ঢাকার ধামরাইয়ে স্ত্রীকে তালাক না দেয়ায় ভরা মজলিশে যুবককে পেটানোর অভিযোগ
In Dhamrai, Dhaka, a young man was allegedly beaten in a crowd for not divorcing his wife
স্ত্রীকে তালাক না দেয়ার জন্য স্বামীকে বেঁধে পেটানো একদিকে যেমন আইন বিরুদ্ধ অন্যদিকে অমানবিক। ডিভোর্স এর যুগে সংসার করতে চায় এমন যুবকদের উৎসাহ দেয়ার বদলে নিরুৎসাহিত করার ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার ধামরাইয়ে।
ধামরাই সংবাদদাতাঃ
ভুক্তভোগী পরিবার, প্রত্যক্ষদর্শী ও জাতীয় দৈনিক সুত্রে জানা গেছে, দুই বছর আগে গাঙ্গুটিয়ার বড় নালাই গ্রামের বাসিন্দা মো. আবুল হোসেনের ছেলে মো. বাবু মিয়া (২৫) সানোড়া ইউনিয়নের শুলধন গ্রামের মো. সোনার উদ্দিনের মেয়ে পারভীন আক্তারকে (৩৫) বিয়ে করেন। তাদের আব্দুল্লাহ নামে দেড় বছরের একটি পুত্রসন্তানও রয়েছে। সম্প্রতি তাদের দাম্পত্য জীবনে কলহ হলে এ নিয়ে ওই গৃহবধূ আদালতে বাবু মিয়ার নামে যৌতুক এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় সানোড়া ইউপি মেম্বার মো. মহিদুর রহমান ও গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মোল্লা একের-অপরের সঙ্গে যোগসাজশ করে রোববার বিকাল ৫টায় সানোড়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এক প্রহসনের সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন। এতে বাবু মিয়াকে উপস্থিত হতে বাধ্য করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন মহিদুর মেম্বার। তবে এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. খালেদ মাসুদ খান লাল্টু উপস্থিত ছিলেন না।
ওই সালিশি বৈঠকে বাবু মিয়াকে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। বাবু মিয়া সালিশি বৈঠকের এ রায় মানতে রাজি না হওয়ায় সানোড়া ইউপি মেম্বার মো. মহিদুর রহমান ও গাঙ্গুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মোল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে ভরা মজলিশে তাকে গলাধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর তার হাত-পা বেঁধে তাকে ওই জনপ্রতিনিধি বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে বাবু মিয়ার লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
বাবু মিয়া বলেন, আমি বিয়ের পর আমার স্ত্রীর ঘরে দেড় বছরের একটি ফুটফুটে পুত্রসন্তান হয়েছে। তার নাম আব্দুল্লাহ। আমার চেয়ে আমার স্ত্রীর বয়স বেশি হওয়ায় সে আমার ঘর করবে না বলে তার পিতার বাড়িতে এসে অবস্থান করে। আমি নিতে আসলে সে আমার সঙ্গে যেতে রাজি হয়নি। উল্টো আদালতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। তিনি বলেন, আমি আমার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘরসংসার করতে চাই। এরপরও গাঙ্গুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মোল্লা ও সানোড়া ইউপি মেম্বার মহিদুর জোর করে আমাকে তালাক দিতে বলে এবং ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করে। আমি কোনোটাতেই রাজি না হওয়ায় আমাকে এরা সালিশের মধ্যেই মারধর করে। আমি এর বিচার চাই।
ইউপি মেম্বার মহিদুর সালিশি বৈঠকের কথা স্বীকার করে জানান, কোনদিনই এদের ঘরসংসার হবে না। তাই বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য পরিষদে বসেছিলাম। বাবু মিয়া সালিশি বৈঠকের রায় না মানায় পরিবেশ একটু উত্তপ্ত হয়েছিল। গাঙ্গুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাদের মোল্লা জানান, বাবু মিয়া আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা। তাই মহিদুর মেম্বারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য বসেছিলাম। সালিশের রায় না মেনে বাবু মিয়া আমাদের সবাইকে বেইজ্জতি করেছে। ওর আরও কঠিন বিচার হওয়া উচিত ছিল।
সনোড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. খালেদ মাসুদ খান লাল্টু বলেন, আমার পরিষদে সালিশ হওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। এ ব্যাপারে কেউ আমাকে কোনো কিছুই জানায়নি। এ ব্যাপারে মহিদুর মেম্বার সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। এদিকে এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে না জানিয়ে অন্য ইউপির চেয়ারম্যান ও স্থানীয় মেম্বর এভাবে বিচার করাকে অনৈতিক ও আইনবিরোধী বলে মন্তব্য করে তারা দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দাবী করেন।
ক্রাইম ডায়রি// জেলা ক্রাইম