সাইবার পুলিশের কড়া নজরদারী, ভারতে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে বাংলাদেশি অপরাধী সনাক্ত

Strict surveillance by cyber police, Bangladeshi criminals identified after watching viral videos in India

সাইবার পুলিশের কড়া নজরদারী, ভারতে ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে  বাংলাদেশি অপরাধী সনাক্ত

পুলিশের সাইবার প্যাট্রোলিং টিম সর্বদাই ঘুরে বেড়ায় সাইবার জগতে। যারা মনে করেন, চুপিসারে ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্টাপাল্টা কিছু করে পার পেয়ে যাবেন তারা সাবধান হোন।কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে অমানসিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। সাইবার প্যাট্রোলিংয়ের অংশ হিসেবে ভিডিওটি পুলিশের নজরে আসলে ভিডিওটিতে যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে হাতিরঝিলের নয়াটোলার এক যুবকের ফেসবুক আইডির ছবির মিল খুঁজে পায় পুলিশ। তথ্যের সূত্র ধরে ওই যুবকের সঠিক নাম ও ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ।

ক্রাইম ডায়রি ডেস্ক রিপোর্টঃ

পুলিশের সাইবার প্যাট্রোলিং টিম সর্বদাই ঘুরে বেড়ায় সাইবার জগতে। যারা মনে করেন, চুপিসারে ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা কোন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্টাপাল্টা কিছু করে পার পেয়ে যাবেন তারা সাবধান হোন। সম্প্রতি, দুই বছর ধরে নিখোঁজ এক তরুণীর ওপর অমানসিক যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।  ভিডিও সাইবার পুলিশের নজরে আসে নিয়মিত মনিটরিং করতে যেয়ে। নড়ে বসে বাংলাদেশ পুলিশের সাইবার পুলিশের চৌকস টিম এবং পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। এই ভিডিও সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিফাজুল ইসলাম হৃদয় নামের এক নির্যাতনকারীকে শনাক্ত করেছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ।
 
অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে অপরাধীর তথ্য। কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে অমানসিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। সাইবার প্যাট্রোলিংয়ের অংশ হিসেবে ভিডিওটি পুলিশের নজরে আসলে ভিডিওটিতে যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে হাতিরঝিলের নয়াটোলার এক যুবকের ফেসবুক আইডির ছবির মিল খুঁজে পায় পুলিশ। তথ্যের সূত্র ধরে ওই যুবকের সঠিক নাম ও ঠিকানা শনাক্ত করে পুলিশ।  পরে ওই যুবকের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে  শনাক্ত ব্যক্তিটিই নির্যাতনকারীদের একজন বলে সত্যতা খুঁজে পায় পুলিশ।
 
জানা গেছে, অপরাধীর বাসা রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় । সে এলাকায় টিকটক হৃদয় বাবু নামে পরিচিত। প্রায় দুই সপ্তাহ আগে ভারতের কেরালায় সে এবং তার বন্ধুরা মিলে ওই তরুণীকে নির্যাতন করেছে। সে (হৃদয়) এখন ভারতের পুনেতে অবস্থান করছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে পুলিশের ধারণা, ওই তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভারতে পাচার করা হয়েছে।  সেখানে তাকে আটকে রেখে যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। পাচার এবং নির্যাতনের ঘটনায় হৃদয় এবং তার বন্ধুরা জড়িত।  হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র এবং রেজিস্ট্রেশন কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। হৃদয়ের বন্ধুদের শনাক্তের পাশাপাশি তারা ভারতীয় নাকি বাংলাদেশি সেটি তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা বৃহস্পতিবার হাতিরঝিল থানায় মামলা করেছেন।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বিবস্ত্র করে ৩/৪ জন যুবক এবং এক নারী নির্মম নির্যাতন করছে ওই তরুণীকে। পাচারকারী চক্রের সদস্যরা ওই তরুণীর ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছে যা আধারকার্ড নামে পরিচিত। এই চক্রের সদস্যরা অন্য আরও কোনো নারীকে পাচার করেছে কি না, এ বিষয়েও খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি একটি সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্র ওই তরুণীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিদেশে পাচার করেছে। এই ঘটনা তদন্তে ভারতীয় পুলিশ এবং ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হবে। পাশাপাশি ভুক্তভোগী তরুণীকে উদ্ধার এবং জড়িতদের গ্রেফতারে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।


ভাইরাল হওয়া অত্যাচারের শিকার কে এই তরুনী??

ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়,  ২৩ বছর বয়সী ঐ তরুনীর পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায়  তৃতীয় শ্রেণির পর আর লেখাপড়া করা এই তরুনীর বাড়ি ঢাকা বিভাগের একটি জেলায়। প্রেমের সম্পর্কের জেরে ২০১৪ সালে তার বিয়ে হয়। তার স্বামী কুয়েত প্রবাসী। শ্বশুর বাড়িতে অত্যাচারীত হবার কারনে  বিয়ের পর বাবার বাড়িতেই থাকতেন তিনি। আর্থিক অনটনের কথা চিন্তা করে তিনি সৌদি আরব যাওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি এক দালালকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারিত হন। এ ঘটনার পর ওই তরুণী কাউকে কিছু না জানিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান। তারপর পরিবার আর তার খোঁজ পায়নি। তার চার বছরের একটি শিশু সন্তান আছে।

পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, হৃদয়ের অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হতে কৌশলে তার মামার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে যোগাযোগ করা হয়। তখন সে জানায়, তিন মাস আগে সে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ঘটেছে ১৫-১৬ দিন আগে। ভুক্তভোগী তরুণী বাংলাদেশি। ওই তরুণীর বাসা হাতিরঝিল থানা এলাকায়। ওই তরুণীর বিস্তারিত পরিচয় জানতে চাইলে সে হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র পাঠায় যা আধার কার্ড নামে পরিচিত। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই ভুক্তভোগী তরুণীর পরিবারের সন্ধান মিলেছে।

কে এই জঘন্যতম অপরাধী হৃদয় বাবু? যাকে বাংলাদেশী পরিচয় দিতে ঘৃনাবোধ করছেন পুরো জাতি। 

 

মে ২৮, ২০২১ইং বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশ পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. শহিদুল্লাহ। সাংবাদিকদের তিনি জানান, এই কুখ্যাত অপরাধী সম্পর্কে।  দুই বছর ধরে নিখোঁজ এক তরুণীর ওপর অমানসিক যৌন নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এই ভিডিও সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিফাজুল ইসলাম হৃদয় নামের এক নির্যাতনকারীকে শনাক্ত করেছে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। 

রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকায় তার বাসা। সে এলাকায় টিকটক হৃদয় বাবু নামে পরিচিত।  তিনি বলেন, এরপর ছেলেটির মা ও মামাকে ভিডিওটি দেখানো হয়। প্রথমে অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে মা স্বীকার করেন ভিডিওতে তার ছেলে রিফাতুল ইসলাম হৃদয় রয়েছে। স্থানীয়রাও হৃদয়কে শনাক্ত করে। স্থানীয়ভাবে তিনি টিকটক হৃদয় নামে পরিচিত। তার বয়স ২৬ বছর। উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের কারণে চার মাস আগে তাকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তারপর থেকে বাসার কারো সংগে তার যোগাযোগ ছিলো না বলে পুলিশকে জানান হৃদয়ের মা ও মামা।

হৃদয়ের বাসা তল্লাশি করে তার জাতীয় পরিচয়পত্র, জেএসসি পরীক্ষার এডমিট কার্ড, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও রমনা থানায় তার নামে দায়েরকৃত একটি ডাকাতি প্রস্তুতি মামলার এজাহার ও এফআইআর কপি জব্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। কয়েকদিন আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী এক তরুণীকে বিবস্ত্র করে অমানসিক শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করা হচ্ছে। সাইবার প্যাট্রোলিংয়ের অংশ হিসেবে ভিডিওটি আমাদের নজরে আসে। ভিডিওটিতে যৌন নির্যাতনকারী একজনের চেহারার সঙ্গে হাতিরঝিলের নয়াটোলার এক যুবকের ফেসবুক আইডির ছবির মিল পাওয়া যায়। এই তথ্যের সূত্র ধরে ওই যুবকের সঠিক নাম ও ঠিকানা শনাক্ত করা হয়। পরে ওই যুবকের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে শনাক্ত ব্যক্তিটিই নির্যাতনকারীদের একজন।

তিনি বলেন, কৌশলে হৃদয়ের মামার হোয়াটসঅ্যাপ থেকে তার ভারতীয় নম্বরে যোগাযোগ করে পুলিশ। সে জানায়, তিন মাস আগে ভারতে গেছে। যৌন নির্যাতনের যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, সেই ঘটনা ১৫ থেকে ১৬ দিন আগের। ভিডিওর ভিকটিম বাংলাদেশি তরুণী এবং ঢাকার বাসিন্দা। বয়স ২০-২২ বছর।

ওই তরুণীর আরও পরিচয় জানতে চাওয়া হলে হৃদয় হোয়াটসঅ্যাপে ভিক্টিমের একটি ভারতীয় পরিচয়পত্র আধার কার্ড পাঠায় বলে জানান তেজগাঁও বিভাগের ডিসি মো. শহিদুল্লাহ। তিনি বলেন, হৃদয় জানিয়েছে যৌন নির্যাতনের ঘটনায় তার কয়েকজন বন্ধুও জড়িত ছিল। ভারতের কেরালায় ওই ঘটনা ঘটে। ওই তরুণীর সঙ্গে আগে থেকেই তার পরিচয় ছিল।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার আরও বলেন, হৃদয়ের দেওয়া তথ্যমতে তরুণীর পরিবারের সন্ধান পেয়েছি। পরিবারের সঙ্গে মেয়েটির গত দুই বছর ধরে কোনো যোগাযোগ ছিল না। তিনি বলেন, হৃদয় বর্তমানে ভারতের পুনেতে অবস্থান করছে জানালেও তার প্রকৃত অবস্থান শনাক্তের পাশাপাশি সে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছে কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে। হৃদয়ের সহযোগী যারা ছিল তাদের পরিচয় শনাক্তের পাশাপাশি তারা বাংলাদেশি না ভারতীয় নাগরিক তা যাচাই চলছে। যেহেতু ঘটনাটি ভারতে ঘটেছে, সেক্ষেত্রে তাদের ফিরিয়ে আনাটা সময়সাপেক্ষ। 

 

পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, অত্যাচারিত মেয়েটিরমা বাবাকে ঘটনা জানানো হয়েছে। তারা অভিযোগ দিলে  পুলিশ দ্রুত মেয়েটিকে ফেরত এনে চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।  মেয়েটিকে উদ্ধার ও যারা তাকে যৌন নির্যাতন করেছে তাদেরকে ভারতীয় পুলিশ ও ইন্টারপোলের সহযোগিতায় গ্রেফতার করা হবে বলেও জানা গেছে।

ক্রাইম ডায়রি//অপরাধ জগত