চর আইচা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, দীপুর বিরুদ্ধে গাজীপুরের শ্রীপুর মডেল থানা, টাঙ্গাইলের কালিহাতী থানাসহ চরফ্যাশন থানায় প্রতারণাসহ জাল-জালিয়াতির ১০-১৫টি মামলা রয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা কিংবা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ক্রাইম ডায়রি//ক্রাইম