RAB-4 এর সাফল্যঃ গাড়ি চোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্য গ্রেফতার

দূর্ধর্ষ গাড়ি চোর গ্যাংয়ের সর্দারসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধারাবাহিক ভাবে এমন ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখাবে RAB-4 এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

RAB-4 এর সাফল্যঃ গাড়ি চোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্য গ্রেফতার
প্রেস ব্রিফিং দিচ্ছেন RAB-4 এর সিইও মোঃ মোজাম্মেল হক
RAB-4 এর সাফল্যঃ গাড়ি চোর গ্যাংয়ের ৫ সদস্য গ্রেফতার

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা হতে সংঘবদ্ধ আন্তঃ জেলা গাড়ি চোরচক্রের মূলহোতাসহ ০৫ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। এ সময় চোরাইকৃত ০৪ টি পিকআপ উদ্ধার

আরিফুল ইসলাম কাইয়ুমঃ

রাজধানীর দারুস সালাম এলাকা হতে সংঘবদ্ধ আন্তঃ জেলা গাড়ি চোরচক্রের মূলহোতাসহ ০৫ সদস্য’কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪। এ সময় চোরাইকৃত ০৪ টি পিকআপ উদ্ধার করা হয়।

সুত্রে জানা গেছে,   গাড়ি চুরির বেশ কিছু অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্তকালে কয়েকজনের সংঘবদ্ধ একটি গাড়ি চোরচক্রের সন্ধান পায় র‌্যাব-৪ । এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে, ঢাকা মহানগরীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে তারা। 

র‌্যাব জানায় তারা জানতে পারে   যাত্রাবাড়ী, ধোলাইখাল এলাকায় এবং ঢাকার আশেপাশে গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় একটি গাড়ি চোর চক্র দীর্ঘদিন যাবৎ গাড়ি চুরি করে, গাড়ির  কালার, বডি ও নাম্বার প্লেট পরিবর্তন করে কম মুল্যে চোরাইপথে বিক্রি করে আসছে।

র‌্যাব-৪ উক্ত চোরাকারবারীদের গ্রেফতারে ছায়া তদন্ত শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে ছায়াতদন্ত, স্থানীয় সোর্সের সহায়তায় দীর্ঘদিন অনুসরণ করে অবশেষে গতরাতে জানা যায় রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন বেরিবাঁধ এলাকায় সংঘবদ্ধ গাড়ি চোরচক্রের সদস্যরা গাড়ি চুরি ও চোরাইকৃত গাড়ি অবৈধ বিক্রির উদ্দেশ্যে অবস্থান করছে।

খবর পেয়ে আগষ্ট ১১, ২০২১ ইং তারিখ মধ্যরাত হতে  দুপুর ১২.৩০ পর্যন্ত র‌্যাব-৪ এর একটি চৌকস দল রাজধানীর দারুস সালাম থানাধীন বেরিবাধ এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোরাইকৃত ০৪ টি পিকআপ, ০৭ টি টায়ার রিং, ০২ টি টায়ার,০১ টি টুল্স বক্স, ০১ টি চাবির ছড়া  ও ০৭ টি মোবাইলসহ সংঘবদ্ধ আন্তঃ জেলা গাড়ি চোরচক্রের ০৫ জন সদস্য’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- নারায়ণগঞ্জেরমোঃ সোহেল (২৬), সাগর (২৩), হাসান(২৬),কামরুজ্জামান (৩৯) ও কুমিল্লার সাকিব হোসেন (২৫)।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে,  গ্রেফতারকৃত আসামীরা পরষ্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে পিকআপসহ বিভিন্ন প্রকার গাড়ি চুরির ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় যে, তারা সংঘবদ্ধ আন্তজেলা চোরাকারবারী চক্রের সাথেও জড়িত। ধৃত দুধর্ষ চক্রটি পরস্পর যোগসাজোশে গত ৩ বছর ধরে রাজধানী ঢাকার ধোলাইখাল, যাত্রাবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মিনি পিকআপ গাড়ি চুরি করে।  

জানা গেছে,  গ্রেফতারকৃত সোহেল ও সাগর আপন ভাই। তারা ঢাকার একটি হাইস্কুল ও নারায়নগঞ্জের একটি কলেজে পড়াশোনা করতো।  সোহেল পেশায় একজন ড্রাইভার। তারা উভয়েই মাদকাসক্ত। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে ও মাদকের টাকা জোগাড় করতেই গাড়ি চুরি শুরু করে তারা। বিশেষ করে সোহেলের গাড়ি চালানোর দক্ষতা থাকায় পিকআপ গাড়িগুলোর লক ভাঙা ও যেকোনো চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করার বিষয়টি তার নখদর্পনে। এছাড়া গাড়িতে থাকা ট্র্যাকিং ডিভাইস দ্রুত সনাক্ত করে অকেজো করে দিতে সিদ্ধহস্ত সাগর। তাদের বাবা ভাড়ায় চালিত গাড়ির ড্রাইভার। তারা ২০২০ সালে গাড়ি চুরি মামলায় কুমিল্লায় জেলে ছিলো।

সেখানে থাকা অবস্থায় তাদের সাথে মাদক মামলার গ্রেফতারকৃত এক আসামী সাকিবের সাথে পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং সাকিবকেও তারা গাড়ি চুরি করতে উৎসাহী করে তুলে। গাড়ি চুরির মামলায় জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তাদের সাথে মাদকাসক্ত যুবক হাসান ও কামরুজ্জামান এর পরিচয় হলে তাদেরকে গাড়ি চুরির কৌশল সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ দেয়।

পরবর্তীতে মূলতঃ সোহেলের নেতৃত্বে তারা পাঁচজন মিলে গাড়ি চুরি করা শুরু করে। চক্রটির মূলহোতা সোহেল একাধিক ছদ্মনাম ব্যবহার করতো যেমনঃ সম্রাট, বাদশা, বুলেট, বস ইত্যাদি। 

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা চুরির/ছিনতাইয়ের কৌশল সম্পর্কে জানিয়েছে, তারা ড্রাইভার বা মালিকের অনুপস্থিতিতে সুবিধামত সময়ে বিশেষ কৌশল পার্কিং এ থাকা গাড়িগুলোর লক ভেঙ্গে ও বিশেষ ধরণের মাস্টার চাবি দিয়ে স্টার্ট দিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যেত। আবার কখনও  চালকের সঙ্গে মিশে কৌশলে তাদের পিকআপ ভ্যান চুরি করতে নিয়মিত উদ্বুদ্ধ করত।

এজন্য তারা চালকদের লোভনীয় বিভিন্ন অফারও দিয়ে আসছিল। মালিকের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকার একটি অংশ ড্রাইভার’কে দিত।

কোনভাবেই সম্ভব না হলে খালি চলন্ত পিকআপ ভাড়া করার কথা বলে থামিয়ে বিভিন্ন কৌশলে চালককে চেতনানাশক প্রয়োগ করে অজ্ঞান করে নির্জন রাস্তায় ফেলে রেখে পিকআপ নিয়ে পালিয়ে যেত।  সোহেল মূল হোতা। তার সাথে থাকা অন্য চারজন পিকআপের তথ্য সংগ্রহ করে তাকে জানাত।

 দক্ষ গাড়ি চালক হওয়ায় ড্রাইভারের অনুপস্থিতিতে স্পট হতে দ্রুততম সময়ে পিকআপের লক ভেঙ্গে গাড়ি নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে পালিয়ে যেতে পারত তারা। এরপর চোরাইকৃত গাড়ি তারা তাদের পূর্ব নির্ধারিত গোপন আস্তানায় রেখে দিত।

যেভাবে তারা টাকা আদায় করেঃ--

নির্দিষ্ট সদস্য গাড়িতে থাকা কাগজ থেকে মালিকের মোবাইল নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করে দড় কষাকষি করে টাকা আদায় করত। টাকা আদায় হলে এই চক্রের গাড়ি চালক বসের নির্দেশে গাড়ি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে মালিক’কে খবর দিত।

আবার  কোন কোন ক্ষেত্রে চোরাইকৃত গাড়ির রং পরিবর্তন করে ভূয়া নাম্বার প্লেট লাগিয়ে কমদামে বিক্রি করে দিত। আবার কখনও  টাকা আদায় না হলে অথবা চোরাইপথে বিক্রি করতে না পারলে গাড়ির যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রি করার ব্যবস্থা করে।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পিকআপ চুরির পর ঐ সংঘবদ্ধ চোর চক্রই ভুক্তভোগী কে মোবাইলে কল করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ পর্যন্ত টাকা দাবি করে। মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে টাকা নিয়ে চক্রটি বেশ কিছু গাড়ি ফিরিয়েও দিয়েছে। সেক্ষেত্রে  চুরি করা গাড়িটি কোন এক নির্জন জায়গায় ফেলে রেখে ভুক্তভোগী কে জানিয়ে দেয়া হয় গাড়ির অবস্থান।

চক্রটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি  দিয়ে বেনামী রেজিষ্ট্রেশনকৃত মোবাইল সীম ব্যবহারসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন  করত। চক্রটির বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ও গাজীপুরের বিভিন্ন থানায় বেশ কিছু মামলা রয়েছে।

এই পর্যন্ত তারা শতাধিক পিকআপ চুরি করে এ পর্যন্ত প্রায় ০১ কোটির অধিক টাকা আদায় করেছে বলে স্বীকার করে। র‌্যাব-৪ সুত্রে জানা গেছে, উপরোক্ত বিষয়ে আইনানুগ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। অদূর ভবিষ্যতে এরূপ সংঘবদ্ধ চোরাকারবারী দলের বিরুদ্ধে র‌্যাব-৪  অভিযান অব্যাহত রাখবে বলে জানা গেছে। 

ক্রাইম ডায়রি// ক্রাইম