সিলেট ট্রাজেডিঃ অপরাধীকে সহযোগিতাঃ ফেঁসে যেতে পারেন অনেকে

Sylhet Tragedy: Many people can get involved in criminal activities

সিলেট ট্রাজেডিঃ অপরাধীকে সহযোগিতাঃ ফেঁসে যেতে পারেন অনেকে

সিলেট সংবাদদাতাঃ 

অপরাধীকে বাঁচাতে ফেঁসে যাচ্ছেন আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা। জানা গেছে, সিলেট বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই আকবরকে পালাতে সহায়তা করেন একই ফাঁড়ির টু-আইসি হাসান। পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি প্রমান পেয়েছে যে,সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) একাধিক কর্মকর্তার গাফিলতিও এজন্য দায়ী। মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা পর্যন্ত অনেকেই দায় এড়াতে পারবেন না বলে জানা গেছে । আর দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। অক্টোবর ২৮,২০২০ইং মঙ্গলবার আইজিপি ড. বেনজির আহমেদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান এআইজি (ক্রাইম অ্যানালাইসিস) মো. আয়ুব। ক্রাইম ডায়রি বিষয়টি  নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি গণমাধ্যম সোহেল রানার মাধ্যমে।

২৮ অক্টোবর, ২০২০ইং মঙ্গলবার রায়হানের বাড়িতে গিয়ে নবাগত এসএমপি কমিশনার বলেছেন, পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর ঘটনায় তিনি লজ্জিত হয়েছেন। তিনি অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করে শাস্তির আশ্বাস প্রদান করেন। রায়হান হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবরকে ১২ অক্টোবর বরখাস্ত করার পরে থেকেই সে পলাতক। এ ঘটনায় ৬ পুলিশ সদস্যকে নিরাপত্তা হেফাজতে নিলেও আকবরকে নেয়া হয়নি। কেন তাকে নেয়া হয়নি, কে তাকে পালানোর সুযোগ দিয়েছে তা চিহ্নিত করতে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ সদর দফতর। হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (ক্রাইম অ্যানালাইসিস) মোহাম্মদ আয়ুবকে প্রধান করে গঠিত কমিটির সদস্যরা ছিলেন- সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম, এসএমপির অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. মুনাদির ইসলাম চৌধুরী। অপরাধীকে পালাতে সরাসরি সহায়তা করেছেন বন্দর বাজার ফাঁড়ির টু-আইসি এসআই হাসান। জাতীয় দৈনিক সুত্রে জানা গেছে, ১২ অক্টোবর বিকাল ৪টার দিকে কোনো এক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এসএমপির সিটি এসবির এক সদস্যের কাছে জানতে চায় আকবরকে কখন গ্রেফতার করে রিজার্ভ অফিসে আনা হবে। এটা শোনার পরই সেই সদস্য ফোন করে এসআই হাসানকে। হাসান সেই তথ্য আকবরকে সরবরাহ করে। ৩টা ৫৬ মিনিটে বন্দর ফাঁড়িতে হাসানের কাছে অস্ত্র, ওয়্যারলেস সেট ও মোবাইল সিম হস্তান্তর করে আকবর বেরিয়ে যায়। হাসান বিষয়টি সময় মতো না জানিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের জানান সন্ধ্যার দিকে। এছাড়া এসআই হাসান যে বন্দর ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পাল্টানোর সঙ্গে জড়িত ছিল তা এসএমপির তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে।

তবে পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটি সিলেটে যাওয়ার আগে তার বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা কেন নেয়া হয়নি? এমন প্রশ্নও সামনে চলে এসেছে। এ জন্য বিষয়টিকে তদন্তে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে।  এস আই আকবর নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত তা জানার পরও তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ না করে; হেফাজতে না নিয়ে; কেন ফাঁড়িতে রাখা হয়েছিল সেই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজছেন তদন্ত কমিটি।   বরখাস্তের পর পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত  আকবর বন্দরবাজারের পুলিশ ফাঁড়িতেই ছিল। কেন তার নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়া হয়নি? সিদ্ধান্ত নিতে কারা গড়িমসি করেছেন?? মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বাতেন কেন আকবরকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক রাখেননি সে বিষয়েও প্রশ্ন আছে। 

ক্রাইম ডায়রির সম্পাদক ও প্রকাশক আতিকুল্লাহ আরেফিন রাসেল এর নিকট এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, বঙ্গকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রেখে যাওয়া সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণে যখন বিনীদ্র রজনী যাপন করছেন,নিজের সুখটাও পর্যন্ত ত্যাগ করছেন; তখন এই সাফল্যকে ম্লাণ করে দিতে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত একশ্রেণির  স্বার্থান্বেষী। এসব ইস্যু তৈরি সেইসব ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা তা এখন খতিয়ে দেখার সময় এসেছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেছেন। 

এদিকে এই ঘটনায় উত্তাল হয়ে আছে সিলেটের রাজপথ। আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে আকবরকে গ্রেফতার না করলে কঠোর কর্মসূচি দেবার ঘোষণা দিয়েছেন সিলেট জেলা ও মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের নেতারা। সিলেটবাসীসহ সারা দেশের মানুষকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন। মঙ্গলবার বিবৃতিতে নেতারা বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব যাদের, তারাই আইন লঙ্ঘন করে চলছে। গণ মানুষের রক্ত ঝড়ানো আয়ের  টাকায় ট্যাক্স দিয়ে তাদের বেতন হয়।সেই টাকা দিয়ে কোনো খুনি মানসিকতার নির্দয় মানুষ প্রজাতন্ত্রের কর্মী হয়ে থাকতে পারেনা। দুর্নীতিবাজ খুনি এসআই আকবর ও অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান আন্দোলনকারীরা। তারা বলেন, কিছু পুলিশ সদস্য একের পর এক অপকর্ম করে চলছে। বিনা বিচারে হত্যা, সাধারণ মানুষকে হয়রানি, মাদক ও অস্ত্র দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসানো, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। রায়হান হত্যার মূল আসামি এসআই আকবরকে দ্রুত গ্রেফতার না করা হলে লাগাতার কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন বলে ঘোষনা দেন  ব্যবসায়ী নেতারা। তারা বলেন, কতিপয় দুষ্কৃত মানসিকতার পুলিশ সদস্য পুরো বাহিনীর অসংখ্য সৎ পুলিশ অফিসারের অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। 

ক্রাইম ডায়রি // জাতীয়//মহানগর