চেইন শপ মিঃ বেকারের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগঃ মামলা দায়ের

Chain shop Mr. Bekar is accused of VAT evasion of Tk 80 cror: case filed against them

চেইন শপ মিঃ বেকারের বিরুদ্ধে ৮০ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগঃ মামলা দায়ের

 

ক্রাইম ডায়রি ডেস্কঃ

দেশের চেইন সুপার শপগুলোর বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ নতুন কিছু নয়।। বরং ম্যানেজ গল্পটা এ ক্ষেত্রে খুব বেশিই শোনা যাচ্ছে।  অসাধুতা অবলম্বন করে রাজস্ব ক্ষতির মুখে ফেলানো ম্যানেজ হয়ে যাওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যেমন কাজ করছে দুদক ঠিক তেমনি ধারাবাহিক অভিযানের অংশ হিসেবে চেইন শপ
মি. বেকার এর বিরুদ্ধে ৮০.১৬ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির হিসাব উদঘাটন করেছে ভ্যাট গোয়েন্দারা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই অভিযানে এরই মধ্যে ২৬৫ কোটি টাকার বিক্রয় তথ্য গোপন করে ৩৪.৬ কোটি টাকার মুসক ফাঁকি দিয়েছে বেকার কর্তৃপক্ষ ।   নভেম্বর ৮, ২০২০ইং  রবিবার ভ্যাট গোয়েন্দারা এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। ভ্যাট ফাঁকির উদ্দেশ্যে প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন করায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়। ভ্যাট ফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২০ অক্টোবর ভ্যাট গোয়েন্দার একটি দল ‘মি. বেকার কেক এন্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড’ এর ১৬০/৪৮৫, মোকদাম আলী সরকার রোড, ধোউড়, তুরাগে অবস্থিত কারখানা কাম প্রধান কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটির ভ্যাট নিবন্ধন নং: ০০০৯৬৪৬৮২-০১০২।প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা উত্তর ভ্যাট কমিশনারেটে কেন্দ্রীয়ভাবে নিবন্ধিত। রাজধানীতে প্রতিষ্ঠানটির ২৯টি চেইন  শপ আছে। যার মাধ্যমে কারখানায় উৎপাদিত পণ্য বিক্রয় হয়ে থাকে। অভিযানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি অনিয়ম করে হিসাব সংরক্ষণ করে এবং  নিয়ম ব্যতীত ব্যবসা পরিচালনা করছে। পরে অনুসন্ধানের স্বার্থে টঙ্গী এলাকায় তাদের নামে খোলা দুটো ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়। এতে তাদের ফিনান্সিয়াল প্রতিবেদন পাওয়া যায় এবং এগুলো পর্যালাচনায় তাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম সম্পর্কে একটি চিত্র উঠে আসে। এসময় এই অভিযানের নেতৃত্ব দেন ভ্যাট গোয়েন্দার উপ-পরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার এবং ফেরদৌসী মাহবুব।

অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব আসিফ জামান জানান, গত ১৮ অক্টোবর তার নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৪ নম্বর রোডে অবস্থিত ‘মি বেকার’ এর বিক্রয় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ভ্যাট চালান না দেয়ার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেন। তিনি ঐ স্ট্যাটাসে এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের কাছে প্রতিকার চেয়ে উল্লেখ করেন, ভোক্তারা ভ্যাট দিলেও তা সরকার পাচ্ছে না।

এই অভিযোগ ও আরও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম অভিযোগটির তদন্ত করার জন্য ভ্যাট গোয়েন্দাকে নির্দেশ দেন।  ভ্যাট গোয়েন্দা দলের আকস্মিক পরিদর্শনকালে প্রতিষ্ঠানটিতে ভ্যাট আইনের বাধ্যবাধকতা অনুসারে ক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.১) ও বিক্রয় হিসাব পুস্তক (মূসক-৬.২) পাওয়া যায়নি।

ভ্যাট আইন অনুযায়ী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এই দুটো হিসাব সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরিদর্শনকালে ভ্যাট সংক্রান্ত অন্যান্য দলিলাদি দেখাতে বলা হলে, উপস্থিত মালিকপক্ষ তা দেখাতে পারেননি এবং এগুলো সংরক্ষণ না করার বিষয়ে তারা কোন সদুত্তরও দিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে মালিকপক্ষ নিজস্ব বাণিজ্যিক দলিলাদিও রাখেন না। এতে ভ্যাট গোয়েন্দা দলের কাছে প্রতীয়মান হয়েছে মনগড়া ও কাল্পনিক হিসাবের ভিত্তিতে ‘মি. বেকার’ স্থানীয় ভ্যাট সার্কেলে রিটার্ন দাখিল করে আসছে এবং এ ক্ষেত্রে তারা ম্যানেজ নীতির অনুসরন করছে বলে অনেকে মনে করছেন।  অভিযানের আগের দিন যে সব পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে বের করেছে তার মূসক-৬.৫ চালান দেখাতে বলা হলেও তারা দেখাতে পারেননি ভ্যাট গোয়েন্দাদের। 

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় নিবন্ধিত হওয়ায় মূসক-৬.৫ এর মাধ্যমে পণ্য ফ্যাক্টরি থেকে আউটলেটে নেয়ার বিধান থাকলেও তা পরিপালন করা হয় না। একইসাথে, তারা ভোক্তাদের নিকট থেকে সংগ্রহ করা ভ্যাট সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা দেয়নি। এ সময় প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে অবস্থিত অন্য একটি ভবনের বিভিন্ন তলায় ও ছাদে অবস্থিত কর্মচারীদের থাকার কক্ষ তল্লাশি করে তাদের পুরোনো কিছু অসংগঠিত তথ্যাদি পাওয়া যায়। গোয়েন্দা দল সেখান থেকে এসব কাগজপত্র জব্দ করে।

পরবর্তীতে জব্দকৃত এবং অনুসন্ধানের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য ও দলিলাদির ভিত্তিতে জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে শুধুমাত্র বিক্রয়ের উপর ৩৪,৬০,৫৬,৩৩৯ টাকার ভ্যাট ফাঁকি উৎঘাটন করা হয়।এই ভ্যাটের উপর মাসভিত্তিক ২% হারে  ২৫,৩৭,৮৭,০৯১ টাকা সুদ টাকা প্রযোজ্য। এছাড়া সেপ্টেম্বর/২০১৯ হতে সেপ্টেম্বর/২০২০ পর্যন্ত সময়ে জব্দকৃত ক্রয়ের চালান পরীক্ষা করে কাঁচামাল ক্রয়ের উপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১৭,৩৩,৯৬৮ টাকা পাওয়া যায়।

এর উপর মাসভিত্তিক ২% হারে সুদ ৩৪,৬৭৯ টাকা প্রযোজ্য।  জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন শোরুম এর স্থান ও স্থাপনা ভাড়ার উপর অপরিশোধিত ভ্যাট ১,৫৬,৩৯,০৪০টাকা যার উপর মাস ভিত্তিক ২% হারে সুদ প্রযোজ্য  ৯৮,৪৮,৮১৪ টাকা। জুলাই/২০১৪ হতে জুন/২০১৯ পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন সেবা ক্রয়ের উপর অপরিশোধিত উৎসে ভ্যাট ১০,২০,৭৫,১৮৩  টাকা যার উপর মাসভিত্তিক ২% হারে সুদ  ৭,২৪,৫৫,১৪১ টাকা প্রযোজ্য।‘মি.বেকার কেক এন্ড পেস্ট্রি শপ লিমিটেড’ প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় এবং উৎসে কর্তন বাবদ সর্বমোট অপরিশোধিত ভ্যাট ৪৬,৫৫,০৪,৫৩১ টাকা উদঘাটন করা হয়।

অপরিশোধিত মূসক এর উপর সুদ বাবদ মোট ৩৩,৬১,২৫,৭২৫ টাকা প্রযোজ্য হবে। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানটি সর্বমোট ৮০,১৬,৩০,২৫৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকির সঙ্গে জড়িত। প্রকৃত বিক্রয় তথ্য গোপন এবং উৎসে ভ্যাট না দেয়ায় ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আজ ভ্যাট গোয়েন্দা মামলা দায়ের করেছে। এছাড়া , ‘মি বেকার’ এর আরও কয়েকটি  সুইটমিটের বিক্রয় কেন্দ্র  রয়েছে। । এসব বিক্রয়কেন্দ্রের তথ্যাদিও অনুসন্ধানে রয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দারা ক্রাইম ডায়রিকে জানান, ধারাবাহিকভাবে সকল প্রকার সুপারশপ ও চেইনশপ গুলোতে এমন অভিযান পরিচালনা করা হবে।।  

ক্রাইম ডায়রি // ক্রাইম